প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

২১শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৬ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১লা রজব, ১৪৪৭ হিজরি

সব মত এক করতে ঘাম ঝরছে কমিশনের

editor
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৫, ১১:২৮ পূর্বাহ্ণ
সব মত এক করতে ঘাম ঝরছে কমিশনের

Manual4 Ad Code

 

Manual2 Ad Code

প্রজন্ম ডেস্ক:

Manual2 Ad Code

জুলাই জাতীয় সনদ চূড়ান্ত হলেও এটির বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে নতুন করে সংকট তৈরি হয়েছে। বারবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করেও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি ঐকমত্য কমিশন। তাই সব দলের মত এক করতে অনেকটা ঘাম ঝরছে কমিশনের। রাষ্ট্রপতির বিশেষ আদেশে ভোটের আগেই সাংবিধানিক সংস্কার কার্যকরের বিষয়ে জামায়াত-এনসিপির সঙ্গে বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলোর পাল্টাপাল্টি অবস্থানের কারণে বিপাকে পড়েছে সরকার।

 

এমন পরিস্থিতিতে জুলাই সনদে সব দলকে সই করানো একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল এখনও জুলাই জাতীয় সনদে সইয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়নি। তাদের মতে, সনদটিকে দলীয় সমর্থন দেওয়ার আগে এর একটি স্পষ্ট আইনি কাঠামো থাকা প্রয়োজন। আইনি ভিত্তি ছাড়া সনদে সই করলে এর কোনো কার্যকর ফল পাওয়া যাবে না। তবে বিএনপি ও দলটির সমমনারা সনদে সই করতে সম্মত হয়েছে। বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে তৈরি হওয়া সংকট কাটাতে আজ আবারও দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে বসবে ঐকমত্য কমিশন। কমিশনের মেয়াদ ১৫ সেপ্টেম্বর শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হতে পারে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিশেষ সাংবিধানিক আদেশে সংসদের বাইরে সংবিধান সংশোধন বৈধ কি না প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর পরস্পরবিরোধী অবস্থানের কারণে ভোটের আগে জুলাই সদন বাস্তবায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

বিএনপি সূত্র জানায়, দলটি জুলাই সনদে সইয়ের জন্য মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদকে পাঠাতে পারে। সোমবার সকালে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক করে বিকালে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসবে ঐকমত্য কমিশন। সংলাপে কমিশন সভাপতি ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস থাকবেন বলে জানা গেছে। গত বৃহস্পতিবার সংলাপ শেষে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন কমিশন সদস্যরা। বৈঠকে দ্রুত সনদ স্বাক্ষরের বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি সনদ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক সমঝোতা চেয়েছিলেন। সব দলের মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কাজটি করে তিনি ভারসাম্য রক্ষা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে দলগুলোর ঐকমত্য সম্ভব না হলে বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ জারির মাধ্যমে সংস্কার কার্যকরের পথে যেতে পারে সরকার। দলগুলোর কাছে জুলাই সনদের চূড়ান্ত খসড়া পাঠানো হয়েছে। সনদে স্বাক্ষরের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে দুজন প্রতিনিধির নাম পাঠানোর অনুরোধ জানানো হয়।

Manual4 Ad Code

‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫’ বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনাকালে আবারও সামনে এসেছে নতুন সংবিধান প্রণয়নের দাবি। জুলাই সনদের বাস্তবায়ন কৌশল নির্ধারণে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন যখন হিশশিম খাচ্ছে, তখন এনসিপি আবারও এই দাবি সামনে নিয়ে আসে। এনসিপির বক্তব্য, সংবিধানের যে সংস্কারের বিষয়ে দলগুলো সম্মত হয়েছে, তা বাস্তবায়নে নতুন সংবিধান প্রণয়নের বিকল্প নেই। এই দাবির সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি দলের সম্মতি থাকলেও বিএনপিসহ অধিকাংশ দলের আপত্তি রয়েছে। ফলে এই জটিলতা নিরসন করে নির্ধারিত মেয়াদ ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সনদ প্রণয়নের কাজ শেষ করতে পারছে না কমিশন। এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন বলেন, কমিশন যদি জুলাই সনদ বাস্তবায়নের দায়িত্ব সরকারের ওপর দেয়, তা হলে বিষয়টি পরবর্তী সংসদে গড়াবে কিংবা অনিশ্চয়তায় পড়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে দলীয় ফোরামে সিদ্ধান্ত নেবে এই সনদে সই করবে কি না।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, জুলাই সনদ বাস্তবায়নে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গণভোট, বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ, অধ্যাদেশ ও নিবার্হী আদেশের প্রস্তাব দিয়েছে। এই প্রস্তাব নিয়ে গত বৃহস্পতিবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা হলেও ঐকমত্যে পৌঁছানো যায়নি। রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে রাষ্ট্র সংস্কারের ৮৪টি সিদ্ধান্তের মধ্যে ৩৪টি সংস্কার বাস্তবায়নে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। আর সেটা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর পরস্পরবিরোধী অবস্থান রয়েছে। বিএনপিসহ সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজনৈতিক দলের প্রস্তাব, সংবিধান সংশোধন সংক্রান্ত যেকোনো সংস্কার প্রস্তাবের দায়িত্ব আগামী সংসদের ওপর দিতে হবে। কিন্তু সরকার ও কমিশন এখনই বাস্তবায়নের পক্ষে। আর সেজন্য গণভোট বা বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ জারির প্রস্তাব করা হয়েছে। ওই প্রস্তাবের সঙ্গে একমত জামায়াতে ইসলামী। আর একধাপ এগিয়ে গণপরিষদ গঠন করে নতুন সংবিধান প্রণয়নের দাবি জানিয়েছে এনসিপিসহ কয়েকটি দল।

নির্বাচনের আগে জুলাই সনদ বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন দাবিতে যুগপৎ কর্মসূচিতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে জামায়াত, খেলাফত মজলিস, এবি পার্টি, ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, গণঅধিকার পরিষদ ও নেজামে ইসলাম পার্টি (একাংশ)।

এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, এই সংবিধান অনেকবার কাটাছেঁড়া হয়েছে। সংসদে গৃহীত সংশোধনী যখন হাইকোর্টে গেছে, হাইকোর্ট সেগুলো বাতিল করেছেন। তাই যে বিষয়গুলোতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা তৈরি হয়েছে, ঐকমত্য কমিশন যে সিদ্ধান্তগুলো দিয়েছে, সেগুলোকে টেকসইভাবে পেতে হলে নতুন সংবিধানের বিকল্প নেই। তিনি বলেন, গণপরিষদ নির্বাচন ও নতুন সংবিধানের দাবি কোনো জটিল বিষয় নয়। বরং এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ব্যাপার। যদি রাজনৈতিক দলগুলো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে গণপরিষদ নির্বাচন হবে, তা হলে ফেব্রুয়ারি নয়, ডিসেম্বরেই গণপরিষদ নির্বাচন করা সম্ভব। এটা অবাস্তব কোনো কিছু নয়।

তবে এ বিষয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম বলেন, নতুন সংবিধানের তর্ক, আগামী ৫ বছরেও সমাধান করা যাবে না। এখন জরুরি হলো গুম-খুন বন্ধ করা। এখানে যদি একটা বিপ্লব হতো, তা হলে সেই বিপ্লবী শক্তি তার মতো করে সংবিধান রচনা করতে পারত। কিন্তু এখানে হয়েছে গণঅভ্যুত্থান, যেখানে বহু মত ও পথের মানুষ কিছু কমন স্বার্থের ভিত্তিতে শামিল হয়েছে। ফলে এ মুহূর্তে যেসব বিষয় নিয়ে জাতীয় ঐক্য আছে, সেসব বিষয়ে সংস্কার করাই উত্তম। নতুন সংবিধানের আকাক্সক্ষা আমাদেরও আছে, তবে বাস্তব কারণেই তা এখন প্রধান দাবি হতে পারে না বলে মনে করি।

এনসিপি ও জামায়াতের প্রস্তাবের বিপক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, যে প্রস্তাবগুলো এসেছে, সাধারণভাবে এগুলো অগ্রহণযোগ্য। গণপরিষদ হয়, নতুন সংবিধান প্রণয়নের জন্য। এ ছাড়া সংবিধানের মূল কাঠামো ও চরিত্র পরিবর্তন করতে হলে গণপরিষদ করা হয়। প্রবিশনাল কনস্টিটিউশনাল অর্ডার হয়েছিল ১৯৭২ সালে, যখন দেশে সংবিধান ছিল না। কিন্তু এখন সংবিধান আছে। জিয়াউর রহমানের আমলে প্রোক্লেমেশন জারির মাধ্যমে সংবিধানে পরিবর্তন আনা হয়নি।

 

তখন সংবিধান স্থগিত ছিল। তাই রাষ্ট্র পরিচালনার স্বার্থে ‘প্রোক্লেমেশন’ (ঘোষণা) জারি করা হয়েছিল। এগুলোর বৈধতা দেওয়া হয়েছিল পরবর্তী সংসদে। প্রোক্লেমেশনের মাধ্যমে সংবিধান পরিবর্তনের এখতিয়ার কারও নেই। তিনি বলেন, সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আদালতের মতামতে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার সাংবিধানিক সরকার। সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ন রয়েছে। সংবিধানের কোনো অংশ স্থগিত বা বাতিল হয়নি। তাই সাংবিধানিক আদেশ জারির মাধ্যমে দ্বৈত সংবিধানে যাওয়ার সুযোগ নেই। সাংবিধানিক আদেশ জারি হলে পদ্ধতিগত ত্রুটির কারণে আদালতে প্রশ্ন উঠতে পারে। দেশে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা আছে। এই ধারাবাহিকতা না থাকলে অন্তর্বর্তী সরকারসহ সব অবৈধ হয়ে যাবে।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করবে আগামী জাতীয় সংসদ। কারণ সমালোচনা থাকা সত্ত্বেও বিদ্যমান সংবিধানের আলোকেই আমরা চলছি। সনদ বাস্তবায়নে রাষ্ট্রপতির আদেশ হলে, তা বিপজ্জনক হবে। এমনটি হলে ভবিষ্যতে জনপ্রতিনিধিদের না জানিয়ে রাষ্ট্রপতি যেকোনো সিদ্ধান্ত এককভাবে নিতে পারেন। যা আগামীতে নতুন সংকট সৃষ্টি করতে পারে।

 

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, সনদের কিছু ধারা বাস্তবায়নে ইতিমধ্যে অগ্রগতি হয়েছে, বিশেষ করে যেগুলো সাংবিধানিক সংশোধনের সঙ্গে যুক্ত নয়। দলগুলো একমত হয়েছে যে অন্তর্বর্তী সরকার অধ্যাদেশ ও নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে সংস্কার করতে পারে এবং কিছু ইতিমধ্যেই কার্যকর হয়েছে। তিনি বলেন, সাংবিধানিক সংস্কারের ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় শাসনব্যবস্থা ও কাঠামোগত পরিবর্তনের জন্য মৌলিক এবং এগুলো অগ্রাধিকার দিতে হবে। অনেক বিষয়ে সব দল একমত হয়েছে। বাকি বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করতে হবে নতুন বাংলাদেশ নিশ্চিত করতে। এসব বিষয়ে গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে।

Manual5 Ad Code

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual3 Ad Code