প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৮ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৩রা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৭শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

ক্ষয়ক্ষতি সামালে নেই প্রস্তুতি, সক্ষমতা

editor
প্রকাশিত নভেম্বর ২৪, ২০২৫, ০৪:১৪ অপরাহ্ণ
ক্ষয়ক্ষতি সামালে নেই প্রস্তুতি, সক্ষমতা

Manual7 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

শনিবার সকাল ১০টা ৩৬ মিনিটে ৩ দশমিক ৩ মাত্রার এবং সাড়ে সাত ঘণ্টার পর সন্ধ্যা ৬টার দিকে আরও একটি ভূমিকম্প হয়, রিখটার স্কেলে যার মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ৩। এ ভূমিকম্প দুটোরই উৎপত্তি ছিল নরসিংদী। সন্ধ্যায় কাছাকাছি সময়ে আরও একটি ভূমিকম্পের উৎসস্থল ছিল রাজধানীর বাড্ডা; যার মাত্রা ছিল ৩ দশমিক ৭।

শুক্রবার সকালে ঢাকা থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে রিখটার স্কেলে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পটির উৎস ছিল নরসিংদীর মাধবদী। উৎপত্তিস্থলের গভীরতা ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০ কিলোমিটার গভীরে। ভূপৃষ্ঠ থেকে উৎপত্তিস্থলের গভীরতা যত কম হবে, ততবেশি ঝাঁকুনি হবে।

Manual7 Ad Code

শুক্রবারের ভূকম্পনের তীব্রতা ছিল স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। তীব্র ঝাঁকুনিতে কেঁপে ওঠে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল। এ ভূমিকম্পের ঘটনায় শিশুসহ ১১ জন নিহত হন। আহত হন ৬ শতাধিক মানুষ। ভূমিকম্পে রাজধানী শহর ঢাকার বড় বিপদের ঝুঁকি আরও স্পষ্ট হচ্ছে। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের নৈকট্য, অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও প্রাণহানির ঝুঁকিকে বিবেচনায় নিয়ে এমন মত দিয়েছেন ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা।

Manual1 Ad Code

দেশের ভূমিকম্প ঝুঁকি দ্রুত বাড়লেও সরকারি-বেসরকারি কোনো পর্যায়ে নেই কার্যকর প্রস্তুতি। ভবন নির্মাণে কোড লঙ্ঘন, উদ্ধার সরঞ্জামের অভাব, মহড়ার অনুপস্থিতি এবং নগর পরিকল্পনার বিশৃঙ্খলা মিলিয়ে বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানির আশঙ্কা দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু বহু সতর্কবার্তার পরও সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো নীরব।

ভূমিকম্পে ঢাকা শহর সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে আছে। ভূমিকম্পের জন্য যেসব উপাদান কাজ করে এর অন্যতম হলো অধিক জনসংখ্যা ও ঘনবসতি। ঢাকায় স্থানভেদে প্রতি কিলোমিটারে ২৫ থেকে ৫০ হাজার লোক বসবাস করে। নিম্নাঞ্চল ভরাট করে অপরিকল্পিত ও অনিয়ন্ত্রিত নগরায়ণ ভূমিকম্পে কোনোভাবেই নিরাপদ নয়।

নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, একটি আদর্শ নগরে ২৫ শতাংশ খোলা জায়গা থাকে। ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগের পর নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে প্রয়োজনীয় খোলা জায়গা নেই ঢাকা শহরে। ঘনবসতির ঢাকা শহরটির ভূমিকম্প ঝুঁকি কমাতে এ পর্যন্ত বিভিন্ন প্রকল্প ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কথা বলা হলেও তার বেশিরভাগই আলোর মুখ দেখেনি। তা ছাড়া ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড (বিএনবিসি) মেনে চলার নির্দেশনা থাকলেও রাজধানীসহ অন্যান্য মহানগরীর বেশিরভাগ ভবন মালিকই তা মানছেন না। এ বিষয়ে আইন হওয়ার প্রায় ১৫ বছর পরও এটি ঠিকমতো বাস্তবায়ন না হওয়ায় বাড়ছে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন এবং ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকার আশপাশে রিখটার স্কেলে ৭ মাত্রার বেশি ভূমিকম্প হলে রাজধানীতে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

Manual1 Ad Code

ঝুঁকি মোকাবিলায় মাঠ পর্যায়ে অংশীজনরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন যেমন- জরুরি সেবাদানকারী সংস্থা, ফায়ার সার্ভিস, সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ ও আনসার, মাঠ প্রশাসন, স্থানীয় নেতৃত্ব, রাজনৈতিক নেতা, স্বেচ্ছাসেবক ও সামাজিক শক্তি, আমাদের নিবেদিতপ্রাণ স্বেচ্ছাসেবক এবং বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, উন্নয়ন সহযোগী ও এনজিও, লোকাল ও আন্তর্জাতিক এনজিও এবং উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা। সব অংশীজনের এই সম্মিলিত প্রচেষ্টা এবং সমন্বিত পদক্ষেপ ছাড়া কোনো টেকসই সমাধান সম্ভব নয়।

এ বিষয়ে ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, ভূমিকম্পের সাবডাকশন জোনে (সিলেট থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত) গত এক হাজার বছরে বড় ধরনের ভূমিকম্প হয়নি। এই জোনে বিপুল শক্তি সঞ্চিত হচ্ছে। সেটি পরিমাপ করে আমরা দেখেছি ৮ দশমিক ২ থেকে ৮ দশমিক ৯ মাত্রা পর্যন্ত ভূমিকম্প হওয়ার মতো শক্তি সঞ্চিত আছে। যেকোনো সময় এই শক্তিটা বের হতে পারে। তিনি বলেন, এই শক্তিটা আংশিক বের হতে পারে। ধাপে ধাপে বের হতে পারে। আবার একবারেও বের হতে পারে। সাবডাকশন জোন থেকে যখন ভূমিকম্প হয় তখন ৭০-৮০ শতাংশ শক্তি একবারে বের হয়ে যায়। বাকি শক্তি আস্তে আস্তে বের হয়। সাবডাকশনে এই জোনের মধ্যে আবার দুটি ভাগ আছে। একটা হলো লক জোন, যেটি আমাদেরই অংশ। আমাদের অংশে ভূমিকম্পের প্রবণতা কম। ভূমিকম্প হয় তবে ঘন ঘন ভূমিকম্প হয় না। অতীতে আমরা দেখেছি খুব একটা ভূমিকম্প হয়নি। ছোট ছোট ভূমিকম্প হয়েছে। কিন্তু গত দুই বছরে ভূমিকম্পের প্রবণতা বাড়ছে। সাম্প্রতিককালে এই অঞ্চলে ভূমিকম্পের প্রবণতা বেড়ে গেছে। এটি নির্দেশ করে বড় শক্তি বের হওয়ার পূর্ব লক্ষণ। অর্থাৎ বড় ভূমিকম্প হওয়ার পূর্বাভাস।

Manual2 Ad Code

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্লানার্স (বিআইপি) সাবেক সভাপতি ফজলে রেজা সুমন বলেন, ভূমিকম্প মোকাবিলায় আমাদের এখনও অনেক ঘাটতি রয়েছে। যেহেতু ভূমিকম্পের আগাম কোনো সতর্কবার্তা পাওয়া যায় না সে কারণে ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় আমাদের সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। যেসব ভবন বিল্ডিং কোড মেনে করা হয়নি বা ভূমিকম্প সহনীয় নয় সেগুলোর বিষয়ে দ্রুত সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে। রাজউক, সিটি করপোরেশন ও ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। নির্মাণাধীন ভবনগুলো বিল্ডিং কোড মেনে তৈরি করা হচ্ছে কি না কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে তদারকি জোরদার করতে হবে। তিনি বলেন, বিল্ডিং কোড না মানায় ঢাকায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভূমিকম্পে দুর্যোগের ঝুঁকি বাড়ছে।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual4 Ad Code