প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

২০শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৫ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৯শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

শুধু রণাঙ্গনের যোদ্ধারাই মুক্তিযোদ্ধা, বাকিরা সহযোগী

editor
প্রকাশিত ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৫, ১০:০৪ পূর্বাহ্ণ
শুধু রণাঙ্গনের যোদ্ধারাই মুক্তিযোদ্ধা, বাকিরা সহযোগী

Manual1 Ad Code

 

Manual8 Ad Code

প্রজন্ম ডেস্ক:

১৯৭১ সালে যারা রণাঙ্গনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধ করেছেন তারাই কেবল ‘মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে মর্যাদা পাবেন। অন্যান্য যারা দেশ-বিদেশ থেকে স্বাধীনতার অর্জনকে ত্বরান্বিত করার প্রয়াসে সংগঠকের ভূমিকা পালন, বিশ্ব জনমত গঠন এবং কূটনৈতিক সমর্থন অর্জনে কাজ করেছেন তারা হবেন ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’।

বর্তমান আইনের সংজ্ঞায় সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেননি এমন আট ধরনের ব্যক্তি ও পেশাজীবীদের বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া রয়েছে। সেটি পরিবর্তন হচ্ছে।

Manual2 Ad Code

 

পরিবর্তন আনার জন্য ‘জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন, ২০২২’ সংশোধন করে অধ্যাদেশ জারি করা হচ্ছে। এরই মধ্যে ‘জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ এর খসড়া করে এ বিষয়ে অংশীজনদের মতামতও নেওয়া হয়েছে। খসড়াটি মার্চের প্রথম সপ্তাহে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হতে পারে বলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে।

Manual4 Ad Code

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এখন দেশে জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ৯১ হাজার ৯৯৮ জন। অন্যদিকে ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত গেজেটভুক্ত মোট মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ২ লাখ ৫৬ হাজার ৪৭৬ জন।

 

এ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন সংগঠন আমার সঙ্গে কথা বলতে এসেছিল। তাদের মধ্যে প্রবল একটা আপত্তি যে, যারা রণাঙ্গনে সশস্ত্র যুদ্ধ করেছে তাদের সঙ্গে অন্যদের যাতে একই ক্যাটাগরিতে না বিচার করা হয়। আমিও তো তাদের মতো সে রকম যোদ্ধা। আমি মনে করেছি তাদের এ দাবিটা অনেক ন্যায্য। কারণ আমি নিরাপদে থেকে সহযোগিতা করেছি, বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য নানানভাবে কাজ করেছি। এটাও কম গুরুত্বপূর্ণ কাজ নয়। তবে সেটা সেভাবেই সংজ্ঞায়িত হওয়া উচিত। সেটা সেভাবেই নির্ধারিত হওয়া উচিত।’

সনদধারী অ-মুক্তিযোদ্ধাদের অপসারণের জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এজন্য জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইনে আমরা কিছু সংশোধন আনতে চাচ্ছি। বড় ধরনের সংশোধন আসবে মুক্তিযোদ্ধাদের সংজ্ঞার ক্ষেত্রে।’

উপদেষ্টা বলেন, ‘যারা রণাঙ্গনে সারাসরি যুদ্ধ করেছেন এবং যারা নানান আঙ্গিকে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করেছেন… বিদেশে জনমত গঠন, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে, প্রশাসনিক দায়িত্বে মুজিবনগরে নানান পর্যায়ে যারা কাজ করেছে সবাইকে আলাদা করা হচ্ছে। সংশোধিত আইন অনুযায়ী সরাসরি রণাঙ্গনে সশস্ত্র যুদ্ধ করেছেন যারা, তারা হবেন মুক্তিযোদ্ধা। আর যারা বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন তারা হবেন মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী।’

‘ভাতা কিংবা সুযোগ সুবিধা নিয়ে কোনো আপত্তি কারও নেই। শুধু যারা রণাঙ্গনে সরাসরি যুদ্ধ করেছেন তাদের স্ট্যাটাসটাই যাতে মুক্তিযোদ্ধা থাকে।’

 

বর্তমান আইনে থাকা বীর মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা তুলে ধরে ফারুক-ই-আজম বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক স্বাধীনতার ঘোষণায় সাড়া দিয়া যাঁহারা দেশের অভ্যন্তরে গ্রামে-গঞ্জে যুদ্ধের প্রস্তুতি ও অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করিয়াছেন এবং ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ মার্চ হইতে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হইয়া দখলদার ও হানাদার পাকিস্তানি সেনাবাহিনী, জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম ও মুসলিম লীগ এবং তাহাদের সহযোগী রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস, মুজাহিদ বাহিনী ও পিস কমিটির বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করিয়াছেন এরূপ সব বেসামরিক নাগরিক এবং সশস্ত্র বাহিনী, মুজিব বাহিনী, মুক্তি বাহিনী ও অন্যান্য স্বীকৃত বাহিনী, পুলিশ বাহিনী, ইপিআর নৌ কমান্ডো, কিলো ফোর্স, আনসার বাহিনীর সদস্য এবং নিম্নবর্ণিত বাংলাদেশের নাগরিকগণ, উক্ত সময়ে যাঁহাদের বয়স সরকার কর্তৃক নির্ধারিত বয়সসীমার মধ্যে, বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে গণ্য হইবেন। এটা বর্তমান আইনে বলা হয়েছে।’

বর্তমান সংজ্ঞায় সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেননি এমন আট ধরনের ব্যক্তি ও পেশাজীবীদের বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল। এরমধ্যে ভারতে গিয়ে যারা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, যারা বিদেশে থেকে যুদ্ধের ওপর জনমত গঠন করেছেন, মুজিবনগর সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারী-দূত, মুজিবনগর সরকারে সম্পৃক্ত এমএনএ এবং যারা পরবর্তী সময়ে গণপরিষেদের সদস্য হিসেবে গণ্য হয়েছিলেন, বীরাঙ্গনা, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী ও কলাকুশলী এবং দেশ ও দেশের বাইরে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে দায়িত্ব পালনকারী বাংলাদেশি সাংবাদিক; স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সব খেলোয়াড়, আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া মেডিকেল দলের সব সদস্যদের বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য করা হয়েছিল বলেও জানান উপদেষ্টা।

নতুন করা খসড়া অধ্যাদেশে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক স্বাধীনতার ঘোষণায় সাড়া দিয়া’ অংশটুকু বাদ দেওয়া হয়েছে জানিয়ে ফারুক-ই-আজম বলেন, নতুন অধ্যাদেশে হানাদার ও দখলদার পাকিস্তানি বাহিনী ও তাহাদের সহযোগী কর্তৃক নির্যাতিতা সব নারী (বীরাঙ্গনা); মুক্তিযুদ্ধকালে আহত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া ফিল্ড হাসপাতালের সব ডাক্তার, নার্স ও চিকিৎসা-সহকারীকে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, বর্তমান আইনে সংজ্ঞার ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাখ্যা হচ্ছে, যারা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে, স্বেচ্ছায় অংশগ্রহণ করেছে। কারও নির্দেশে না। বর্তমান সংজ্ঞায় সেটি কারও নির্দেশিত বলা হয়েছে। মনে হচ্ছে, আমরা যুদ্ধে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল না, কিন্তু কারও ডাকে সাড়া দিয়ে গিয়েছি। এটা তো তেমন না। মুক্তিযোদ্ধারা বলছেন, আমরা দেশ-জাতি-মানুষকে ভালোবেসে রণাঙ্গনে যুদ্ধ করতে গেছি। হয় আমার জীবন যাবে, না হয় শত্রুর জীবন। একমাত্র ভালোবাসাই মানুষকে জীবন দেওয়ার মতো একটা পরিপ্রেক্ষিতে নিয়ে যেতে পারে। কারও নির্দেশে কেউ জীবন দিতে যেতে পারে না।

Manual2 Ad Code

খসড়া অধ্যাদেশে মুক্তিযুদ্ধের সহযোগীদের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, যারা ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে দেশের অভ্যন্তরে বা প্রবাসে অবস্থান করে মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দীপিত করা এবং মুক্তিযুদ্ধকে বেগবান ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনকে ত্বরান্বিত করার প্রয়াসে সংগঠকের ভূমিকা পালন, বিশ্ব জনমত গঠন, কূটনৈতিক সমর্থন অর্জন এবং মনস্তাত্বিক শক্তি অর্জনের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের যেসব নাগরিক প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা করেছেন। বর্তমান আইন অনুযায়ী, এরা সবাই মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃত।

উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন পর্যায় থেকে খসড়া অধ্যাদেশের বিষয়ে জনমত নিয়েছি। সেই মতামত আমরা বিবেচনায় নিয়েছি। গত রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে বসেছি। তারাও মতামত দিয়েছেন। আমাদের খসড়া ও তাদের মতামত মোডিফিকেশন করে আগামী জামুকার (জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল) সভায় চূড়ান্ত করে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে। এরই মধ্যে অধ্যাদেশের ভেটিংও হয়ে গেছে।’

আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে জামুকার সভা হবে জানিয়ে ফারুক-ই-আজম বলেন, ‘আমরা আশা করছি মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে এটা উপদেষ্টা পরিষদে পাঠাতে পারবো।’

 

মুক্তিযোদ্ধাদের বয়সের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা হতে হলে সর্বনিম্ন বয়স মুক্তিযুদ্ধের সময় ১২ বছর ৬ মাস নির্ধারিত আছে। কিন্তু এটা নিয়ে মামলা রয়েছে। মামলা নিষ্পত্তি হলে রায়ে ভিন্ন কিছু না থাকলে এ বয়সই বহাল থাকবে। মামলা নিষ্পত্তির জন্য দ্রুত চেষ্টা করা হচ্ছে। আদালত ১২ বছর ৬ মাস বহাল রাখলে প্রচুর অমুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে বাদ যাবেন।’

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual4 Ad Code