প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৬ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১লা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৫শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

‘পদত্যাগ করতে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পা ধরেছিলেন শেখ রেহানা’

editor
প্রকাশিত মে ২৫, ২০২৫, ১২:৩২ অপরাহ্ণ
‘পদত্যাগ করতে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পা ধরেছিলেন শেখ রেহানা’

Manual5 Ad Code

 

Manual2 Ad Code

প্রজন্ম ডেস্ক:

ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। তবে পদত্যাগের আগে শক্তহাতে ছাত্র আন্দোলনকে দমাতে চেয়েছিলেন। সবকিছু নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলেও তিনি ক্ষমতার মসনদ ছাড়তে চাচ্ছিলেন না। একপর্যায়ে পদত্যাগ করতে ৫ আগস্ট গণভবনে শেখ হাসিনার পা ধরেছিলেন শেখ রেহানা।

Manual5 Ad Code

রোববার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এক তদন্ত প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরেছেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম। ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের সামনে লিখিতভাবে এ তথ্য পড়ে শোনান তিনি।

চিফ প্রসিকিউটর বলেন, শেষ সময়েও অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ এবং আরও রক্তপাতের মাধ্যমে ক্ষমতা ধরে রাখতে চেয়েছিলেন শেখ হাসিনা। দেশ ছাড়ার আগে (৪ আগস্ট) সোমবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে প্রায় এক ঘণ্টা রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের চাপ দিয়েছিলেন তিনি। তবে পরিস্থিতি যে একেবারেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে, সেটা তিনি কিছুতেই মানতে চাচ্ছিলেন না। পরে পরিবারের সদস্যরাসহ বোঝানোর পর পদত্যাগে রাজি হন তিনি। এরপর দ্রুততম সময়ে পদত্যাগ করে সামরিক হেলিকপ্টারে করে গোপনে বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা।

Manual8 Ad Code

 

দলীয় অস্ত্রধারী কর্মীদের নামিয়ে ৩ আগস্ট দিনভর সারা দেশে ব্যাপক সংঘাত ও প্রাণহানি ঘটানোর পরও ছাত্র-জনতার আন্দোলন সামাল দিতে পারেননি শেখ হাসিনা। যদিও পরিস্থিতি উপলব্ধি করতে পেরে ৩ আগস্ট রাতেই শেখ হাসিনাকে তার একজন উপদেষ্টাসহ কয়েকজন নেতা বোঝানোর চেষ্টা করেন। তারা সেনাবাহিনীর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের পরামর্শ দেন বলে জানা গেছে। তবে তিনি তা মানতে চাননি; বরং ৪ আগস্ট থেকে কারফিউ আরও কড়াকড়ি করতে বলেন। ভোর থেকে কারফিউ কড়াকড়ি করার উদ্যোগ নেওয়া হলেও সকাল ৯টার পর থেকে বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীরা কারফিউ ভেঙে নামতে শুরু করেন। ১০টা নাগাদ ঢাকার বিভিন্ন স্থানে জমায়েত বড় হতে থাকে।

এসময় চিফ প্রসিকিউটর ট্রাইব্যুনালকে বলেন ওবায়দুল কাদের, সালমান এফ রহমান, আনিসুল হক, আছাদুজ্জামান খান কামাল তাকে পদত্যাগ করতে না করেছিলেন।

৫ আগস্ট সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তিন বাহিনীর প্রধান ও পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনে ডাকা হয়। নিরাপত্তা বাহিনী কেন পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছে না, সেটার জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করেন। আন্দোলনকারীরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাঁজোয়া যানে উঠে লাল রং দিয়ে দিচ্ছেন, সামরিক যানে পর্যন্ত উঠে পড়ছেন—এরপরও কেন তারা কঠোর হচ্ছে না, সেটা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। এ ছাড়া বিশ্বাস করে এই কর্মকর্তাদের শীর্ষ পদে বসিয়েছেন—সেটাও তিনি উল্লেখ করেন।

এক পর্যায়ে শেখ হাসিনা আইজিপিকে দেখিয়ে বলেন, তারা (পুলিশ) তো ভালো করছে। তখন আইজিপি জানান, পরিস্থিতি যে পর্যায়ে গেছে, তাতে পুলিশের পক্ষেও আর বেশি সময় এ রকম কঠোর অবস্থান ধরে রাখা সম্ভব নয়।

ওই সময়ে শীর্ষ কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়, বলপ্রয়োগ করে এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে না। কিন্তু শেখ হাসিনা সেটা মানতে চাচ্ছিলেন না। তখন কর্মকর্তারা শেখ রেহানার সঙ্গে আরেক কক্ষে আলোচনা করেন। তাকে পরিস্থিতি জানিয়ে শেখ হাসিনাকে বোঝাতে অনুরোধ করেন। শেখ রেহানা এরপর বড় বোন শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করেন। পা জড়িয়ে ধরে শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে বলেন তিনি। কিন্তু তিনি ক্ষমতা ধরে রাখতে অনড় থাকেন। একপর্যায়ে বিদেশে থাকা সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গেও ফোনে কথা বলেন একজন শীর্ষ কর্মকর্তা। এরপর জয় তার মায়ের সঙ্গে কথা বলেন। রাজি হয়ে যান পদত্যাগে। তিনি তখন একটা ভাষণ রেকর্ড করতে চেয়েছিলেন জাতির উদ্দেশে প্রচারের জন্য। ততক্ষণে গোয়েন্দা তথ্য আসে যে বিপুলসংখ্যক ছাত্র-জনতা শাহবাগ ও উত্তরা থেকে গণভবন অভিমুখে রওনা হয়েছে। দূরত্ব বিবেচনায় ৪৫ মিনিটের মধ্যে শাহবাগ থেকে গণভবনে আন্দোলনকারীরা চলে আসতে পারে বলে অনুমান করা হয়। ভাষণ রেকর্ড করতে দিলে গণভবন থেকে বের হওয়ার সময় নাও পাওয়া যেতে পারে।

এরপর ছোট বোন রেহানাকে নিয়ে তেজগাঁওয়ের পুরোনো বিমানবন্দরে হেলিপ্যাডে আসেন শেখ হাসিনা। সেখানে পদত্যাগের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে বেলা আড়াইটার দিকে সামরিক হেলিকপ্টারে করে ছোট বোনসহ ভারতের উদ্দেশে উড্ডয়ন করেন শেখ হাসিনা।

Manual8 Ad Code

 

ইন্ডিয়া টুডের এক খবরে বলা হয়, শেখ হাসিনা নয়াদিল্লির কাছের গাজিয়াবাদে (উত্তর প্রদেশ) ভারতীয় সেনাবাহিনীর হিন্দন বিমানঘাঁটিতে দেশটির স্থানীয় সময় ৫টা ৩৬ মিনিটে অবতরণ করেন। ভারতের সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা তাকে স্বাগত জানান। সেখান থেকে তিনি লন্ডনে যেতে পারেন বলে জানা গেছে।

তাজুল ইসলাম আরও বলেন, আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা টানা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন গত বছরের ১১ জানুয়ারি। এর আগে ১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদে নির্বাচনের মাধ্যমে তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে ভোটে বিএনপি জয়ী হলে আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে যায়। তখন সংসদে বিরোধীদলীয় নেত্রী হন শেখ হাসিনা।

এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে জয়ী হয়ে প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। পাঁচ বছর পর ২০১৪ সালে একতরফা নির্বাচন করেন। তাতে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫৩ জন সংসদ সদস্য হন। ওই নির্বাচনে (দশম সংসদ) বিরোধী দলগুলো অংশ নেয়নি; শেখ হাসিনা ও তার জোটসঙ্গীরা মিলে সরকার গঠন করেন। ২০১৮ সালে বিতর্কিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তিনি আবার প্রধানমন্ত্রী হন। আগের রাতে ব্যালটে সিল মারার ব্যাপক অভিযোগের কারণে ওই নির্বাচন ‘রাতের ভোট’ নামে পরিচিতি পায়। আর চলতি বছরের জানুয়ারিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিরোধী দলগুলো অংশ নেয়নি। নিজ দলীয় নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী করে ‘ডামি’ প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্য দিয়ে তিনি আবার প্রধানমন্ত্রী হন। এ নির্বাচনকে বিরোধীরা ‘ডামি নির্বাচন’ আখ্যা দেন।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual3 Ad Code