প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৫ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৩০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৪শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

আতঙ্কে নির্বাচনের দায়িত্ব পালনকারীরা

editor
প্রকাশিত জানুয়ারি ২৫, ২০২৫, ১২:৪৭ অপরাহ্ণ
আতঙ্কে নির্বাচনের দায়িত্ব পালনকারীরা

Manual1 Ad Code

 

Manual5 Ad Code

প্রজন্ম ডেস্ক:

ভোটে ব্যাপক অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগে বিগত দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যাপারে তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এই তিনটি নির্বাচনের মধ্যে ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনটি ‘রাতের ভোট’ হিসেবে পরিচিতি পায়। কারণ গত বুধবার দেশের নির্বাচনি ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বিতর্কিত এই নির্বাচনে ঘটা অনিয়ম তদন্তে মাঠে নেমেছে সংস্থাটি।

 

দুদকের এই অনুসন্ধান প্রক্রিয়ার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশের পর থেকে আতঙ্কে রয়েছেন ওই নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী সাবেক সিইসি কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন, জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট সবপর্যায়ের কর্মকর্তারা। দুদকের তদন্তের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে সাবেক সিইসি নুরুল হুদাসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে ফোনে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করেও গতকাল কথা বলা সম্ভব হয়নি। তাদের বেশির ভাগই আতঙ্কে সেলফোন নাম্বার পরিবর্তন করেছেন বা ফোন বন্ধ রেখেছেন। আর কেউ কেউ ফোন রিসিভই করেননি।

 

দেশের ১২তম সিইসি কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বে ওই কমিশনটি গঠিত হয় ২০১৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি। সে সময় নির্বাচন কমিশনার ছিলেন- রফিকুল ইসলাম, মাহবুব তালুকদার, কবিতা খানম ও শাহাদাত হোসেন চৌধুরী। আর কমিশনের সচিব ছিলেন হেলালুদ্দীন আহমদ। কে এম নুরুল হুদাসহ চার কমিশনার রয়েছেন আত্মগোপনে। আর ইসির সাবেক ওই সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ রয়েছেন কারাগারে। গত বছরের ২৩ অক্টোবর চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী থানাধীন তুলাতুলী এলাকার একটি বাসা থেকে হেলালুদ্দীনকে আটক করে পুলিশ।

 

এই কমিশনের তত্ত্বাবধানে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ বিষয়ে দুদক মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন জানান, বিগত ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত ওই তিন সংসদ নির্বাচনের মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচন সম্পর্কে তারা সবচেয়ে বেশি গুরুতর অভিযোগ পেয়েছেন। অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে- দিনের ভোট রাতে করা, ব্যালট জালিয়াতি, কিছু কিছু কেন্দ্রে ৯০ শতাংশের বেশি কাউন্ট দেখানো, ব্যাপক আর্থিক লেনদেন, ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রার্থীকে জেতাতে নেতৃত্ব দেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার নির্দেশেই কাজ করে দলটির ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে জেলা প্রশাসক, রিটার্নিং কর্মকর্তা, র‌্যাব-পুলিশ। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা-কর্মীরাও জড়িত ছিলেন অনৈতিক কার্যক্রমে। তাদের এই কাজ সম্পন্ন করতে সহায়তা করেছিলেন তৎকালীন প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা তারেক আহমেদ সিদ্দিক, জনপ্রশাসন উপদেষ্টা এইচ টি ইমামসহ বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা। আর পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন- সাবেক আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারী, ডিএমপির সাবেক কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া, র‍্যাবের সাবেক প্রধান বেনজীর আহমেদ, সাবেক আইজিপি শহিদুল হক।

 

দুদকের তথ্যমতে অভিযুক্তরা এ সবই করেছেন অর্থের বিনিময়ে। দুদক মহাপরিচালক আরও জানান, একাদশ সংসদ নির্বাচন কার্যক্রম পরিচালনার সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য পাঁচ সদস্যের টিম গঠন করা হয়েছে। তারা অভিযোগের বিষয়ে বিভিন্ন ভিডিও, দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে প্রচারিত প্রতিবেদন, নির্বাচনের ফলাফল শিট পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রতিবেদন দাখিল করবে।

Manual6 Ad Code

 

Manual8 Ad Code

একাদশ সংসদ নির্বাচনে অনিয়মের দায়ে অভিযুক্ত সে সময় দায়িত্ব পালনকারী ৬৪ জেলায় দায়িত্বে থাকা ৬৫ রিটার্নিং কর্মকর্তাদের (জেলা প্রশাসক) কর্মস্থল বদল হলেও প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদেই বহাল আছেন। এ ছাড়া সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিলেন ৪৯৪টি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তারা। এ ছাড়া ইসির ৬৭ রিটার্নিং ও ৫১২ সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুয়ায়ী, ওই নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী অল্পসংখ্যক কর্মকর্তা অবসরে গেলেও বেশির ভাগ কর্মকর্তাই চাকরিতে এখনো বহাল, শুধু তাদের কর্মস্থল বদল হয়েছে।

 

একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, একাদশ সংসদ নির্বাচনে সবচেয়ে অবিশ্বাস্য ফলাফল ছিল বরিশাল-১ আসনে। সেখানে শেখ হাসিনার ফুফাত ভাই আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর ২ লাখ ৫ হাজার ৫০২ ভোটের বিপরীতে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির জহিরউদ্দিন স্বপন পান ১ হাজার ৩০৫ ভোট। সে সময় বরিশালের জেলা প্রশাসক তথা রিটার্নিং কর্মকর্তা ছিলেন আজিয়র রহমান। জেলার ভোটের ফলাফলে তিনি পাঁচ আসনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট প্রার্থীদের জয়ী ঘোষণা করেন। এসব প্রার্থী ৯৩ থেকে ৯৯ শতাংশ ভোট পান। ভোটের পর অন্য সব রিটার্নিং কর্মকর্তার মতো আজিয়র রহমানও আওয়ামী লীগ আমলে পদোন্নতি পান। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তাকে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে বাংলাদেশ রাবার বোর্ডের পরিচালক হিসেবে পদায়ন করা হলেও বোর্ডের তালিকার এখনো তার নাম উঠেনি।

Manual8 Ad Code

 

ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়- পুলিশ কমিশনার, ডিআইজি, পুলিশ সুপার ও থানার ওসিরা পছন্দের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে ভোটের আগের রাতেই ‘ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং’-এ নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। অনিয়মের জন্য সবচেয়ে দায়ী করা হয় পুলিশকে। পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কারও কথা শুনত না। ২০১৮ সালের নির্বাচন ‘সফলভাবে’ সম্পন্ন করায় ৬৪ জেলার এসপি সেবার পুলিশ পদক পেয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের একজন প্রার্থী রিটার্নিং, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা, এসপিকে ৫০ লাখ টাকা করে উপঢৌকন দিয়েছিলেন। ওসি নিয়েছিলেন ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা। প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা দিতে হয়েছিল। ভোট কেন্দ্রের পুলিশ কনস্টেবলদেরও ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়।

 

এর আগে চলতি মাসের শুরুতে বিতর্কিত ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ সব নির্বাচনের অনিয়ম ও ত্রুটি চিহ্নিত করতে মাঠে নেমেছে সিইসি এএমএম নাসির উদ্দিন নেতৃত্বাধীন কমিশন। গত ৪ জানুয়ারি নির্বাচন কমিশনের কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। পরে ওই সব নির্বাচনে ঘটা সব ধরনের অনিয়ম ও ত্রুটি চিহ্নিতকরণ এবং কী কারণে নির্বাচন ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা প্রতিবেদন আকারে পাঠাতে দেশের ১০ আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয় সংস্থাটি।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual7 Ad Code