প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

৮ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৭ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

কাজ ফেলে চলে গেছেন ভারতীয়রা, অনিশ্চয়তায় ১২ হাইটেক পার্ক

editor
প্রকাশিত নভেম্বর ৭, ২০২৪, ০২:৫৫ অপরাহ্ণ
কাজ ফেলে চলে গেছেন ভারতীয়রা, অনিশ্চয়তায় ১২ হাইটেক পার্ক

Manual4 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

 

ভারতীয় ঋণে বাস্তবায়িত হচ্ছে ‘জেলা পর্যায়ে আইটি/হাইটেক পার্ক স্থাপন (১২ জেলা)’ শীর্ষক প্রকল্প। প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারী ভারতীয়। ৫ আগস্টের পর কাজ ফেলে দেশে ফিরে যান তারা। মেয়াদ শেষ হলেও কাজের অগ্রগতি মাত্র ৩৬ শতাংশ। নতুন করে ১২৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব না করে দিয়েছে কমিশন। তবে অর্থনৈতিক নিষ্পত্তির জন্য মেয়াদ জুন ২০২৫ সাল পর্যন্ত বাড়তে পারে।

Manual3 Ad Code

 

তিন মাস বন্ধ কাজ

 

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রকল্পের কাজ ফেলে চলে যান ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এতে প্রায় তিন মাস বন্ধ প্রকল্পের কাজ। চলতি বছরের জুন নাগাদ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও অগ্রগতি মাত্র ৩৬ শতাংশ। ফলে কবে নাগাদ প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখবে তা নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। এছাড়া নতুন করে সংশোধনের প্রস্তাবেও অনীহা দেখা গেছে কমিশনের। বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।

প্রকল্পের পরিচালক (যুগ্ম-সচিব) এ কে এ এম ফজলুল হক বলেন, ‘পট পরিবর্তনের কারণে প্রকল্পের কাজ তিন মাস বন্ধ। নিরাপত্তার কারণে ভারতীয় ঠিকাদারেরা প্রকল্প এলাকা থেকে চলে গেছেন। ৫ নভেম্বর আসার কথা থাকলেও আসেননি। ক্লিয়ারেন্স পেলে তারা আসবেন। প্রকল্পের অনেক প্যাকেজের কাজ শুরু হয়নি। ভারতীয়রা সীমিত আকারে আছেন।’

Manual7 Ad Code

 

 

১২৭ শতাংশ ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটার মূল কারণ সিডি ভ্যাটের টাকা বাড়ছে। এর পরিমাণ এক হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা। সরকারি টাকা এক কোট থেকে অন্য কোটে যাবে।’

 

ভারত থেকে আনা যাচ্ছে না নির্মাণসামগ্রী

 

Manual6 Ad Code

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নানা কারণে ভারত থেকে নির্মাণসামগ্রী আনা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে কাজ বন্ধ। মূল প্রকল্পটির মোট ব্যয় ছিল এক হাজার ৭৯৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা। প্রকল্পে সরকারি অর্থায়ন ২৫২ কোটি ৪০ লাখ টাকা ও প্রকল্প ঋণ এক হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা। জুলাই ২০১৭ থেকে জুন ২০২০ মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পটি অনুমোদন হয়। পরবর্তীসময়ে গত ১৯ মে ২০২০ তারিখে অনুষ্ঠিত এনইসি সভার সুপারিশ অনুযায়ী প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর অর্থাৎ, ৩০ জুন ২০২১ পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

 

এরপর মোট এক হাজার ৮৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে জুলাই ২০১৭ থেকে জুন ২০২৪ মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনী করা হয়। বর্তমানে মোট প্রাক্কলিত ব্যয় দুই হাজার ৩৫১ কোটি ৭১ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট চার হাজার ১৯৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে কমিশনে। অর্থাৎ, ১২৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। জুলাই ২০১৭ থেকে জুন ২০২৪ এর পরিবর্তে জুলাই ২০১৭ থেকে জুন ২০২৭ মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য মেয়াদ তিন বছর বৃদ্ধিসহ দ্বিতীয় সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পটি নিয়ে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভাও করা হয়েছে।

 

সভায় কিছু পর্যবেক্ষণও দেওয়া হয়। এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) রেহানা পারভীন বলেন, ‘কিছুদিন আগে প্রকল্পটির পিইসি সভা করেছি। ব্যয় কমানোসহ বেশকিছু পর্যবেক্ষণ আমরা দিয়েছি। এগুলো সংশ্লিষ্ট বিভাগ ঠিক করে দিলেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেবো।’

 

যে কারণে কাজে অগ্রগতি কম

 

Manual1 Ad Code

বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ জানায়, বিভিন্ন স্থানে জমি বরাদ্দ ও অধিগ্রহণে বিলম্ব, দরপত্র আহ্বানে বিলম্ব, কিছু কিছু ক্রয় প্যাকেজের ক্ষেত্রে দরদাতাদের অংশগ্রহণের অভাবে পুনঃদরপত্র আহ্বান, ভারতীয় পরামর্শক সংস্থা ১২টি জেলার বিভিন্ন প্যাকেজের ডিজাইন এবং প্রাক্কলনসহ সরবরাহে বিলম্ব ঘটা ইত্যাদি কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব হয়েছে।

 

চুক্তির মারপ্যাঁচ

 

প্রকল্পের অর্থায়ন বিষয়ে ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত এলওসি চুক্তি অনুসারে সব দরদাতা শুধু ভারতীয় হওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। একই সঙ্গে দরদাতাদের হার্ডফাইলে দরপত্র জমা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সীমানা বন্ধ ছিল। ফলে ভারতের সম্ভাব্য দরদাতাদের বিশেষ অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে এরই মধ্যে দরপত্র জমা দেওয়ার সময় ১০ বার বাড়ানো হয়।

 

দ্বিতীয় এলওসি চুক্তি অনুসারে প্রকল্পের ৭৫ শতাংশ সরঞ্জাম-উপকরণ ভারত থেকে আমদানি করার কথা। পরবর্তীসময়ে ভারতীয় দরদাতারা এ সীমা কমিয়ে ৫০ শতাংশে নির্ধারণ করার অনুরোধ করেন। ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন ও এক্সিম ব্যাংক (ভারত) এটিকে ৬৫ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে আনতে সম্মত হয়েছে। ৬৫ শতাংশ সেবা আসবে ভারত থেকে বাকি ৩৫ শতাংশ সরঞ্জাম বাংলাদেশ জোগান দেবে। বিষয়টি যথাযথভাবে নিষ্পত্তির জন্য প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো প্রয়োজন বলে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

সংশ্লিষ্ট বিভাগ জানায়, সংশ্লিষ্ট ব্যয় নির্বাহের জন্য সরকারি খাতে অর্থ সংস্থান প্রয়োজন, যার পরিমাণ প্রায় এক হাজার ৬১৮ কোটি টাকা। প্রকল্পের শুল্কসহ (সিডি ভ্যাট আয়কর) অন্য সংশ্লিষ্ট খাতে পর্যাপ্ত অর্থ না থাকায় প্রকল্পের প্যাকেজের বিভিন্ন উপকরণ ভারত থেকে আনা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে মূল ডিপিপিতে ভ্যাট-ট্যাক্স সংক্রান্ত কোডে পর্যাপ্ত অর্থের সংস্থান না থাকায় এ খাতে প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান রাখতে হবে।

 

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, প্রকল্পের ডিপিপিতে ছয়টি জেলায় সিনেপ্লেক্স ভবন এবং তিনটি জেলায় ডরমিটরি ভবন নির্মাণের কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ডিপিপিতে নির্মাণকাজের ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ২০১৮ রেট শিডিউলের ভিত্তিতে। বর্তমান সংশোধন প্রস্তাবে এসব নির্মাণকাজ ২০২২ সালের রেট শিডিউল অনুযায়ী সম্পন্ন করার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনীতে নির্ধারিত মেয়াদ জুলাই ২০১৭ থেকে জুন ২০২৪ পর্যন্ত শেষ হয়ে গেছে। তাই প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাসহ প্রকল্পের স্বাভাবিক কার্যক্রম চলমান রাখা যাচ্ছে না।

পরিকল্পনা কমিশন জানায়, উন্নয়ন সহযোগীর সঙ্গে অর্থায়ন চুক্তি সম্পর্কিত বিষয়াদি নিষ্পত্তি ছাড়া প্রকল্পের প্রস্তাবিত সংশোধন বিবেচনা করা সম্ভব নয়। এ প্রেক্ষাপটে প্রকল্পের স্বাভাবিক কাজ চলমান রাখা এবং উন্নয়ন সহযোগীর সঙ্গে অর্থায়ন সম্পর্কিত বিষয়াদি নিষ্পত্তির স্বার্থে ব্যয় বাড়িয়ে প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর অর্থাৎ জুন ২০২৫ পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে। এক্ষেত্রে আইএমইডি ও ইআরডির মতামত গ্রহণসহ ‘সরকারি খাতে উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন, মূল্যায়ন, অনুমোদন ও সংশোধন বিষয়ক নির্দেশিকা, ২০২২ এর নির্ধারিত নির্দেশা অনুসরণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual7 Ad Code