প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৭ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২রা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৬শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

খাদ্য কবে নিরাপদ হবে?

editor
প্রকাশিত ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২৫, ১০:৪২ পূর্বাহ্ণ
খাদ্য কবে নিরাপদ হবে?

Manual7 Ad Code

প্রজন্ম ডেস্ক:

Manual6 Ad Code

নিরাপদ খাদ্য মানুষের মৌলিক অধিকার। আমাদের দেশে মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা অনেকটা নিশ্চিত হলেও পুরোপুরি নিরাপদ খাদ্য প্রাপ্তি এখনো দুরাশা। গত পাঁচ অর্থবছরের পরিসংখ্যান বলছে, দেশে অনিরাপদ খাদ্য ক্রমে বাড়ছে। সরকারের কিছু উদ্যোগ থাকলেও স্বাস্থ্যঝুঁকি মুক্ত খাবার তাতে নিশ্চিত হচ্ছে না।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার এক প্রতিবেদন বলছে, মানুষের তৈরি দুর্যোগ ও প্রাকৃতিক কারণে সারা বিশ্বে মানুষ খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টির অভাবে ভুগছে। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গেও খাদ্য নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট। কেমিক্যাল ঝুঁকি, জৈবিক ও শারীরিক মাধ্যমে খাদ্য দূষণ হচ্ছে। এ অনিরাপদ খাবার খাওয়ার ফলে বিভিন্ন ধরনের রোগ হয়। সারা বিশ্বে ৬০ কোটি মানুষ অনিরাপদ খাদ্যের মাধ্যমে রোগাক্রান্ত হচ্ছে।

বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তার মধ্যে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর একটি বাংলাদেশ। আইসিডিডিআরবির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ অনিরাপদ খাদ্য গ্রহণের ফলে ক্যানসার থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। অনিরাপদ খাদ্য গ্রহণের ফলে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। প্রতিটি মানুষেরই নিরাপদ খাদ্য পাওয়ার অধিকার রয়েছে।

 

 

দিবসটি পালন করছে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ)। এ সংস্থাটি আইন অনুযায়ী জনগণের নিরাপদ খাদ্যের অধিকার নিশ্চিত করতে ২০১৫ সালে গঠিত হয়। উৎপাদন থেকে শুরু করে প্রক্রিয়াজাতকরণ, বাজারজাতকরণ ও সংরক্ষণ- প্রতিটি ক্ষেত্রে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এ সংস্থার কাজ।

আবার এ সংস্থার প্রতিবেদনই বলছে, দেশে দিন দিন অনিরাপদ খাদ্যের সংখ্যা বাড়ছে। বিগত পাঁচ বছরে দেশে যত সংখ্যক খাদ্যের নমুনা পরীক্ষা করেছে বিএফএসএ, এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অনিরাপদ খাদ্য মিলেছে গত অর্থবছরে (২০২৩-২৪)।

Manual3 Ad Code

তথ্য বলছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এক হাজার ৭৩১টি খাবারের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করেছিল বিএফএসএ। ওই সময় অনিরাপদ খাদ্য শনাক্ত হয় ১৯৬টি, যা মোট নমুনার ১১ শতাংশ। গত অর্থবছর এটা বেড়ে হয় ১৫ শতাংশ। ওই সময় এক হাজার ৩৮১টি নমুনা পরীক্ষা করে অনিরাপদ খাদ্য মেলে ২১৬টি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে নমুনা সংগ্রহ করা হয় এক হাজার ৭০টি, আদর্শমান উত্তীর্ণ হতে পারেনি ৯১টি, যা ৯ শতাংশ। ২০২০-২১ অর্থবছরে সর্বাধিক দুই হাজার ৩৫৪টি নমুনা সংগ্রহ করার বিপরীতে অনিরাপদ বিবেচিত হয় ২৬৮টি, যা ছিল ১১ শতাংশ।

 

খাদ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সবচেয়ে বেশি ভেজাল পাওয়া পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে মধু, ঘি, প্রক্রিয়াজাত পণ্য, গুড়, রুটি, পাউরুটি, মিষ্টি ও মিষ্টজাত পণ্য প্রভৃতি।

 

৬০ শতাংশ শাক-সবজিতে অতিরিক্ত কীটনাশক

নিরাপদ খাদ্য নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা ওয়েল্ট হাঙ্গার হিলফের তথ্য বলছে, ভেজাল ও দূষিত খাদ্য মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি ক্রমেই বাড়িয়ে তুলছে। দেশের প্রায় ৪০ শতাংশ খাদ্যে ভেজাল রয়েছে। এই ভেজাল খাদ্য ৩৩ শতাংশ বয়স্ক মানুষ ও ৪০ শতাংশ শিশুর অসুস্থতার কারণ।

 

সংস্থাটির এক নিবন্ধ বলছে, বাজারের ৬০ শতাংশ শাক-সবজিতে অতিরিক্ত কীটনাশক ও ৬৭ শতাংশ বোতলজাত সয়াবিন তেলে ট্রান্সফ্যাট এবং অধিকাংশ জেলার মাটিতে প্রয়োজনীয় জৈব উপাদানের অভাবের কারণে নিরাপদ ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে।

এ পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞরা বলছে, বাংলাদেশে নীতিনির্ধারক, কৃষক ও বিক্রেতা পর্যায়ে নিরাপদ খাদ্যের ব্যাপারে ন্যূনতম কোনো সচেতনতা এবং অনেক ক্ষেত্রেই স্বচ্ছতা নেই। ফলে কৃষিপণ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে বিপণনের নানা স্তরে খাবারকে রাসায়নিক ও বিষাক্ত উপাদান থেকে নিরাপদ রাখার কোনো ব্যবস্থাই গড়ে ওঠেনি। এ কারণে জনস্বাস্থ্যের ওপর এর প্রভাব পড়ছে মারাত্মক ও সুদূরপ্রসারী।

 

তারা আরও বলছেন, খাদ্য নিরাপত্তায় সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা কাজ করলেও তাদের মধ্যে সমন্বয় নেই। এ পরিস্থিতি উত্তরণে সংস্থাগুলোর সমন্বয় এবং খাদ্য নিরাপত্তা আইনের আলোকে সঠিক কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা দরকার।

খাদ্য উৎপাদনেই গলদ

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক (ক্রপস উইং) শওকত ওসমান বলেন, ‘খাদ্যের নিরাপত্তার বিষয়টি মানুষ বুঝতে শিখেছে। কিন্তু নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার বিষয়ে বাংলাদেশ এখনো একটু পিছিয়ে আছে। সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয়, শস্য উৎপাদনের ক্ষেত্রেই এখন নিরাপদতা নেই, যা দুঃখজনক। আবার অনেক ক্ষেত্রে কৃষকদের সচেতনতা ও অজ্ঞতার কারণে খাদ্য অনিরাপদ হচ্ছে। কৃষকেরা ভুলবশত বেশি পরিমাণে কীটনাশক ও গ্রোথ হরমোন ব্যবহার করছে। কিছু অসৎ ব্যবসায়ী এ সুযোগটা নিচ্ছে।’

পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. আলী আব্বাস মোহাম্মদ খোরশেদ বলেন, ‘নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে উৎপাদক ও ভোক্তা উভয়ের কিছু দায়িত্ব রয়েছে। অজ্ঞতা ও সচেতনতার কারণে যেমন কৃষকদের কাছে খাদ্য নিরাপদ থাকছে না, তেমনি কেনার পর খাবার খাওয়ার আগ পর্যন্ত খাদ্য নিরাপদ রাখার দায়িত্ব ভোক্তার, সেখানেও কিন্তু খাবার অনিরাপদ হচ্ছে। তাই এখানে উৎপাদক, বিপণনকর্মী ভোক্তাসহ সব অংশীদারের দায়িত্ব নিতে হবে।’

Manual4 Ad Code

 

অনিরাপদ খাদ্যের বড় উৎস হোটেল-রেস্তোরাঁ-ফুটপাত

এদিকে উৎপাদন ও ভোক্তাদের বাসাবাড়িতে শুধু নয়, দেশে অনিরাপদ খাদ্যের এক বড় উৎস হয়ে উঠছে হোটেল-রেস্তোরাঁ ও রাস্তাঘাট-ফুটপাতের খোলা খাবার। কারণ শহরকেন্দ্রিক অনেক মানুষ এখন রেস্তোরাঁর খাবারের ওপর নির্ভর করতে বাধ্য হচ্ছে। এর মধ্যে উচ্চমূল্যের কারণে নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা ভিড় জমাচ্ছেন রাস্তাঘাটের খোলা খাবারে। তবে ফুটপাত, ফুডকোর্টসহ রেস্তোরাঁগুলো এখন পর্যন্ত নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা দিতে পারছে না। পচা-বাসি কিংবা নিম্নমানের খাবারের কারণে নিয়মিত খাদ্য গ্রহণকারী মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। সেসব তত্ত্বাবধায়নেও বিএফএসএ খুব বেশি কার্যক্রম দেখাতে পারেনি।

Manual7 Ad Code

 

যা বলছেন বিএফএসএ চেয়ারম্যান

এসব বিষয়ে বিএফএসএ চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) জাকারিয়া বলেন, ‘নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা যত বড় কাজ, সে তুলনায় আমাদের যাত্রা খুব অল্প সময়ের। এ সংস্থার জনবল ও ল্যাবের ঘাটতি রয়েছে। যেখানে দেশের খাদ্য স্থাপনা দ্রুত বাড়ছে। তবে আমরা জাইকার সহায়তায় প্রতিটি বিভাগীয় পর্যায়ে অ্যাক্রিডিটেড ল্যাব স্থাপন করছি। শিগগির এ কাজ শুরু হবে। তখন আমরা প্রচুর খাদ্য পরীক্ষা করতে পারবো। এছাড়া আমরা ভ্রাম্যমাণ কিছু ল্যাব চালু করছি।’

জনবল বাড়ানোর প্রস্তাব প্রক্রিয়াধীন বলে জানান তিনি। আরও বলেন, ‘আইন ও বিধিমালা নতুন করে সংস্কার করছি। সেগুলো বৈশ্বিক মানের সঙ্গে সমন্বয় করে করছি।’

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual3 Ad Code