প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

৮ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৭ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

এখনো জন্ম নিবন্ধনের বাইরে ৫০ শতাংশ মানুষ

editor
প্রকাশিত অক্টোবর ৬, ২০২৫, ০৮:০০ পূর্বাহ্ণ
এখনো জন্ম নিবন্ধনের বাইরে ৫০ শতাংশ মানুষ

Manual1 Ad Code

 

Manual8 Ad Code

প্রজন্ম ডেস্ক:

শেখ রহিমের (ছদ্মনাম) ছেলের বয়স ৫ বছর। ২০২৬ সালের শুরুতে ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করাবেন। তখন এক-দুই বছর বয়স কমিয়ে জন্ম নিবন্ধনের পরিবল্পনা ছিল তার। এর মধ্যে ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের শিশুদের টাইফয়েডের টিকা দেওয়ার ঘোষণা দেয় সরকার। এই ঘোষণায় চিন্তায় পড়ে যান শেখ রহিম। টিকা দেওয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে গিয়ে দেখেন সেখানে লাগছে জন্ম-নিবন্ধন নাম্বার। কি করবেন? এরপর তিনি তড়িঘড়ি করে জন্ম নিবন্ধন করান। শুধু রহিম নয়; দেশের অধিকাংশ অভিভাবকই স্কুলে ভর্তির আগে সন্তানদের জন্ম নিবন্ধন করান।

Manual3 Ad Code

শেখ রহিম বলেন, এক দোকান থেকে অনলাইনে আবেদন করলাম। তারপর প্রিন্ট দিয়ে আঞ্চলিক অফিসে গিয়ে সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে আবেদনপত্র জমা দিলাম। এর এক সপ্তাহ পর ছেলের জন্মনিবন্ধন সনদ পেলাম। তিন দিন ব্যয় হলো। টাকার কথা বাদই দিলাম। এই পদ্ধতি খুবই বিড়ম্বনার।

দেশে এখনো ৫০ শতাংশ মানুষ জন্ম নিবন্ধনের বাইরে। জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ৫ বছরের মধ্যে শতভাগ জন্ম নিবন্ধনের আওতায় আনতে হবে। এমন প্রেক্ষাপটে আজ পালিত হবে বিশ্ব জন্ম নিবন্ধন দিবস। জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন বিষয়ক রেজিস্ট্রার জেনারেল (অতিরিক্ত সচিব) মো. যাহিদ হোসেন বলেন, এখনো এই বছরের কোনো স্লোগান নির্ধারণ করা হয়নি। তবে দিবসটি উপলক্ষে ১৮ অক্টোবর আলোচনা সভা করা হবে।

সঠিকভাবে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন নিশ্চিতে সরকার দেড় শ বছরের পুরোনো আইন বাতিল করে ২০০৪ সালে ‘জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন’ প্রণয়ন করে। আইনটি ২০০৬ সাল থেকে কার্যকর রয়েছে। ২০১৩ সালে সংশোধন করা হয়। ২০১৬ সালে স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীনে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন বিষয়ক রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়।

এই আইনের আওতায় জন্ম বা মৃত্যুর ৪৫ দিনের মধ্যে নিবন্ধন এবং সনদ প্রদান বাধ্যতামূলক। জন্ম সনদকে ১৯টি গুরুত্বপূর্ণ সেবার জন্য আবশ্যক করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে বিদ্যালয়ে ভর্তি, চাকরিতে নিয়োগ, পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্র ইত্যাদি। একই সঙ্গে, উত্তরাধিকার নিশ্চিতকরণে মৃত্যু নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর অফিস, ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে (বিদেশে জন্ম হলে) জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন করা হয়। আইন সংশোধন করে জন্মের সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতাল থেকে জন্ম নিবন্ধন করার দাবি দিন দিন জোরালো হচ্ছে।

জাতিসংঘের আঞ্চলিক সংস্থা ইউনাইটেড নেশনস ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কমিশন ফর এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিক (ইউএসইএসসিএপি) এ বিষয়ে কাজ করছে। এই সংস্থা এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের শতভাগ জন্ম নিবন্ধন ও ৫০ শতাংশ মৃত্যু নিবন্ধনের জন্য ২০১৫-২০২৪ পর্যন্ত সিআরভিএস (সিভিল রেজিস্ট্রেশন অ্যান্ড ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিকস) দশক ঘোষণা করেছিল। নির্ধারিত দশকে বাংলাদেশসহ বেশ কয়েকটি দেশ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি। ২০২৫ সালের জুন মাসে আরও ৫ বছর বাড়িয়ে এ দশকের মেয়াদ ২০৩০ সাল পর্যন্ত করা হয়েছে।

Manual1 Ad Code

দেশে এখন জন্ম নিবন্ধনের হার ৫০ শতাংশ। ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বিশ্বে জন্ম নিবন্ধনের গড় হার ৭৭ শতাংশ এবং দক্ষিণ এশিয়াতে এটি ৭৬ শতাংশ। সে হিসেবে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। মৃত্যু নিবন্ধনেও পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ, যা বর্তমানে ৪৭ শতাংশ। বৈশ্বিক গড় হার ৭৪ শতাংশ। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে মালদ্বীপ, ভুটান ও শ্রীলঙ্কায় জন্ম নিবন্ধনের হার প্রায় ১০০ শতাংশে পৌঁছেছে, ভারতে ৮৯ দশমিক ১ শতাংশ, নেপালে ৭৭ শতাংশ এবং মিয়ানমারে ৮১ দশমকি ৩১৪ শতাংশ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নানা কারণে দেশে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হলেও মাঠপর্যায়ে আইন বাস্তবায়নে নানা দুর্বলতা রয়েছে। তারা বলছেন, বিদ্যমান আইন অনুযায়ী নিবন্ধকের কাছে জন্ম ও মৃত্যুর তথ্য প্রদানের দায়িত্ব প্রধানত সংশ্লিষ্ট পরিবারকে দেওয়া হয়েছে, স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বকে ঐচ্ছিক রাখা হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। অথচ বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের প্রায় ৬৭ শতাংশ শিশু স্বাস্থ্য সেবার আওতায় জন্মগ্রহণ করে। স্বাস্থ্য বিভাগের অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক না করা গেলে এ বিশাল সংখ্যক শিশুর জন্ম নিবন্ধন স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদ্যমান আইনে জন্ম বা মৃত্যু সনদে ভুল তথ্য সংশোধনের ক্ষেত্রে নির্ধারিত ফি প্রদানের বাধ্যবাধকতা দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে নিবন্ধন কার্যক্রমে অংশগ্রহণে নিরুৎসাহিত করে।

Manual6 Ad Code

গ্লোবাল হেল্থ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটর বা জিএইচএআই বাংলাদেশের কান্ট্রি লিড মুহাম্মাদ রুহুল কুদ্দুস বলেন, ‘সচেতনতার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। জন্মের পরপরই যে নিবন্ধন করতে হবে সেটি অনেকেই জানেন না। যারা জানেন তাদের অনেকে গুরুত্ব দেন না। স্কুলে ভর্তি করতে গিয়ে যখন জানতে পারেন জন্ম নিবন্ধন ছাড়া হবে না, তখন তাড়াহুড়ো করে জন্মনিবন্ধন করেন। গ্রামের অবস্থা ভালো। কিন্তু ঢাকার দুই সিটির অবস্থা খুবই খারাপ। দুই সিটিতে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনের হার ১৭-১৮ শতাংশ।’

তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে প্রায় ৭০ শতাংশ শিশুর জন্ম সরকারি বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিকে। সে জন্য যদি স্বাস্থ্যসেবা এই প্রতিষ্ঠানগুলোকেই দায়িত্ব দেওয়া হয়, তাহলে ৭০ শতাংশ ওখান থেকেই কাভার হয়ে যাবে। হাসপাতালে যারা মারা যাচ্ছেন তাদের যদি ওখান থেকেই নিবন্ধন করা যায় তাহলে মৃত্যুনিবন্ধন হারও বেড়ে যাবে।’

২০৩০ সালের মধ্যে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন হার কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যাবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আইন সংশোধন হলে ৭০ শতাংশ এর আওতায় চলে আসবে। এর বাইরে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ নিতে হবে। সরকারের উচিত প্রণোদনা দিয়ে হলেও শতভাগ জন্মনিবন্ধন করা উচিত।’

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual3 Ad Code