প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৮ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৩রা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৭শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

মোদী জমানায় কঠোর নিয়ন্ত্রণ, ভারতে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা তলানিতে

editor
প্রকাশিত নভেম্বর ২৩, ২০২৫, ১০:৪৯ পূর্বাহ্ণ
মোদী জমানায় কঠোর নিয়ন্ত্রণ, ভারতে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা তলানিতে

Manual6 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

মোদী জমানায় কঠোর নিয়ন্ত্রণের কারণে ভারতে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা তলানিতে পৌঁছেছে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর মতে, সরকারের নানা বিতর্কিত পদক্ষেপ ভারতের প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ২০২৫ সালের রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স (আরএসএফ) ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সে ভারত ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৫১তম স্থানে রয়েছে। গত বছর এই তালিকায় তারা ছিল ১৫৯তম।

Manual8 Ad Code

ভারতে গণমাধ্যমের ওপর সরকারি হস্তক্ষেপ ও স্বাধীন সাংবাদিকতা বাধাগ্রস্ত হওয়ার মতো বেশ কয়েকটি ঘটনা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্যাপক আলোচনায় এসেছে। নিচে সেসব ঘটনার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা তুলে ধরা হলো-

 

বিবিসি অফিসে হানা

২০২৩ সালে বিবিসি গুজরাট দাঙ্গায় মোদীর ভূমিকা নিয়ে সমালোচনামূলক একটি ডকুমেন্টারি প্রচার করে। এর পরপরই দিল্লিতে সংস্থাটির দপ্তরে হানা দেয় ভারতের আয়কর দপ্তর, বাজেয়াপ্ত করা হয় বিভিন্ন সরঞ্জাম। ওই ঘটনার পর বিবিসি তাদের ভারতীয় কার্যক্রম দুই ভাগে ভাগ করতে বাধ্য হয়। সরকারের পক্ষ থেকে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো জরুরি আদেশ জারি করে ‘ইন্ডিয়া: দ্য মোদী কোয়েশ্চেন’ নামে সেই ডকুমেন্টারির ভিডিও সরাতে বলা হয়। ফলে ডকুমেন্টারির লিংক শেয়ারকারী বহু অ্যাকাউন্ট, ভিডিও এবং স্নিপেটস সরিয়ে ফেলা হয়।

 

 

সিদ্দিক কাপ্পান গ্রেফতার

Manual1 Ad Code

২০২০ সালে উত্তর প্রদেশের হাথরাসে এক দলিত তরুণীকে গণধর্ষণের ঘটনায় রিপোর্ট করতে যাওয়ার সময় গ্রেফতার হন সাংবাদিক সিদ্দিক কাপ্পান। সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে অভিযোগ এনে তাকে দীর্ঘদিন আটক রাখা হয়। সাংবাদিক সংগঠনগুলো একে স্বাধীন প্রতিবেদন ঠেকানোর ভয়ভীতি প্রদর্শন বলে আখ্যা দেয়। ২০২৩ সালে সুপ্রিম কোর্ট থেকে জামিন পান সিদ্দিক কাপ্পান।

 

Manual3 Ad Code

নিউজক্লিকে অভিযান

Manual2 Ad Code

২০২৩ সালে মোদী সরকারের সমালোচনাকারী ওয়েবসাইট নিউজক্লিকে অভিযান চালায় পুলিশ। এর সম্পাদক প্রবীর পুরকায়স্থকে গ্রেফতার করা হয় এবং তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী অর্থায়ন ও অশান্তি উসকে দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়। দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংস্থাগুলো এ ঘটনাকে সমালোচনামূলক কণ্ঠস্বর দমনে কঠোর ইউএপিএ আইন ব্যবহারের অভিযোগ করে। ২০২৪ সালে প্রবীর পুরকায়স্থের গ্রেফতার অবৈধ জানিয়ে মুক্তির নির্দেশ দেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট।

 

এনডিটিভি নিয়ন্ত্রণ

সমালোচনামূলক কভারেজের জন্য পরিচিত ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির ওপর দীর্ঘদিন তদন্ত সংস্থার চাপের পর ২০২২ সালে চ্যানেলটির নিয়ন্ত্রণ নেয় আদানি গ্রুপ, যার কর্ণধার গৌতম আদানিকে মোদীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হিসেবে ধরা হয়। সাংবাদিক মহলে এ ঘটনা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর বড় আঘাত হিসেবে সমালোচিত হয়।

 

জম্মু-কাশ্মীরে মিডিয়া ব্ল্যাকআউট

২০১৯ সালে ৩৭০ ধারা বাতিলের পর জম্মু-কাশ্মীরে পাঁচ মাসেরও বেশি কার্যত ‘মিডিয়া ব্ল্যাকআউট’ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। মোবাইল-ইন্টারনেট, টিভি সিগন্যাল ও সংবাদপত্র পরিবহন বন্ধ রেখে সরকার তথ্যপ্রবাহ সম্পূর্ণভাবে রুদ্ধ করে দিয়েছিল বলে জানান স্থানীয় সাংবাদিকরা।

 

রানা আয়ুবের বিরুদ্ধে মামলা

গুজরাট দাঙ্গা, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও সরকারের সমালোচনামূলক রিপোর্টের জন্য পরিচিত প্রখ্যাত অনুসন্ধানী সাংবাদিক রানা আয়ুবের বিরুদ্ধে ২০২২ সালে মানি লন্ডারিং মামলায় চার্জশিট দাখিল করে সরকারি তদন্ত সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। একটি মানবিক ত্রাণ ফান্ডরেইজিং ক্যাম্পেইনে অর্থ সংগ্রহে অনিয়ম ঘটেছে বলে অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে। তাকে একাধিকবার তলব করা হয় এবং বিদেশ ভ্রমণও আটকে দেওয়া হয়। এই তদন্ত সাংবাদিকতার স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত বলে মন্তব্য করে সাংবাদিকদের অধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা সিপিজে।

 

 

২০২১ থেকে ২০২২ সালে কৃষক আন্দোলন, কোভিড ব্যবস্থাপনা এবং বিক্ষোভ সম্পর্কিত সমালোচনামূলক পোস্ট অপসারণে টুইটার (বর্তমান এক্স) ও ইউটিউবের ওপর চাপ সৃষ্টি করে মোদী সরকার। টুইটার কর্তৃপক্ষ স্বীকারও করেছিল, সরকারি নির্দেশ মানতে বাধ্য হয়ে তাদের বহু পোস্ট ও অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলতে হয়েছে।

 

ফ্যাক্ট-চেকিংয়ের নামে নিয়ন্ত্রণ

২০২৩–২০২৪ সালে প্রস্তাবিত ফ্যাক্ট-চেকিং আইনে অনলাইন কন্টেন্ট সরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা সরকারের হাতে তুলে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। সমালোচকদের মতে, এটি সরকারবিরোধী কণ্ঠস্বর দমনের আরেকটি আইনি অস্ত্র। সুপ্রিম কোর্ট ২০২৪ সালের মার্চে এই প্রস্তাবে স্থগিতাদেশ দেয় এবং ওই বছরের সেপ্টেম্বরে বোম্বে হাইকোর্ট প্রস্তাবটিকে অবৈধ বলে বাতিল করে।

গণমাধ্যম, মানবাধিকার সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের মতে—এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি ভারতে সংবাদ স্বাধীনতার পরিবেশকে ক্রমেই সংকুচিত করে তুলছে।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual5 Ad Code