প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৭ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২রা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৬শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

বিশ্বের সবচেয়ে জলবায়ু–ঝুঁকিপূর্ণ দেশ বাংলাদেশ: বিশ্বব্যাংক

editor
প্রকাশিত নভেম্বর ২৫, ২০২৫, ০৫:১২ পূর্বাহ্ণ
বিশ্বের সবচেয়ে জলবায়ু–ঝুঁকিপূর্ণ দেশ বাংলাদেশ: বিশ্বব্যাংক

Manual2 Ad Code

স্টাফ রিপোর্টার:
‘দক্ষিণ এশিয়া বিশ্বের সবচেয়ে জলবায়ু–ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের একটি, আর এর মধ্যেই সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ।’— বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এমন সতর্ক বার্তা দেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, ২০৩০ সালের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ চরম তাপমাত্রার ঝুঁকিতে পড়বে এবং প্রায় এক-চতুর্থাংশ মানুষ গুরুতর বন্যার ঝুঁকিতে থাকবে। উপকূলে পানি ও মাটির লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের কোটি মানুষের জীবন-জীবিকার ওপর সরাসরি প্রভাব পড়ছে।

সোমবার (২৪ নভেম্বর) প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের ‘বাংলাদেশ অ্যান্ড আদার সাউথ এশিয়ান কান্ট্রিজ ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স উইল বি প্রাইভেট সেক্টর লেড’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার মূল চাপ এখন পরিবারের ওপর এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ওপর গিয়ে পড়েছে। জরিপে দেখা গেছে, আগামী ১০ বছরের মধ্যে কোনো না কোনো ধরনের আবহাওজনিত ধাক্কার আশঙ্কা করছে দক্ষিণ এশিয়ার তিন-চতুর্থাংশ পরিবার ও প্রতিষ্ঠান। ইতিমধ্যে ৮০ শতাংশ পরিবার ও ৬৩ শতাংশ প্রতিষ্ঠান জলবায়ু অভিযোজনমূলক পদক্ষেপ নিলেও এগুলোর বড় অংশই সাধারণ ও কম খরচের সমাধান।

বাংলাদেশের উপকূলের ২৫০টি গ্রাম নিয়ে করা এক জরিপ বলছে, জলবায়ু সহনশীল অবকাঠামো এখানকার সবচেয়ে বড় অপূর্ণ চাহিদা। দীর্ঘমেয়াদে ৫৭ শতাংশ পরিবার জানিয়েছে, দুর্যোগ–সুরক্ষা অবকাঠামোর ঘাটতি তাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ। আর ৫৬ শতাংশ পরিবার বলেছে, অভিযোজনের জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক সক্ষমতাই তাদের নেই। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এই সংকট শুধু পরিবেশগত নয়, মানুষের জীবন ও জীবিকার সঙ্গেও গভীরভাবে যুক্ত; বিশেষ করে দরিদ্র ও কৃষিভিত্তিক পরিবার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।

Manual3 Ad Code

বিশ্বব্যাংক জানায়, বাঁধ, সাইক্লোন শেল্টারসহ সরকারি বিনিয়োগ মানুষের জীবন বাঁচাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের অভিজ্ঞতা দেখায়—সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি ও হালনাগাদ তথ্যের সমন্বয়ে দ্রুত সহায়তা পৌঁছানো সম্ভব। তবে রাজস্ব সংকটের কারণে সরকারের সামর্থ্য সীমিত হওয়ায় বেসরকারি খাতের অভিযোজনকে সহজ করতে নীতিগত প্যাকেজ জরুরি হয়ে উঠেছে।

Manual6 Ad Code

বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটান বিভাগের পরিচালক জ্যঁ পেসমে বলেন, ‘বাংলাদেশের স্থিতিস্থাপকতা প্রতিনিয়ত নতুন পরিবেশগত চ্যালেঞ্জে পরীক্ষার মুখে পড়ছে। অভিযোজন ইতিমধ্যে ব্যাপকভাবে ঘটছে, কিন্তু জলবায়ু ঝুঁকি দ্রুত বাড়ায় আরও অনেক কিছু করার প্রয়োজন আছে।’ তিনি আরও বলেন, দেশের স্থিতিস্থাপকতা বাড়াতে আগাম সতর্কীকরণ ব্যবস্থা, সামাজিক সুরক্ষা, জলবায়ু–স্মার্ট কৃষি, অভিযোজন অর্থায়ন ও নগর এলাকার লক্ষ্যভিত্তিক বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, জলবায়ু অভিযোজনের জন্য বহুস্তরীয় ও সমন্বিত পদক্ষেপ এখন জরুরি। আগাম সতর্কীকরণ ব্যবস্থা উন্নত করা, আনুষ্ঠানিক ঋণ ও বীমা ছড়িয়ে দেওয়া বিশেষ প্রয়োজন। বেসরকারি খাত প্রয়োজনীয় স্থানে বিনিয়োগ স্থানান্তর করতে পারলে জলবায়ু–সম্পর্কিত ক্ষতির এক-তৃতীয়াংশ এড়ানো সম্ভব বলে উল্লেখ করা হয়। সীমিত বাজেটেও পরিবহন ও ডিজিটাল নেটওয়ার্ক উন্নত করা এবং লক্ষ্যভিত্তিক সামাজিক সহায়তা জোরদারের মাধ্যমে সরকার এ প্রক্রিয়া সহজ করতে পারে।

Manual5 Ad Code

এ ছাড়া নতুন প্রযুক্তি–নির্ভর অভিযোজন এবং সড়ক বা স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার মতো মূল সরকারি পণ্য সরবরাহের ওপর জোর দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয় প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনের সহ–লেখক সিদ্ধার্থ শর্মা বলেন, ‘জলবায়ু অভিযোজনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা যেমন শিক্ষণীয়, তেমনি একটি বড় পরীক্ষা। মানুষ ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে অভিযোজন করছে, কিন্তু সংকটের জটিলতা ও ব্যাপকতা মোকাবিলায় সরকার ও বেসরকারি খাতের জরুরি, সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।’

বিশ্বব্যাংক বলছে, সামনে বাংলাদেশ স্থিতিস্থাপকতা গড়ে তোলার বড় সুযোগ পাচ্ছে। আগাম সতর্কীকরণ ব্যবস্থা ও সাইক্লোন শেল্টারে বিনিয়োগ বড় দুর্যোগেও প্রাণহানি কমাতে সফল হয়েছে—যা প্রমাণ করে লক্ষ্যভিত্তিক বিনিয়োগ ও কার্যকর প্রতিষ্ঠান স্থানীয় অভিযোজনকে বড় পরিসরে রূপ দিতে পারে। সরকার, বেসরকারি খাত ও কমিউনিটির সমন্বিত অংশীদারিত্ব জোরদার করতে পারলে জলবায়ু–স্মার্ট সমাধান দ্রুত ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হবে। এতে শুধু দুর্বলতা কমবে না, দীর্ঘমেয়াদে টেকসই উন্নয়নও নিশ্চিত হবে।

Manual6 Ad Code

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual2 Ad Code