প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৭ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২রা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৬শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

হাসিনাকে তৃতীয় কোন দেশে পাঠাতে চায় ভারত, সম্ভাব্য দেশ ফিজি-মরিশাস

editor
প্রকাশিত নভেম্বর ২৫, ২০২৫, ০৮:২৪ পূর্বাহ্ণ
হাসিনাকে তৃতীয় কোন দেশে পাঠাতে চায় ভারত, সম্ভাব্য দেশ ফিজি-মরিশাস

Manual3 Ad Code

 

Manual1 Ad Code

প্রজন্ম ডেস্ক:

 

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর থেকেই অস্বস্তি শুরু হয় দুই দেশের সম্পর্কে। যার জেরে স্থবিরতা নেমে আসে দুই দেশের স্বাভাবিক ব্যবসা-বাণিজ্যে। তবে প্রথম থেকেই হাসিনাকে ফেরত পাঠাতে অব্যাহত তৎপরতা দেখায় বাংলাদেশ। কিন্তু এতদিন ভারত আমলে না নিলেও হাসিনার ফাঁসির রায়ের পর ভাবনায় বেশ পরিবর্তন এনেছে দেশটি। নিরাপদ বিকল্প আশ্রয়ের সক্রিয় চিন্তা চলছে দেশটির নীতিনির্ধারকদের মধ্যে। এ ক্ষেত্রে কয়েকটি দেশ আলোচনায় এলেও এগিয়ে রয়েছে ফিজি-মরিশাস।

দিল্লিকেন্দ্রিক বাংলাদেশের কূটনৈতিক একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে বিষয়টি জানা যায়।

সূত্র জানা যায়, ভারতের এই সিদ্ধান্তের পেছনে কাজ করছে একাধিক বিষয়। বিশেষ করে ফাঁসির আসামিকে আশ্রয় দেওয়া নিয়ে বিতর্ক এড়াতে চায় দেশটি। দরকষাকষি করলেও দিনশেষে বন্দিবিনিময় চুক্তিসহ নানা কারণেই বাড়তি চাপ আসবেই এটি অনেকটা নিশ্চিত বলে মনে করছেন দেশটির কূটনৈতিক সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়া ব্যবসায়ীদের বড় একটি চাপ সৃষ্টি হয়েছে সরকারের ওপর। বিশেষত স্বাস্থ্য ও পর্যটন খাতে বাংলাদেশিদের যাতায়াত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম ধুঁকছে তারা।

জানা যায়, ফিজি, মরিশাসের সঙ্গে আলোচনায় এসেছে বেলারুশ। তবে দেশ হিসেবে ফিজিকে অগ্রাধিকার তালিকায় রাখার অন্যতম কারণ দেশটি ভারতের আস্থাভাজন। একই কারণে আলোচনায় রয়েছে মরিশাসও। দুই দেশের সঙ্গে বেলারুশ আলোচনায় থাকলেও এখন পর্যন্ত দেশটি দ্বিতীয় ধাপের তালিকায় রাখা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ওইসব দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের বন্দিবিনিময় চুক্তি রয়েছে কি না সেটিও বিবেচনা করা হচ্ছে।

তবে নিরাপদ আশ্রয়ের বিকল্প চিন্তা করলেও এসব সিদ্ধান্ত আগামী নির্বাচনের পর কার্যকর করতে চায় ভারত। এখন বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের ওপর সব জোর অব্যাহত রাখতে চায় দেশটি।

গত ১৭ নভেম্বর ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার ফাঁসির রায় ঘোষণা হওয়ার পর থেকে ভারত বেশ কিছুটা বিব্রত অবস্থায় পড়েছে। গত ২০১৩ সালে ২৩ অক্টোবর ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বন্দিবিনিময় চুক্তি হয়। এই অনুসমর্থনের দলিল হস্তান্তরের মধ্যে দিয়ে এর আওতায় দুই দেশের ফৌজদারি মামলার বিচারাধীন বা দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি বিনিময় করার সুযোগ পায়। চুক্তির ফলে দুই দেশ সাজাপ্রাপ্ত বহিঃ আসামিকে হস্তান্তরের করতে পারে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ভারত ছাড়াও বাংলাদেশ, পাকিস্তান, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, থাইল্যান্ডসহ আরও কয়েকটি দেশের সঙ্গে বন্দিবিনিময় চুক্তি করেছে। এই চুক্তির আওতায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ফিরিয়ে আনার সুযোগ আছে।

এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ভারত সরকারের কাছে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে ফেরত দেওয়ার কারণ বিশদভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

এর আগে গত ১৮ নভেম্বর বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান দিল্লিতে অনুষ্ঠিত কলম্বো সিকিউরিটি কনক্লেভ বৈঠকে যোগদানের উদ্দেশ্যে সফর করেন। মূলত এই বৈঠক ছিল সিএসসির সপ্তম জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পর্যায়ের বৈঠক। বৈঠকের এক দিন আগে তিনি সেখানে যান। এই এক দিন আগে সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎ করা। একই সঙ্গে বৈঠক করা।

দুই উপদেষ্টার মধ্যে বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে সে বিষয়ে কোনো পক্ষ মুখ না খুললেও একটি নির্ভরযোগ্য দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছেন, বৈঠকে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে কোনো আলোচনা না হলেও কিছুটা ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। তবে ভারতের অজিত দোভাল প্রায় আধাঘণ্টা বেশি সময়ে তেমন কিছু সাড়া দেননি। বরং বাংলাদেশের কিছু বিষয়ে প্রশ্ন উপস্থাপন করেছেন। এ ছাড়া তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, বাংলাদেশে যেন একটি ‘ইনক্লুসিভ’ নির্বাচন হয়।

Manual7 Ad Code

জানা গেছে, বৈঠকের কয়েক দিন পর থেকে ভারতে বিভিন্ন মহলে মৃত্যুদণ্ড সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিরাপদে রাখার বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে। আবার এই দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে ভারতে রাখা ঠিক হবে কি না এ নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। তবে শেখ হাসিনাকে সহসা বাংলাদেশে ফেরত না দেওয়ার সিদ্ধান্তে অটল ভারত সরকার। আবার এ ধরনের আসামিকে বেশি দিন রাখা ঠিক হবে কি না, এ নিয়ে তাদের আলোচনা হচ্ছে। এই আলোচনা থেকে শেখ হাসিনাকে দেশের বাইরে পাঠানোর চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন তিব্বতের দালাইলামার ভারতে আশ্রয় নিয়ে। কিন্তু শেখ হাসিনার সঙ্গে দালাইলামার পার্থক্য তুলে ধরা হয়। পার্থক্য হচ্ছে শেখ হাসিনা একজন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অভিযুক্ত আসামি। কিন্তু দালাইলামা কোনো আসামি নন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সোমবার টেলিফোনে জানিয়েছেন, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জোর তৎপরতা কার্যক্রম শুরু করা হবে শেখ হাসিনাকে ফেরত আনার জন্য। ইতিমধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। প্রয়োজনে আবারও পাঠানো হবে।

জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি বলেন, এ বিষয়ে আমরা এখনও অবগত নই। তবে যদি ভারত শেখ হাসিনাকে অন্য দেশে পাঠায় তা হলে সে দেশের সঙ্গে যদি বন্দিবিনিময় প্রত্যর্পণ চুক্তি না থাকলে সেই চুক্তি করতে হবে। আমাদের পক্ষ থেকে ফেরত আনার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তো ইতিমধ্যে চিঠি দিয়েছে।

Manual4 Ad Code

গত ১৭ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জুলাই অভ্যুত্থান চলাকালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। সেই রায়ে পাঁচটি অভিযোগের মধ্যে তিনটিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড ও দুটিতে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ ছাড়া একই অপরাধে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকেও মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। আর সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

Manual4 Ad Code

জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর গত ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা ছেড়ে পালিয়ে যান। একই সঙ্গে কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের অনেক নেতা দেশ ছেড়ে চলে যান। বিশেষ করে ভারতের দিল্লির একটি অজানা স্থানে আশ্রয় পান শেখ হাসিনা।

প্রায় এক বছরের বেশি সময়ে শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থান করার ফলে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক এক ধরনের শিথিলের পর্যায়ে চলে যায়। আবার শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থানকালে বিভিন্ন সময়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে বক্তব্য ভারতের অনেকে মেনে নিতে পারছে না। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস থাইল্যান্ড সফরকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। কূটনীতিকরা মনে করেছিলেন, এই সাক্ষাতে ভারত বাংলাদেশের মধ্যে একটি সুসম্পর্ক গড়ে উঠবে। কিন্তু গত দেড় বছরে সম্পর্কের তেমন কোনো উন্নতি হয়নি।

তবে ভারত সরকার এখন মনে করছে, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক শীতল হওয়ার প্রেক্ষিতে ব্যবসা-বাণিজ্যের বেশ কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দেশটির স্বাস্থ্য খাতে এখন প্রায় ধস নেমেছে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ রোগী চিকিৎসার জন্য ভারতে যেত। এতে ভারতে স্বাস্থ্য খাতে আয় কমে গেছে। শুধু তাই নয়, ভারতের বিভিন্ন পণ্যের রফতানি অনেকাংশে কমে গেছে।

সম্প্রতি ভারতের একটি উচ্চ পর্যায়ে বৈঠকে বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ানোর ব্যাপারে কৌশল অবলম্বনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। গত এক বছরের বেশি সময়ে শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থান করার কারণে দেশটির লাভ-লোকসান, হিসাব-নিকাশ শুরু হয়েছে বলে দায়িত্বশীল একটি সূত্রে জানা গেছে।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual5 Ad Code