প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

২১শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৬ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১লা রজব, ১৪৪৭ হিজরি

দেশে দেশে অভ্যুত্থান রাজনীতিকদের জন্য চরম বার্তা

editor
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৫, ০৭:২০ পূর্বাহ্ণ
দেশে দেশে অভ্যুত্থান রাজনীতিকদের জন্য চরম বার্তা

Manual3 Ad Code

 

Manual5 Ad Code

প্রজন্ম ডেস্ক:

বাংলাদেশ, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার গণ-অভ্যুত্থান ও সরকার পতনের ঢেউ এই অঞ্চলের রাজনীতিকদের কপালে গভীর চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। নেপালের পর কোন দেশ হতে যাচ্ছে গণ-অভ্যুত্থানের পরবর্তী টার্গেট এবং এর পেছনে কারা নাড়ছে কলকাঠি, তা নিয়ে চলছে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা। নেপালের গণ-অভ্যুত্থানে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী, সব রাজনৈতিক দলের নেতা, রাজনৈতিক কার্যালয়, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো আন্দোলনকারীদের ক্ষোভের শিকারে পরিণত হয়েছে। মন্ত্রীরা হয়েছেন নাস্তানাবুদ। তাদের এই করুণ পরিণতি দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিকদের জন্য একটি চরম বার্তা বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

Manual8 Ad Code

 

Manual7 Ad Code

বিশ্লেষকদের মতে, আধুনিক প্রযুক্তিতে তরুণ সমাজের সম্পৃক্ততা, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক বৈষম্য, ব্যাপক দুর্নীতি, রাজনৈতিক দৌরাত্ম্য, কর্মসংস্থানের অভাব, হতাশা ও দুঃশাসনে দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ থেকেই এ ধরনের গণ-অভ্যুত্থানের জন্ম দিয়েছে। এই বিপর্যয়ের অন্যতম দায় রাজনৈতিক ব্যর্থতার, দুর্বলতার বা রাজনৈতিক শূন্যতার। এই অভ্যুত্থান কোনো রাজনৈতিক দলের উদ্যোগে হচ্ছে না। তরুণ ও জনতা এই অভ্যুত্থানের প্রধান শক্তি, যার আঁচ পড়ছে রাজনীতিকদের ওপর। ফলে এই অঞ্চলের রাজনীতিকদের সতর্ক হওয়ার সময় এসেছে। বিশাল তরুণ গোষ্ঠীকে উন্নয়ন ও কর্মস্থানের বাইরে রেখে বিশেষ একটি গোষ্ঠীর স্বার্থরক্ষার দিন ফুরিয়ে আসছে। কাজেই দেশ পরিচালনায় রাজনৈতিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি না এলে আগামীতে দেশে দেশে এ ধরনের গণ-অভ্যুত্থান হতে থাকবে, যার কোনো সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা নেই। পরবর্তী সময়ে কী হবে, সৃষ্ট সংকটের কে সমাধান দেবে, সে ব্যাপারেও নেই কোনো ইঙ্গিত।

এই অঞ্চলে একের পর এক গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, বাংলাদেশ, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার গণ-অভ্যুত্থানের যে চিত্র, তাতে স্পষ্ট যে এই তিনটি দেশেই তরুণদের সংখ্যা বেশি। তাদের প্রত্যাশাও বেশি, তারা প্রযুক্তিও ব্যবহার করে বেশি, তাদের মধ্যে সচেতনতাও বেশি, কিন্তু তাদের সেভাবে কর্মসংস্থান হচ্ছে না। অথচ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যারা আছেন, তারা দুর্নীতিগ্রস্ত। তারা গোষ্ঠীতন্ত্র চালু করে ব্যাপক বৈষম্য সৃষ্টি করে রেখেছেন। কিন্তু এসব রাজনীতিক তরুণদের কথা শুনছেন না, তরুণদের প্রত্যাশার বিষয়ে মনোযোগী নন তারা। প্রযুক্তির মাধ্যমে তরুণরা সবকিছু জানতে ও দেখতে পাচ্ছেন। তারা দেখছেন তাদের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। এ ধরনের দুঃশাসন, দুর্নীতি ও কর্মহীনতা তরুণদের ক্ষেপিয়ে তুলেছে। কাজেই রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থাপনায় নৈতিক মান উন্নত করতে হবে, দুর্নীতিকে জিরো পর্যায়ে আনতে হবে এবং স্বচ্ছ শাসন ব্যবস্থাপনায় তরুণদের সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। প্রত্যাশা পূরণে কতটা সক্ষমতা আছে, তা নিয়েও স্বচ্ছতা থাকলে ক্ষোভ প্রশমিত হবে। নইলে সংকট বাড়তেই থাকবে।

Manual1 Ad Code

সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সি ফয়েজ আহমেদ নিজস্ব বিশ্লেষণ নিয়ে বলেন, এই অঞ্চলের যেসব দেশে গণ-অভ্যুত্থান হয়েছে, সেখানে বিভেদ ও বৈষম্য ছিল বলেই দুঃশাসন ও অস্থিরতাকে দেশি-বিদেশি শক্তি কাজে লাগিয়েছে। এটি রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বের প্রমাণ। এই ব্যর্থতা নেতৃত্বের। রাজনৈতিক নেতারা জনগণের আস্থা অর্জন ও ঐক্যবদ্ধ করতে পারেননি। দেশের প্রতি তাদের ভালোবাসা ছিল না। এসব কারণেই অভ্যুত্থানের পরিবেশ আগেই তৈরি হয়েছিল। ভেতরের বা বাইরের কোনো একটি শক্তি এটিকে ব্যবহার করেছে, যাদের এখানে স্বার্থ আছে। তবে একটি বিষয় লক্ষণীয় যে এসব দেশে গণ-অভ্যুত্থানের পরে কী ঘটবে, সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা নেই, কোনো ঐক্যও নেই। ফলে এ ধরনের গণ-অভ্যুত্থান অনেক সময় হতাশারও জন্ম দেয়।

বাংলাদেশ, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার গণ-অভ্যুত্থান ও সরকার পতন দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জন্য কী বার্তা দিচ্ছে- এ সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক বিশ্লেষক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, সব সময় তরুণরাই অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দিয়ে থাকে। যখন প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তির বড় পার্থক্য থাকে, যা হাতাশার জন্ম দেয়, তখন এ অভ্যুত্থানের জন্ম নেয়। তিনি বলেন, আজকের তরুণরা প্রযুক্তিতে এগিয়ে। তারা দেখে, লাইফস্টাইলে ব্যাপক বৈষম্য ও বিভাজন। কর্মসংস্থানের সুযোগ হতাশাজনক। অন্যদিকে রাজনীতিবিদদের ব্যাপক দুর্নীতি, তাদের সন্তান ও স্বজনদের বিত্ত-বৈভব, আলিশান বাড়ি, ব্যয়বহুল জীবনযাত্রা। তখন মানুষের মধ্যে ক্ষোভ কাজ করে। অভ্যন্তরীণ এই বিভাজনকে দেশি-বিদেশি শক্তিগুলো সহজেই ব্যবহার করতে পারে।

ড. ইমতিয়াজ আহমেদ আরও বলেন, ‘যেসব গণ-অভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতা আমরা দেখছি, সেখানে একটি সীমাবদ্ধাতা আছে। তা হলো, গণ-অভ্যুত্থানের পর পরিস্থিতি সামলানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এ ধরনের পরিবর্তনের সঙ্গে যারা জড়িত, তারা সংঘবদ্ধ হলেও এরপর কী করতে হবে তা তারা জানে না, এটা প্রমাণিত। ফলে বিপ্লব সফল হলেও প্রত্যাশা আর পূরণ হয় না। এতে টাকাওয়ালারা টাকা নিয়ে বিদেশে পাড়ি দেন। মানি লন্ডারিং হয় এবং দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সংকট বাড়ে। কাজেই রাজনৈতিক দল ছাড়াই তরুণরা সরকার পতন ঘটায় ঠিকই, কিন্তু পরবর্তী দিকনির্দেশনার অভাবে নতুন সংকট তৈরি হয়।’

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual2 Ad Code