প্রজন্ম ডেস্ক:
নির্বাচনের সময় দেশে ৬৪ জেলার এসপি চূড়ান্ত করা হয়েছে। গতকাল সোমবার বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় ৬৪ জেলার এসপিদের নিয়োগের বিষয়ে সংক্ষিপ্ত বৈঠক হয় বলে পুলিশের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশে জেলার এসপি নিয়োগ চূড়ান্ত করা হয়। তবে রাজনৈতিক তদবির থাকায় লটারির মাধ্যমে এসপিদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। লটারিতে কর্মকর্তাদের নাম ওঠান কয়েকজন উপদেষ্টা ও পুলিশ কর্মকর্তা। চলতি সপ্তাহের মধ্যেই এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করবে।
পুলিশের রেঞ্জ ডিআইজি, জেলার পুলিশ সুপার ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের রদবদল করা নিয়ে গত শনিবার ম্যারাথন বৈঠক করেন কয়েকজন উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের ঊর্ধ্বতনরা। তবে ‘পক্ষ-বিপক্ষ’ নিয়ে বিশেষ বৈঠকে পদায়নের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি।
পুলিশ সূত্র জানায়, জরুরি ভিত্তিতে জেলার পুলিশ সুপার হিসেবে কাদের নিয়োগ দেওয়া হবে, সেজন্য একটি তালিকা চূড়ান্ত করা হয়। ওই তালিকায় বিসিএস ২৫, ২৭ ও ২৮ ব্যাচের প্রায় ১৫০ জনের নাম ঠিক করা হয়। সেই আলোকে গতকাল বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় ৬৪ জেলার এসপিদের নিয়োগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
নাম প্রকাশ না করে পুলিশের ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ৮ রেঞ্জের ডিআইজি ও দেশের সব থানার ওসিদের আগামী সপ্তাহে লটারির মাধ্যমেই বদলি করা হবে। তাদের বদলি করা ও না করা নিয়ে তুমুল বিরোধ চলে আসছিল। শেষ পর্যন্ত প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি সমাধান করা হয়।
যমুনায় লটারির মাধ্যমে পদায়নের উপস্থিত পুলিশের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী জানিয়েছেন, সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে প্রতিটি জেলায় নিরপেক্ষ কর্মকর্তা নিয়োগই ছিল সরকারের লক্ষ্য। পদায়ন নিয়ে যাতে কোনো প্রশ্ন না ওঠে, সে কারণে উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্বচ্ছ লটারির মাধ্যমেই এসপি নির্বাচন করা হয়েছে। খুব দ্রুত তাদের পদায়নের প্রক্রিয়া শুরু হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানায়, জেলার পুলিশ সুপার নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রথমেই অতীতে এসপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এমন কর্মকর্তাদের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়। এরপর পুলিশ ক্যাডারের ২৫, ২৭ ও ২৮তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে একটি ‘ফিট লিস্ট’ প্রস্তুত করা হয়। সেই তালিকায় থাকা কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে ম্যানুয়াল লটারির মাধ্যমে ৬৪ জনকে নির্বাচন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে তাদের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হবে। লটারির সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তা, ভারপ্রাপ্ত আইজি এবং প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ অনুযায়ী যোগ্য কর্মকর্তাদের তালিকা কমিটির হাতে দেওয়া হয় এবং লটারির মাধ্যমে জেলাওয়ারি পদায়ন চূড়ান্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ কারণে গত সপ্তাহে ছয় জেলায় দেওয়া নতুন এসপি নিয়োগের যোগদান স্থগিত রাখা হয়; তাদের ক্ষেত্রেও লটারির সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। এসপি পদায়নের পরবর্তী ধাপে থানার ওসি নিয়োগও লটারির ভিত্তিতে সম্পন্ন করা হবে। সৎ, নিরপেক্ষ ও যোগ্য পরিদর্শকদের তালিকা এরই মধ্যে ইউনিটপ্রধানদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে এবং সেই তালিকা ধরে ‘ফিট লিস্ট’ তৈরি করা হয়েছে। একই সঙ্গে দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির জটমোচনের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।
জানা যায়, পুলিশের এসব গুরুত্বপূর্ণ রদবদলের জন্য গত শনিবার জরুরি বৈঠকে বসেন কয়েকজন উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টার একজন বিশেষ সহকারী, স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ মন্ত্রণালয় ও পুলিশের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে চলে বৈঠকটি। নির্বাচনের আগেই পুলিশে রদবদল করার বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা করা হয়। তবে বৈঠকে একপক্ষ চাচ্ছে বর্তমানে দায়িত্বরত রেঞ্জ ডিআইজি, জেলার পুলিশ সুপার ও থানার ওসিরা যেখানেই আছেন, তাদের সেখানেই রেখে দিতে। ওই পক্ষটি যুক্তি দেখিয়েছে, জেলা বা থানায় দায়িত্ব নেওয়ার পর সোর্স তৈরি করতে সময় লাগে পুলিশের। অপরাধী ধরতে সুবিধা হয়। এলাকার পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। আবার আরেকটি পক্ষ বৈঠকে বলেছে, দেশের বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবস্থা ভালো নয়। যারা দায়িত্ব পালন করছে তারা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না। তফসিল ঘোষণা করলেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাওয়ারও শঙ্কা আছে। তাদের সঙ্গে ‘রাজনৈতিক নেতাদের সুসম্পর্ক’ গড়ে উঠেছে। এসব দিক বিবেচনা করে রেঞ্জ, এসপি ও থানার ওসিদের বদলি করতেই হবে। আর না হয় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক পদস্থ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নির্বাচনকেন্দ্রিক পুলিশিং নিয়ে কোনো ধরনের বিতর্ক এড়াতেই লটারির পদ্ধতি নেওয়া হয়েছে। এতে মাঠপর্যায়ে নিরপেক্ষ কর্মকর্তা নিয়োগ নিশ্চিত হবে।
Sharing is caring!