প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৭ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২রা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৬শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

পোশাক রপ্তানি: ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশের কমছে, প্রতিদ্বন্দ্বীদের বাড়ছে

editor
প্রকাশিত নভেম্বর ২৫, ২০২৪, ০৩:২৪ অপরাহ্ণ
পোশাক রপ্তানি: ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশের কমছে, প্রতিদ্বন্দ্বীদের বাড়ছে

Manual2 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

 

ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক রপ্তানি নেতিবাচক ধারাতেই আছে। চলতি বছরের ৯ মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে পোশাক রপ্তানি কমেছে ২ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। ইউরোস্টেটের তথ্যমতে, এ সময় ইউরোপের বাজারগুলোতে বাংলাদেশ থেকে পোশাক রপ্তানি হয়েছে ১৪ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছর একই সময় ছিল ১৪ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলার।

ডলারের মূল্যবৃদ্ধিতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া, রাজনৈতিক অস্থিরতায় বাড়তি লিড টাইম, গ্যাস-বিদ্যুতের ঘাটতি, দুর্বল ব্যাংকিং ব্যবস্থা, বিশ্বব্যাপী উচ্চ মূল্যস্ফীতিসহ বেশ কিছু কারণ রপ্তানিতে পিছিয়ে পড়ার জন্য দায়ী বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক ও ডেনিম এক্সপার্ট লিমিটেডের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দীন রোবেল বলেন, ‘উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে গত বছরের তুলনায় ইউরোপের দেশগুলো পোশাক আমদানি কমিয়েছে। এতে আমাদেরও কমেছে। তারপরও যদি ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, গ্যাস-বিদ্যুতের সমস্যা, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও শ্রমিক অসন্তোষ না থাকত, আমরা প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পারতাম।’

মহিউদ্দীন রোবেল আরও বলেন, সর্বশেষ গত সেপ্টেম্বরে রপ্তানি কিছুটা বেড়েছে, এতে রপ্তানির প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক ধারা থেকে ইতিবাচক ধারায় ফিরতে শুরু করেছে। দেশের সার্বিক অবস্থা ভালো করতে পারলে আশা করা যায়, আগামী দু-তিন মাসে রপ্তানিতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হবে।

ইউরোপের বাজারে তৈরি পোশাকের বড় রপ্তানিকারক ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একমাত্র ইন্দোনেশিয়া ও তুরস্কের চেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে। বাকি ৭ দেশের তুলনায় প্রবৃদ্ধিতে পিছিয়ে বাংলাদেশ। অথচ বাংলাদেশ ইউরোপের বাজারে দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক সরবরাহকারী দেশ।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো এ বছরের ৯ মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) মোট ৬৮ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলারের পোশাক আমদানি করেছে, আগের বছরের চেয়ে তাদের আমদানি কমেছে ২ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এখাতে তাদের আমদানি ছিল ৬৯ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার।

Manual4 Ad Code

তথ্য বলছে, জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নে পোশাক রপ্তানিতে শীর্ষ দেশ ছিল চীন। এ সময়ে দেশটি থেকে রপ্তানি ১ দশমিক ৬৪ শতাংশ কমে ১৮ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা গত বছর একই সময় ছিল ১৯ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলার। আগস্ট পর্যন্ত তাদের রপ্তানি কম ছিল ৪ দশমিক ১০ শতাংশ। তুরস্ক ৭ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে এবং তাদের রপ্তানি কমেছে ৬ দশমিক ৭৬ শতাংশ। গত বছর তাদের রপ্তানি আয় ছিল ৮ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার। আগস্ট পর্যন্ত তাদের রপ্তানি কম ছিল ৭ দশমিক ৫২ শতাংশ। ভারতের রপ্তানি শূন্য দশমিক ৬৯ শতাংশ কমে ৩ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। গত বছর তাদের রপ্তানি আয় ছিল ৩ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার। আর আগস্ট পর্যন্ত তাদের রপ্তানি গত বছরের তুলনায় কম ছিল ২ দশমিক ৭৩ শতাংশ।

সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রধান রপ্তানিকারক দেশগুলো থেকে ইইউতে পোশাক রপ্তানি কমলেও কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান, মরক্কো—এই চার দেশ থেকে রপ্তানি বেড়েছে।

কম্বোডিয়া থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে ইউরোপের বাজারে রপ্তানি ১৫ দশমিক ৯৬ শতাংশ বেড়ে ২ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। গত বছর একই সময় তাদের রপ্তানি আয় ছিল ২ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার। আগস্ট পর্যন্ত তাদের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ছিল ১২ দশমিক ৭৮ শতাংশ।

ইইউর বাজারে ভিয়েতনামের পোশাক রপ্তানি আয় বেড়েছে শূন্য দশমিক ২১ শতাংশ। তাদের রপ্তানি হয়েছে ৩ দশমিক শূন্য ৮ বিলিয়ন ডলার; যা গত বছর ছিল ৩ দশমিক শূন্য ৭ বিলিয়ন ডলার।

পাকিস্তানও ভালো করেছে পোশাক রপ্তানিতে। আগস্ট পর্যন্ত তাদের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ৩২ শতাংশ। সর্বশেষ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রপ্তানি প্রবৃদ্ধি আরও বেড়ে ৮ দশমিক ৬৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ইইউর বাজারে পাকিস্তানের রপ্তানির পরিমাণ ২ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার। গত বছর একই সময় তাদের আয় ছিল ২ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন ডলার।

মরক্কো থেকেও রপ্তানি ৬ দশমিক ৮৭ শতাংশ বেড়ে ২ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে; যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ২ বিলিয়ন ডলার।

এদিকে শ্রীলঙ্কা থেকে রপ্তানি ১ দশমিক ২২ শতাংশ কমে ১ দশমিক শূন্য ২ বিলিয়ন ডলারে উঠে এসেছে। আগের বছর ছিল ১ দশমিক শূন্য ৩ বিলিয়ন ডলার। ইন্দোনেশিয়া থেকে ৮ দশমিক ৪৪ শতাংশ কমে ৭৬৫ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। গত বছর ছিল ৮৩৫ মিলিয়ন ডলার।

Manual2 Ad Code

জুলাইয়ে রাজনৈতিক উত্থান ও ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মাধ্যমে এই অস্থিতিশীলতা শুরু হয় এবং ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছিল।

এরপর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার পাশাপাশি অগ্নিসংযোগ ও চাঁদাবাজির ঘটনা স্বাভাবিক ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর প্রভাব ফেলতে থাকে।

Manual5 Ad Code

বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর থেকে শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক অসন্তোষের কারণে ৪০ কোটি ডলারের বেশি উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

Manual3 Ad Code

এই মন্দা কাটিয়ে উৎপাদন ও বিনিয়োগ বাড়াতে ইতিমধ্যে ব্যবসায়ীরা সরকারের কাছে সমস্যাগুলো তুলে ধরেছেন। শনিবার ব্যবসায়ীরা রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে বাণিজ্য উপদেষ্টার কাছে উৎকণ্ঠা জানিয়ে বলেন, টেক্সটাইলে ৩০-৩৫ শতাংশ লোডশেডিং হচ্ছে। ডিজেল কিনে জেনারেটর চালিয়ে কারখানা পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। গ্যাস-সংকটের কারণে নরসিংদীর এক টেক্সটাইল মিলের মালিক তাঁর কারখানার একাংশ বন্ধ করে দিয়েছেন।

এ সময় এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, ‘যেসব কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে, সেই কারখানাগুলোর শ্রমিকেরা অন্য কারখানার গেটে এসে চাকরির জন্য ভাঙচুর করছে। আমি চাকরি দেবে কীভাবে, আমার কারখানাও তো বন্ধ হয়ে যাবে। বর্তমানে গ্যাস-বিদ্যুতের যে পরিস্থিতি, তাতে কারখানা চালাতে পারলেও আমরা সার্ভাইভ করতে পারব না।’

উল্লেখ্য, দেশ থেকে মোট ৩৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি পোশাক রপ্তানি হয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় বাজার হলো ইইউ। গত বছর (২০২৩) বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা ইইউতে মোট পোশাক রপ্তানি করেছিল ১৮ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলারের।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual6 Ad Code