প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

৭ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২২শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৬ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

দুদকের ২০ বছর: কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না কর্মকর্তারা

editor
প্রকাশিত নভেম্বর ২২, ২০২৪, ০৮:৪৫ পূর্বাহ্ণ
দুদকের ২০ বছর: কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না কর্মকর্তারা

Manual6 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

 

আইন ও বিধিমালা সংশোধন, সংযোজন, পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের মাধ্যমে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) আরও কার্যকর ও যুগোপযোগী করা জরুরি বলে মনে করেন দুদক কর্মকর্তারা। অবশ্য এরইমধ্যে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর দুদককে কার্যকর করতে সংস্কার কমিশনও গঠন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।

Manual1 Ad Code

দুর্নীতিবিরোধী রাষ্ট্রীয় এই সংস্থাটিকে সংস্কারে সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান ও কমিশনারসহ দুদকের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠকও করেছে সংস্কার কমিশন। কিন্তু চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের অনুপস্থিতিতে বর্তমানে মামলার অনুমোদন, দায়ের ও চার্জশিটসহ বিভিন্ন বিষয়ে কিংবা জরুরি প্রয়োজনে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়ে আইনে কিছু উল্লেখ নেই। ফলে গত ২৯ অক্টোবর দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ এবং কমিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হক ও কমিশনার (অনুসন্ধান) আছিয়া খাতুন পদত্যাগের পর থেকে সংস্থাটির কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা বিরাজ করছে।

একইসঙ্গে দুর্নীতিবাজরাও এই অন্তর্বর্তী সময়ের সুযোগ নিচ্ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে দুদক প্রতিষ্ঠার ২০ বছর পূর্ণ হলেও বার্ষিকী পালনে কোনও তোড়জোড় নেই দুদকের।

 

আইনে যা বলা হয়েছে

 

কমিশনারদের নিয়োগ ও মেয়াদ নিয়ে আইনে বলা হয়, কমিশনাররা রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ধারা-৭ অনুযায়ী গঠিত বাছাই কমিটির সুপারিশক্রমে নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন। কমিশনাররা পূর্ণকালীন সময়ের জন্য স্ব-স্ব পদে কর্মরত থাকবেন। কমিশনাররা ধারা ১০-এর বিধান সাপেক্ষে তাদের যোগদানের তারিখ থেকে পাঁচ বছর মেয়াদের জন্য স্ব-স্ব পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন। এই মেয়াদ অতিবাহিত হওয়ার পর কমিশনাররা পুনঃনিয়োগের যোগ্য হবেন না।

Manual3 Ad Code

 

বাছাই কমিটি সম্পর্কে আইনে বলা হয়েছে, কমিশনার পদে নিয়োগের জন্য সুপারিশ প্রদানের উদ্দেশ্যে পাঁচ জন সদস্যের সমন্বয়ে একটি বাছাই কমিটি গঠিত হবে। এতে প্রধান বিচারপতি মনোনীত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারক ও সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারক, বাংলাদেশের মহাহিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান এবং অবসরপ্রাপ্ত মন্ত্রিপরিষদ সচিবদের মধ্যে সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে সদস্য করতে বলা আছে। প্রধান বিচারপতি মনোনীত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারক বাছাই কমিটির সভাপতি হবেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বাছাই কমিটির কার্য-সম্পাদনে প্রয়োজনীয় সাচিবিক সহায়তা প্রদান করবেন।

Manual3 Ad Code

 

Manual8 Ad Code

বাছাই কমিটি কমিশনার নিয়োগে সুপারিশ প্রদানের উদ্দেশ্যে উপস্থিত সদস্যদের অন্যূন তিন জনের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে কমিশনারের প্রতিটি শূন্য পদের বিপরীতে দুই জন ব্যক্তির নামের তালিকা প্রণয়ন করে ধারা-৬-এর অধীন নিয়োগ প্রদানের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাবেন। অন্যূন চার জন সদস্যের উপস্থিতিতে বাছাই কমিটির কোরাম গঠিত হবে।

কমিশনার নিয়োগে বাছাই কমিটি গঠনের আইনি বাধ্যবাধকতা থাকায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ও কমিশনার নিয়োগের জন্য গত ১০ নভেম্বর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে বাছাই কমিটি গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। কমিটির সভাপতি করা হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. রেজাউল হককে।

কমিশনার পদে সাময়িক শূন্যতার বিষয়ে আইনের একটি ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনও কমিশনার মৃত্যুবরণ বা স্বীয় পদ ত্যাগ করলে বা অপসারিত হলে, রাষ্ট্রপতি ওই পদ শূন্য হবার ৩০ দিনের মধ্যে এই আইনের বিধান সাপেক্ষে, কোনও উপযুক্ত ব্যক্তিকে শূন্য পদে নিয়োগদান করবেন। তবে পুরো কমিশন শূন্য হলে কতদিনের মধ্যে বাছাই কমিটি গঠন করতে হবে, কতদিনের মধ্যে বাছাই কমিটি রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবেন, সে বিষয়ে আইনে কোনও কিছু বলা নেই।

দুদক কর্মকর্তারা মনে করেন, এ বিষয়ে আইনে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ থাকা প্রয়োজন। যখন কমিশন শূন্য থাকে, তখন সচিব কিংবা দুদকের মহাপরিচালক (ডিজি) পর্যায়ের কর্মকর্তারা যাতে অন্তর্বর্তী সময়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন—সেটা আইনে উল্লেখ থাকা প্রয়োজন। দুদককে ঢেলে সাজানোর জন্য সংস্কার কমিশনকে বেশ কিছু প্রস্তাবও দিয়েছেন তারা। এর মধ্যে রয়েছে কমিশন গঠনে স্বচ্ছতা, নিজস্ব স্থায়ী প্রসিকিউশন ইউনিট, আইন ও বিধির বিতর্কিত ধারা সংশোধন, যুগোপযোগী, আধুনিকায়নসহ দুদকের অন্যান্য সক্ষমতা বাড়ানো। তারা মনে করেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে যদি সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনা অনুযায়ী দুদককে সংস্কার করা না যায়, তাহলে ‘স্বাধীন সংস্থা’ হিসেবে দুদক কখনও জনগণের প্রত্যাশা পূরণে সক্ষম হবে না।

পুরো কমিশন শূন্য হলে অন্তর্বর্তী সময়ে জরুরি সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন বলেন, ‘এটা ঠিক যে এ ক্ষেত্রে আইনি শূন্যতা রয়েছে। কমিশন না থাকলে অন্তর্বর্তী সময়ে মামলার অনুমোদন, দায়ের ও চার্জশিট দেওয়াসহ যেসব বিষয়ে কমিশনের সিদ্ধান্তের প্রয়োজন হয়, সেসব সিদ্ধান্ত তারা নিতে পারেন না।’ তিনি বলেন, ‘কমিশনের সচিবও যদি এ সময়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেন—সেগুলো পরে আদালতে আর টিকে না।’

মো. আক্তার হোসেন আরও বলেন, ‘এরই মধ্যে দুদক সংস্কারে কমিশন গঠন করেছে সরকার। সংস্কার কমিশন কাজও শুরু করেছে। সদ্য বিদায়ী কমিশনের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এছাড়া মহাপরিচালক, পরিচালক, উপপরিচালক থেকে উপ-সহকারী পরিচালক পর্যায়ে আলাদা বৈঠক করেছে সংস্কার কমিশন।’ দুদকের আইনি দুর্বলতাগুলো নিয়ে সংস্কার কমিশনের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual7 Ad Code