প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৭ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২রা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৬শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে

editor
প্রকাশিত ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৫, ১০:০৯ পূর্বাহ্ণ
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে

Manual4 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

মায়ানমার সরকারের গণহত্যা ও নির্যাতনে দেশটির রাখাইন রাজ্য থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে একটি কার্যকর উপায় খুঁজতে আগামী মার্চেই ঢাকায় আসছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। ঢাকা সফরকালে জাতিসংঘ মহাসচিব রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন এবং সংকট সমাধানের একটি রূপরেখা তৈরির বিষয়ে সম্যক ধারণা নেবেন বলে কূটনৈতিক সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে।

সূত্র জানায়, মহাসচিবের এই সফরকে সফল করতে আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি দুই দিনের সফরে বাংলাদেশে আসছেন মায়ানমারে জাতিসংঘের বিশেষ দূত জুলি বিশপ। তিনিও যাবেন রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে। এর পরপরই আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি তিন দিনের সফরে সুইজারল্যান্ডের জেনেভা থেকে বাংলাদেশে আসবেন জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনের (ইউএনএইচসিআর) প্রধান হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডি। তিনিও রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যাবেন। জাতিসংঘ মহাসচিবের ঢাকায় আসার আগ পর্যন্ত আরও কয়েকটি প্রতিনিধিদলের ঢাকায় আসার কথা রয়েছে।

সূত্র আরও জানায়, মায়ানমার সরকারের গণহত্যা ও অত্যাচারে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলের সহায়তা চেয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে রাখাইনে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে একটি ‘সেফ জোন’ প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক মহলের সমর্থন চান। এ নিয়ে জাতিসংঘের উদ্যোগে যত দ্রুত সম্ভব রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়ে সব স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের প্রস্তাবও দেন গত জাতিসংঘ অধিবেশনে। প্রধান উপদেষ্টার এই প্রস্তাব জাতিসংঘ অধিবেশনে পাসও হয়।

Manual8 Ad Code

এদিকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এ বিষয়ে একজন উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি হিসেবে রাষ্ট্রদূত ড. খলিলুর রহমানকে নিয়োগ দেন। এর আগে তিনি জাতিসংঘের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত ছিলেন। জাতিসংঘের উদ্যোগে রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে আন্তর্জাতিক সম্মেলনের একটি সফল আয়োজন করতে ড. খলিলুর রহমান কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। এই সম্মেলন থেকেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের চূড়ান্ত রূপরেখা তৈরি হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র খবরের কাগজকে জানান। ইতোমধ্যে এই সম্মেলনের ভেন্যু হিসেবে কাতারের দোহা বা নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরকে প্রাথমিকভাবে ভাবা হচ্ছে।

Manual3 Ad Code

মায়ানমারের রাখাইনে একটি ‘সেফ জোন’ প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছেন ড. খলিলুর রহমান। রাখাইন এখন মায়ানমার জান্তা সরকারের নিয়ন্ত্রণে না থাকায় ‘সেফ জোন’ প্রতিষ্ঠা অনেকটা সহজ হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কারণ রাখাইনের নিয়ন্ত্রণ এখন জাতিগোষ্ঠী আরাকান আর্মির হাতে। যদিও রোহিঙ্গাদের নির্যাতন করে বাংলাদেশের দিকে ঠেলে দেওয়ার ক্ষেত্রে আরাকান আর্মির সমর্থন ছিল। এরপরও আরাকান আর্মিকে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ করে দেওয়ার শর্তে রোহিঙ্গাদের জন্য ‘সেফ জোন’ প্রতিষ্ঠা করা জাতিসংঘের জন্য সহজ হবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট কূটনৈতিক সূত্রগুলো।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, আগামী মাসে জাতিসংঘের মহাসচিবের ঢাকা সফর নিশ্চিত হয়েছে, তবে দিনক্ষণ নিয়ে আলোচনা চলছে। ঢাকা সফরকালে জাতিসংঘ মহাসচিব প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের বিষয়ে বৈঠক করবেন। এ ছাড়া তিনি কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে যাবেন। সেখানে কর্মরত বিভিন্ন এনজিও প্রতিষ্ঠান, রোহিঙ্গা নেতা ও নিরাপত্তাসহ দায়িত্বে থাকা সব পক্ষের মতামত জানবেন। জাতিসংঘের উদ্যোগে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ত্বরান্বিত করতে সব পক্ষের মতামত নেবেন অ্যান্তোনিও গুতেরেস।

Manual4 Ad Code

গত সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার বক্তৃতায় রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে জোরালো পদক্ষেপের জন্য আহ্বান জানান। এ ছাড়া অধিবেশনের পাশাপাশি মায়ানমারে জাতিসংঘের বিশেষ দূত জুলি বিশপ এবং জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনের (ইউএনএইচসিআর) প্রধান হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডির সঙ্গে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বৈঠক করেন। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা রোহিঙ্গা জনগণের মর্যাদা ও নিরাপত্তা এবং অধিকার সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে সব স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে কাজ করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের পূর্ণ অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা এই সংকটের রাজনৈতিক সমাধানের অপেক্ষায় আছি।’ তিনি বলেন, ‘অত্যন্ত সহানুভূতির সঙ্গে রোহিঙ্গাদের আতিথেয়তা সত্ত্বেও একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত ব্যয়ের ক্ষেত্রে এত বেশি খরচ হয়ে চলেছে। এগুলো আমাদের জন্য প্রথাগত ও অপ্রথাগত নিরাপত্তাঝুঁকি। আমাদের নিজস্ব উন্নয়ন অনেকটাই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। স্পষ্টতই বাংলাদেশ তার ধৈর্যসীমায় পৌঁছেছে।’

উল্লেখ্য, মায়ানমারের জান্তা বাহিনীর দমন-পীড়নে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। চীনের মধ্যস্থতায় মায়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় প্রত্যাবাসন নিয়ে গত সাত বছরে কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় বর্তমান সরকার বিষয়টি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্যোগে সংকট সমাধানের উদ্যোগ নেয়। গত দুই মাসে এই উদ্যোগ অনেক এগিয়েছে বলে প্রধান উপদেষ্টার সূত্র জানায়।

Manual7 Ad Code

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual5 Ad Code