# লটারিতে ৬৪ জেলায় নতুন এসপি
#১৬৬ ইউএনও প্রশাসনের তরুণ কর্মকর্তাদের মধ্যে উদ্বেগ
প্রজন্ম ডেস্ক:
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এই নির্বাচন সামনে রেখে মাঠ প্রশাসন সাজানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে লটারির মাধ্যমে দেশের ৬৪টি জেলায় নতুন পুলিশ সুপার (এসপি) এবং ১৬৬ জন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) পদায়ন করা হয়েছে। শিগগিরই বাকি উপজেলায় একই কায়দায় নতুন ইউএনও পদায়ন করা হবে, যাঁরা নির্বাচনের সময় সহকারী রিটার্নিং অফিসারের (এআরও) দায়িত্ব পালন করবেন।
এর আগে গত সপ্তাহে দেশের অন্তত ৫১টি জেলায় নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদায়ন করা হয়েছে, যাঁদের আগামী জাতীয় নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করার কথা রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের নবীন ও তরুণ কর্মকর্তাদের মধ্যে এক ধরনের উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। তাঁদের কেউ কেউ বলছেন, নির্বাচনের পর এসব কর্মকর্তাকে পরবর্তী সরকার কিভাবে মূল্যায়ন করবে সেটাই ভয়ের ব্যাপার। কারণ বিগত তিন নির্বাচনে দায়িত্বপালনকারী রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারদের অনেককে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে।
কাউকে কাউকে ওএসডি করা হয়েছে বা কম গুরুত্বের জায়গায় পদায়ন করা হয়েছে।
জানা গেছে, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন করতে লটারির মাধ্যমে মাঠপ্রশাসনে ডিসি-এসপি, ইউএনও এবং থানার ওসি পদায়নের সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী মঙ্গলবার লটারির মাধ্যমে দেশের ৬৪ জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) পদায়ন করা হয়েছে; এ নিয়ে গতকাল বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এর আগে গত সোমবার প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় লটারি করে এসপি নির্বাচন করা হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ৫১ জন বর্তমানে বিভিন্ন জেলায় এসপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ১৩টি জেলার এসপিকে সরিয়ে নতুন এসপি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ৬৪ জেলার মধ্যে আগে থেকে চার নারী কর্মকর্তা এসপি ছিলেন। লটারিতে তাঁদেরও জেলা বদল হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে, এই সিদ্ধান্ত তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হবে।
দ্রুতই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিয়োগও লটারির ভিত্তিতে করা হবে বলে জানা গেছে। সৎ, নিরপেক্ষ ও যোগ্য ইন্সপেক্টরদের তালিকা এরই মধ্যে ইউনিট প্রধানদের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছে পুলিশ সদর দপ্তর।
গতকাল প্রথম ধাপে ১৬৬ উপজেলায় সিনিয়র সহকারী সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের নতুন ইউএনও নিয়োগ দিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। আটটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এই ইউএনওদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ঢাকা বিভাগের ২৯ উপজেলায়, বরিশাল বিভাগের ২১ উপজেলায়, চট্টগ্রাম বিভাগের ২৯ উপজেলায়, খুলনা বিভাগের ২১ উপজেলায়, রংপুর বিভাগের ২৪ উপজেলায়, রাজশাহী বিভাগের ১৩ উপজেলায়, সিলেট বিভাগের ১৪ উপজেলায় এবং ময়মনসিংহ বিভাগের ১৫ উপজেলায় নতুন ইউএনও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে ন্যস্ত করা কর্মকর্তাদের তাদের নিজ অধিক্ষেত্রে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য ‘দ্য কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর, ১৮৯৮-এর সেকশন-১৪৪-এর ক্ষমতা অর্পণ করা হলো। নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তারা আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে বদলি করা কর্মস্থলে যোগদান করবেন, অন্যথায় আগামী ৩০ নভেম্বর বিকেলে বর্তমান কর্মস্থল (প্রশিক্ষণ/কর্মস্থল) থেকে তাৎক্ষণিক অবমুক্ত (স্ট্যান্ড রিলিজ) বলে গণ্য হবেন। বদলি করা কর্মকর্তার দপ্তর বা কর্মস্থল এরই মধ্যে পরিবর্তন হলে কর্মরত দপ্তরের নাম-ঠিকানা উল্লেখ করে তিনি যোগদানপত্র দাখিল করবেন বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে।
ইউএনও হিসেবে পদায়ন পাওয়া একাধিক কর্মকর্তা জানান, তারা এ নির্বাচনে মাঠ প্রশাসনে দায়িত্ব পালন করতে চান না। কারণ সরকারের ইচ্ছায় প্রশাসনের কর্মকর্তারা গত তিন জাতীয় নির্বাচনে দায়িত্বপালনকারী রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারদের অনেককে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। কাউকে কাউকে ওএসডি করা হয়েছে বা কম গুরুত্বের জায়গায় পদায়ন করা হয়েছে। যাঁরা নির্বাচনের দায়িত্বে থাকবে পরবর্তী নির্বাচিত সরকার বা ভিন্নমতের সরকার ক্ষমতায় এলে এসব কর্মকর্তার সঙ্গে কী ধরনের আচরণ করে সেটা ভেবেই তারা ভয় পাচ্ছেন। আবার চাকরি করতে হলে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সবাইকে নির্বাচনী মাঠে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
ভোটের সময় রিটার্নিং অফিসার হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন জেলা প্রশাসকরা (ডিসি)। নির্বাচনের সময় তাঁদের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করে থাকেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা। এরই মধ্যে ভোটের সময় ডিসি-ইউএনওর দায়িত্বে যাঁদের রাখা হবে, সেসব কর্মকর্তার ব্যক্তিগত তথ্য ছাড়াও তাঁদের পারিবারিক তথ্য একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। তবে একটি সূত্র বলছে, এবারের ডিসি, এসপি, ইউএনও এবং থানার ওসি নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিশেষ একটি দলের অনুসারীদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। তবে বিষয়টি নিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, অতীতে এসপি হিসেবে যাঁরা দায়িত্ব পালন করেছেন—এমন কর্মকর্তাদের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়। পুলিশ ক্যাডারের ২৪, ২৫, ২৭ ও ২৮তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে যাচাই-বাছাই করে তাদের পদায়ন করা হয়েছে।
গতকাল কৃষি মন্ত্রণালয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানান, জেলার আয়তন নয়; বরং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে তিনটি ক্যাটাগরিতে জেলা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরপর লটারি করা হয়েছে। নির্বাচনের আগে লটারির মাধ্যমেই বিভিন্ন থানার ওসি পদে রদবদল করা হবে বলেও এ সময় জানান তিনি।
৩৩ জনের ডিআইজি পদে পদোন্নতি : পুলিশের ৩৩ কর্মকর্তাকে উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। গতকাল এসংক্রান্ত দুটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। একটি প্রজ্ঞাপনে ৩১ জনকে এবং আরেকটিতে দুজনকে পদোন্নতি দেওয়ার তথ্য জানানো হয়।
নারী এসপি যেসব জেলায় : ৬৪ জেলার মধ্যে হবিগঞ্জ, শরীয়তপুর, জয়পুরহাট ও বরিশাল এই চারটি জেলা পেয়েছে নারী কর্মকর্তা। এর মধ্যে মানিকগঞ্জের এসপি মোছা. ইয়াছমিন খাতুনকে হবিগঞ্জে, যশোরের এসপি রওনক জাহানকে শরীয়তপুরে, মাগুরার এসপি মিনা মাহমুদাকে জয়পুরহাটে এবং রাজশাহীর এসপি ফারজানা ইসলামকে বরিশাল জেলায় পদায়ন করা হয়েছে।
৬৪ জেলার নতুন এসপি : কুমিল্লার পুলিশ সুপার হলেন মো. আনিসুজ্জামান, কুষ্টিয়ায় মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন, টাঙ্গাইলে মুহম্মদ শামসুল আলম সরকার, জামালপুরে ড. চৌধুরী মো. যাবের সাদেক, মুন্সীগঞ্জে মো. মেনহাজুল আলম, হবিগঞ্জে মোছা. ইয়াছমিন খাতুন, ময়মনসিংহে মো. মিজানুর রহমান, রংপুরে মো. মারুফাত হোসাইন, বগুড়ায় মো. শাহাদাত হোসেন, ফরিদপুরে মো. নজরুল ইসলাম, শেরপুরে মো. কামরুল ইসলাম, রাজশাহীতে মোহাম্মদ নাঈমুল হাছান, বাগেরহাটে মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী, নারায়ণগঞ্জে মোহাম্মদ মিজানুর রহমান মুন্সি, খাগড়াছড়িতে মির্জা সায়েম মাহমুদ, যশোরে সৈয়দ রফিকুল ইসলাম, চাদপুরে মো. রবিউল হাসান, সিরাজগঞ্জে মো. সাইফুল ইসলাম সানতু, ফেনীতে মো. শফিকুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জে ড. এস এম ফরহাদ হোসেন, সাতক্ষীরা মো. আরেফিন জুয়েল, ভোলা মো. শহিদুল্লাহ কাওছার, নরসিংদী আবদুল্লাহ আল ফারুক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া শাহ মো. আবদুর রউফ, মাগুরা মো. হাবিবুর রহমান, চট্টগ্রাম মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খান, রাঙামাটি মুহম্মদ আব্দুর রকিব, মাদারীপুরে এহতেশামুল হক, খুলনায় মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান, ঝালকাঠিতে মো. মিজানুর রহমান, ঝিনাইদহে মো. মাহফুজ আফজাল, চাঁপাইনবাবগঞ্জে গৌতম কুমার বিশ্বাস, নোয়াখালীতে টি এম মোশাররফ হোসেন, রাজবাড়ীতে মোহাম্মদ মনজুর মোরশেদ, চুয়াডাঙ্গায় মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম, লালমনিরহাটে মো. আসাদুজ্জামান, শরিয়তপুরে রওনক জাহান, জয়পুরহাটে মিনা মাহমুদা, পঞ্চগড়ে মো. রবিউল ইসলাম, পাবনা মো. আনোয়ার জাহিদ, সুনামগঞ্জে আবু বশার মোহাম্মদ জাকির হোসেন, পিরোজপুরে মোহাম্মদ মনজুর আহমেদ সিদ্দিকী, গাজীপুরে মো. শরিফ উদ্দীন, ঠাকুরগাঁওয়ে মো. বেলাল হোসেন, বান্দরবানে মো. আবদুর রহমান, মেহেরপুরে উজ্জ্বল কুমার রায়, নড়াইলে মোহাম্মদ আল মামুন শিকদার, পটুয়াখালীতে মো. আবু ইউসুফ, বরিশালে ফারজানা ইসলাম, গাইবান্ধায় মো. জসিম উদ্দীন, কুড়িগ্রামে খন্দকার ফজলে রাব্বি, নওগাঁয় মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম, দিনাজপুরে মো. জেদান আল মুসা, নাটোরে মুহম্মদ আবদুল ওয়াহাব, গোপালগঞ্জে মো. হাবীবুল্লাহ, কক্সবাজারে এ এন এম সাজেদুর রহমান, সিলেটে কাজী আখতার উল আলম, ঢাকায় মিজানুর রহমান, নীলফামারীতে শেখ জাহিদুল ইসলাম, লক্ষ্মীপুরে মো. আবু তারেক, মানিকগঞ্জে মোহাম্মদ সারওয়ার আলম, মৌলভীবাজারে মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন, বরগুনায় মো. কুদরত ই খুদা, নেত্রকোনায় মো. তরিকুল ইসলাম।
Sharing is caring!