প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৮ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৩রা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৭শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

উচ্চশিক্ষার মুক্ত দুয়ার

editor
প্রকাশিত নভেম্বর ২৩, ২০২৫, ০৩:০১ অপরাহ্ণ
উচ্চশিক্ষার মুক্ত দুয়ার

Manual7 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

Manual7 Ad Code

উচ্চশিক্ষা একটি জাতির ভবিষ্যৎ কান্ডারিদের মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক ভিত্তি এবং জ্ঞানের সার্বিক উৎকর্ষ সাধনের প্রধানতম মাধ্যম। কিন্তু স্বাধীনতার পর দেশের জনসংখ্যা ও শিক্ষার হার যে হারে বেড়েছে, নানা সংকটের কারণে ঠিক সেই হারে অর্থাৎ জনসংখ্যা এবং উচ্চশিক্ষার চাহিদার অনুপাতে সরকারি বা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের সংখ্যা বাড়েনি। পাশাপাশি সেশনজট এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় নানা অস্থিরতার কারণেও একটা সময় দেশের উচ্চশিক্ষায় সংকট দেখা দেয়। চাহিদার তুলনায় অপর্যাপ্ত উচ্চ শিক্ষালয় বা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় সীমিত আসন সংখ্যার কারণে আশির দশকের দিকে উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী শিক্ষার্থীরা দেশের বাইরে যেতে শুরু করেন।

এই প্রেক্ষাপটে দেশে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংকট কাটিয়ে উঠতে ১৯৯২ সালের ৫ আগস্ট জাতীয় সংসদে প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিল পাস হয়। এ আইনের আওতায় প্রতিষ্ঠিত প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি (আইইউবিএটি) ১৯৯২ সাল থেকে ডিগ্রি দিতে শুরু করে। পরে ১৯৯৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে উচ্চশিক্ষা খাতে নতুন দিগন্তের সূচনা হয়। ১৯৯২ সালের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনটি ১৯৯৮ সালে কিছুটা সংশোধিত হয়। ২০১০ সালের ১৮ জুলাই এ আইন রহিত ও সংশোধন করে মানসম্মত উচ্চশিক্ষা বিস্তারে ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০’ পাস করা হয়; যা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দুয়ার উন্মুক্ত করে। একদিকে যুগোপযোগী নতুন নতুন বিষয়ে উচ্চশিক্ষার সংকট কাটতে শুরু করে, অন্যদিকে আনুপাতিক হারে আসন সংখ্যাও বেড়ে যায়। সেশনজটমুক্ত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হয়ে ওঠে দেশের দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নের অপরিহার্য অংশ এবং উচ্চশিক্ষার মুক্তবাতায়ন।

 

দিন যত যাচ্ছে সারা দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়ছে; তেমনই সময়োপযোগী শিক্ষা, আধুনিক অবকাঠামো এবং পেশাভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থার সুফল নিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষার্থীর সংখ্যাও বাড়ছে। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯২ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরুর পর বর্তমানে দেশে প্রায় ১০৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কার্যক্রম পরিচালনা করছে। অন্যদিকে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে ৫৬টি। ফলে এখনও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় সীমিত আসনের কারণে প্রতি বছর বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সেই বঞ্চনার অবসান ঘটাতে ভূমিকা রাখছে। যেসব শিক্ষার্থী সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারছেন না বা পছন্দের বিষয়ে পড়ার সুযোগ পাচ্ছেন না, তারা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শুধু সেই সুযোগই পাচ্ছেন নাÑ নিজেকে তুলে ধরতে পারছেন সরকারি, বেসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের মতো আকর্ষণীয় কর্মক্ষেত্রেও।

 

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় রাজনৈতিক দলাদলি ও অস্থিরতায় ক্যাম্পাস বন্ধ হওয়ার নজির নেই বললেই চলে। সেশনজটের কোনো ঝামেলাও পোহাতে হয় না শিক্ষার্থীদের। তাই এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখন ছাত্রছাত্রীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ইউরোপ, আমেরিকার পাশাপাশি আরব আমিরাত, ফিলিপাইন, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ, চীন, জাপান, ইয়েমেন, ফিলিস্তিন, গাম্বিয়া, মরক্কো, রুয়ান্ডা, সাউথ কোরিয়া, মৌরিতানিয়া, তানজানিয়া, অস্ট্রিয়া, জিবুতি, সোমালিয়া, ইথিওপিয়া, নাইজেরিয়া, আফগানিস্তান, বাহরাইনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ছাত্রছাত্রী আসছেন এখানকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি নিতে।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) তথ্যমতে, গত ১০ বছরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১০ (৯.৯৯) শতাংশ বেড়েছে। বর্তমানে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং, আর্কিটেকচার, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং, পাবলিক হেলথ, ফার্মাসি, ফার্মাসিউটিক্যাল সায়েন্স, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং, ফ্যাশন ডিজাইন অ্যান্ড টেকনোলজি, বায়োকেমিস্ট্রি, মাইক্রোবায়োলজি, অ্যাপারেল ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যান্ড টেকনোলজি, নেভাল আর্কিটেকচার অ্যান্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং, ইন্টেরিয়র আর্কিটেকচার, প্রডাক্ট ডিজাইন, মিউজিক, গভর্নমেন্ট অ্যান্ড পলিটিকস, মেকাট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং, উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ, অ্যাকাউন্টিং, মার্কেটিং, ম্যানেজমেন্ট, ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন, বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, আইনসহ যুগোপযোগী বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনা করছেন ৩ লাখ ৪১ হাজার ৯৮ জন ছাত্রছাত্রী। এর মধ্যে ছাত্রী ১ লাখ ৫৮৫ জন।

ইউজিসির সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, একাডেমিকভাবে চালুকৃত শতাধিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষিতে ১ হাজার ৬৯৮, কলা ও মানবিকে ৩৭ হাজার ৭৭৩, জীববিজ্ঞানে ৪ হাজার ৭৭১, ব্যবসায় শিক্ষায় ৭৫ হাজার ৫৮, ফার্মেসিতে ১০ হাজার ৯৮৯, বিজ্ঞানে ৬ হাজার ৮২৩ জন, সামাজিক বিজ্ঞানে ১১ হাজার ৯০০, টেক্সটাইল ও ফ্যাশনে ১০ হাজার ৪৭৬, ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সে ২৯৭ জন ছাড়াও অন্যান্য বিভাগে ৩ হাজার ৭৪০ জন ছাত্রছাত্রী অধ্যয়নরত। শিক্ষার্থীদের মধ্যে সর্বোচ্চ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিষয়ে পড়াশোনা করছেন ৪৩ দশমিক ৯ শতাংশ। এসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট শিক্ষক রয়েছেন ১৬ হাজার ৫০৮ জন। এর মধ্যে পূর্ণকালীন ১২ হাজার ১৩ ও খণ্ডকালীন ৪ হাজার ৫ জন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় নারী শিক্ষক রয়েছেন ৫ হাজার ১৬৭ জন। পিএইচডি ডিগ্রিধারী শিক্ষক রয়েছেন ৩ হাজার ৫১০ জন।

Manual7 Ad Code

এ ছাড়া খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া প্রায় ৪৪ শতাংশ শিক্ষার্থী ইঞ্জিনিয়ারিং ও প্রযুক্তি বিষয়ে এবং প্রায় ২২ শতাংশ শিক্ষার্থী ব্যবসা প্রশাসনে পড়াশোনা করছেন। এই তথ্যই প্রমাণ করে যে, এসব বিশ্ববিদ্যালয় ভবিষ্যৎ কর্মবাজারের জন্য মানবসম্পদ তৈরিতে মনোযোগী। মানবসম্পদ উন্নয়নে তাদের অবদানও প্রশংসনীয়। অনেক প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ, ইন্টার্নশিপ, শিল্প খাতের সঙ্গে অংশীদারত্ব এবং উদ্যোক্তা উন্নয়নমূলক কার্যক্রম চালু করেছে। এর ফলে তরুণ প্রজন্ম শুধু চাকরিপ্রত্যাশী নয়, বরং উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলছে। শিক্ষার এই নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দেশের অর্থনৈতিক বিকাশে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। একই সঙ্গে অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণামূলক কাজ, সেমিনার ও আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজনের মাধ্যমে জ্ঞানের প্রসারে অবদান রাখছে। সময়ের চাহিদা অনুযায়ী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিয়মিতভাবে চালু করছে কর্মবাজারের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত বিভিন্ন কোর্স। তারা প্রথম সেমিস্টার ভিত্তিক শিক্ষা, ক্রেডিট ট্রান্সফার সিস্টেম, ইংরেজি মাধ্যমে পাঠদান এবং আধুনিক আইটি অবকাঠামো চালু করেছে। কিছু বিশ্ববিদ্যালয় বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ ডিগ্রি প্রোগ্রাম পরিচালনা করছে, যা শিক্ষার্থীদের জন্য আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষার সুযোগ তৈরি করেছে। ফলে দেশীয় উচ্চশিক্ষা এখন অনেক বেশি প্রতিযোগিতামূলক, আধুনিক ও বৈশ্বিক মানসম্পন্ন হয়ে উঠছে। তা ছাড়া অনেক বিশ্ববিদ্যালয় উদ্যোক্তা উন্নয়ন সেন্টার স্থাপন করেছে, যেখানে তরুণরা নিজেদের উদ্যোগেই কাজ করছেন। ফলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শুধু চাকরিপ্রত্যাশী মানবসম্পদই তৈরি করছে না, সৃজন করছে নতুন চাকরির ক্ষেত্রও। এছাড়া সহশিক্ষা ও অতিরিক্ত শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় বিভিন্ন বিভাগ বা বিষয়ভিত্তিক স্টুডেন্ট ক্লাবে নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা করছেন শিক্ষার্থীরা। এসব ক্লাবে শিক্ষার্থীদের ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন অনুষ্ঠান, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, ওয়ার্কশপ, ক্রীড়া, সাংস্কৃতিক চর্চা, মানসিক ও শারীরিক গঠনসংশ্লিষ্ট কার্যক্রমের আয়োজন করা হয়। অন্যান্য দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে বিভিন্ন আয়োজন ও প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। বেশ কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষক ক্লাস নিচ্ছেন।

Manual5 Ad Code

লক্ষণীয় বিষয় হলো, এসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিক্ষার্থী বিনা বেতনে পড়াশোনার সুযোগ পাচ্ছেন। বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ৪ হাজার ৬১০ জন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, ১৮ হাজার ৯৭ জন দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থী বিনা বেতনে পড়াশোনা করছেন। স্কলারশিপে অধ্যয়ন করছেন ৫ হাজার ৬৯৩ জন। এ ছাড়া ওয়েভারপ্রাপ্ত রয়েছেন ৪৭ হাজার ৯৩৮ জন শিক্ষার্থী। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনে নির্দিষ্টসংখ্যক আসন সংরক্ষণ করা হয়েছে।

Manual4 Ad Code

সিংহভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত সন্তোষজনক পর্যায়ে রয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীর পাঠদান, জ্ঞান বিতরণ তুলনামূলক সহজতর হচ্ছে এসব বিদ্যাপীঠে। ইউজিসির বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, একাডেমিক কার্যক্রম চালুকৃত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর গড় অনুপাত ছিল ১:২১, যা সন্তোষজনক। তবে সবকিছুরই যেমন আলোকিত দিক আছে, তেমনি আছে কিছু ছায়াও। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও এর ব্যতিক্রম নয়। এখনও কিছু প্রতিষ্ঠান শিক্ষার মান বজায় রাখতে হিমশিম খাচ্ছে। যোগ্য শিক্ষক সংকট, গবেষণার সীমাবদ্ধতা এবং উচ্চ টিউশন ফি-এর মতো সমস্যা সবচেয়ে বেশি আলোচিত। ফলে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী শুধু আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও দেশের বড় বড় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, যেমনÑ নর্থ সাউথ, ব্র্যাক, ইস্ট ওয়েস্ট, ইউআইইউ, ইন্ডিপেনডেন্ট, ড্যাফোডিল, এআইইউবির মতো বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ইতোমধ্যেই নিজেদের আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করেছে। তাদের স্নাতক উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা দেশ-বিদেশে সফলভাবে কাজ করছেন। এসব বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা, উদ্ভাবন ও শিল্প খাতের সঙ্গে যোগসূত্র তৈরির ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আগামী দিনের বাংলাদেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিঃসন্দেহে আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। তবে এজন্য দরকার মান নিশ্চিত করা, গবেষণার পরিধি বাড়ানো এবং শিক্ষাকে আরও সাশ্রয়ী করা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষাবিদ ও কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. ইয়াসমিন আরা সাথী বলেন, ‘বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষার পরিধি গত তিন দশকে যে ব্যাপকতা অর্জন করেছে, তার অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সীমিত আসন এবং অবকাঠামোগত সংকটের কারণে বহু মেধাবী শিক্ষার্থীর জন্য উচ্চশিক্ষা একসময় অধরা ছিল। সেই শূন্যস্থান পূরণে নব্বইয়ের দশকের গোড়ায় দেশে যাত্রা করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। আজ সেই উদ্যোগ পরিণত হয়েছে দেশের উচ্চশিক্ষার অপরিহার্য অংশে। দেশে দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নে শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শুধু ভরসার জায়গা হয়েই ওঠেনি; নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে উচ্চশিক্ষার মুক্তবাতায়ন হিসেবেও। সরকার ও এসব বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একসঙ্গে কাজ করলে এই খাতটি শুধু উচ্চশিক্ষা নয়, দেশের সামগ্রিক উন্নয়নেরও চালিকাশক্তির শক্ত ভিত হিসেবে গড়ে উঠবে।’

এ বিষয়ে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এসএমএ ফায়েজ বলেন, ‘দেশের বেসরকারি অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড কর্তৃপক্ষ সমাজ, দেশ ও জাতির প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে কাজ করছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার মান দিন দিন বেড়েই চলেছে। আন্তর্জাতিক র‌্যাঙ্কিংয়েও অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থান করে নিচ্ছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আমাদের প্রত্যাশার কমতি নেই। আশা করছি, সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সরকারের নিয়ম মেনে তাদের একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা করবে। তারা দেশ ও জাতির জন্য আরও অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে বলেও প্রত্যাশা করি।’

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual8 Ad Code