প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৯শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৪ঠা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৮শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

শিশুদের ইপিআই টিকা: বিয়ানীবাজারে সেবা নিতে জটিল অনলাইন প্রক্রিয়া

editor
প্রকাশিত এপ্রিল ২৮, ২০২৫, ১০:২০ পূর্বাহ্ণ
শিশুদের ইপিআই টিকা: বিয়ানীবাজারে সেবা নিতে জটিল অনলাইন প্রক্রিয়া

Manual2 Ad Code

 

Manual7 Ad Code

স্টাফ রিপোর্টার:

এক্সপান্ডেড প্রোগ্রাম অব ইম্যুনিজেশন (ইপিআই) টিকাদান কর্মসূচি ঘিরে বিয়ানীবাজারে নতুন বিড়ম্বনা শুরু হয়েছে। এতোদিন শিশুদের ম্যানুয়াল ইপিআই টিকা কার্ড দেওয়া হলেও বর্তমানে চালু হয়েছে অনলাইন কার্ডের সেবা। এ নিয়ে নতুন বিড়ম্বনায় পড়েছেন সেবাপ্রার্থীরা। অনলাইন আবেদন, আইডি তৈরিকরণ ও বিতরণ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে জটিলতা। ফলে কয়েকমাস ধরে উপজেলায় টিকা কার্ডের সংকট দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে স্বাস্থ্য সহকারীরা রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন। এ নিয়ে ক্ষোভ ছড়িয়েছে সেবাপ্রার্থীসহ সর্বসাধারণের মাঝে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে সার্বজনীন টিকাকরণ কর্মসূচি- ইপিআই-এর কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে। এ কর্মসূচির মাধ্যমে মূলত নবজাতক, শিশু এবং অন্তঃসত্ত্বাদের বিভিন্ন প্রকার টিকা দেওয়া হয়। প্রথমদিকে যক্ষ্মা (টিবি), ডিপথেরিয়া, হুপিংকাশ (পারটুসিস), ধনুষ্টংকার (টিটেনাস), পোলিও ও হামের টিকা দেওয়া হতো। বর্তমানে ইপিআই কর্মসূচির অধীনে ১০টি টিকা পাচ্ছেন শিশু, গর্ভবতীসহ সাধারণ মানুষ। এসব টিকা বিনামূল্যে দেওয়া হয়। সর্বশেষ ২ থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশুদের জন্য বিনামূল্যে হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসের টিকা ইপিআই কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

সূত্র বলছে, সরকারি ব্যবস্থাপনা ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতায় ইপিআই টিকাদান কর্মসূচি চালুর পর থেকেই ছিল নির্ধারিত ম্যানুয়াল কার্ড। নবজাতক, শিশু ও গর্ভবতী নারীদের জন্য এতোদিন ধরে ম্যানুয়াল কার্ডের মাধ্যমে সেবা দেওয়া হতো। ওই একই কার্ডের মাধ্যমে সেবাগ্রহীতাদের প্রদান করা হতো নির্ধারিত ফলোআপ সেবা। কিন্তু সরকার ম্যানুয়াল কার্ড বিতরণ বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে বেড়েছে ভোগান্তি।

Manual3 Ad Code

নতুন করে ইপিআই কর্মসূচির আওতায় সেবাপ্রার্থীদের জন্য অনলাইন কার্ড চালু করেছে সরকার। এজন্য সেবাপ্রার্থীকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্ধারিত ওয়েবসাইটে গিয়ে প্রোফাইল বা আইডি তৈরি করতে হচ্ছে। তারপর মা-বাবার জন্ম নিবন্ধন সনদ ও শিশুর জন্ম নিবন্ধন সনদের তথ্য দিয়ে অনলাইন কার্ড পূরণ করতে হয়। এরপর সেই কার্ড প্রিন্ট করে স্বাস্থ্য সহকারীর কাছ থেকে সেবা নেওয়া যাচ্ছে। জটিল এই প্রক্রিয়ার জটিলতায় পড়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকেই।

শাহিনুর রহমান নামে এক সেবাপ্রার্থী বলেন, টিকার কার্ড আগে ম্যানুয়াল ছিল। বাচ্চাকে নিয়ে টিকা দেওয়ায় কোনো ঝামেলা ছিল না। অনলাইন কার্ড চালু করায় বিড়ম্বনা শুরু হয়েছে। কার্ড ডাউনলোড করতে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে? সবাইতো এতো কিছু বোঝে না। সময়মতো কার্ড পাওয়া যাচ্ছে না। ম্যানুয়াল কার্ড বন্ধ হওয়ায় অনেকেই সময়মতো টিকা নিতে পারেনি। ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়েছে।

Manual6 Ad Code

সেবাপ্রার্থী রিমা বেগম বলেন, ম্যানুয়াল কার্ড বন্ধ হওয়ায় সময়মতো টিকা পাওয়া যাচ্ছে না। কার্ড ছাড়া টিকা নেওয়াও ঝুঁকিপূর্ণ। কয়েকমাস ধরে টিকা কার্ড বিতরণ বন্ধ ছিল। এখন আবার অনলাইন কার্ডের কথা শুনছি। স্বাস্থ্য সহকারীরা কার্ড ডাউনলোড করে দেয় না। এতে সাধারণ গ্রাহকের বিড়ম্বনা কেবল বেড়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন স্বাস্থ্য সহকারী জানান, ম্যানুয়াল ইপিআই টিকা কার্ড সরবরাহ ও সেবা প্রদান সহজ ছিল। অনলাইন কার্ড ডাউনলোড করা খুবই ঝামেলাপূর্ণ ও সময়সাপেক্ষ। স্বাস্থ্য সহকারীরা টিকা দেওয়ার পাশাপাশি ইপিআই টিকা কার্ডের অনলাইন নিবন্ধনের কাজ করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। এতে কাজের গতি কমে যাচ্ছে। ফলে ব্যাহত হচ্ছে টিকাদান কর্মসূচি।

Manual6 Ad Code

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক নারী স্বাস্থ্য সহকারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ইপিআই কেন্দ্রে সব কাজ স্বাস্থ্য সহকারীকে করতে হয়। আমরা টিকা দেব নাকি অনলাইন নিবন্ধনের কাজ করবো? একসঙ্গে দুই কাজ করতে গিয়ে টিকা কার্ডের আবেদন ও কার্ড ডাউনলোড বেশি করা যায় না। এতে সেবাপ্রার্থীরা বিড়ম্বনায় পড়ছেন। সেবাপ্রার্থীরা আমাদের সঙ্গে রাগারাগি করেন। আমরা তো আমাদের সাধ্যমতো কাজ করে যাচ্ছি।

জানা গেছে, দীর্ঘদিন (আনুমানিক ৮ মাস) ম্যানুয়াল টিকা কার্ড সরবরাহ বন্ধ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। চালু করেছে ইপিআই অনলাইন টিকা কার্ড সেবা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে নিবন্ধনের পর একজন গ্রাহক টিকা কার্ড ডাউনলোড করতে পারেন। তবে অনলাইন আবেদনে সামান্যতম ভুলত্রুটি হলেই বিড়ম্বনার শেষ নেই। কার্ড ডাউনলোড ও নিবন্ধন জটিলতাতো আছেই। এসব কারণে কাঙ্ক্ষিত সময়ে অনেকেই টিকা নিতে পারছেন না।

 

বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: মনিরুল হক খান বলেন, একটা পুরোনো পদ্ধতি থেকে নতুন পদ্ধতিতে টিকার কার্ড বিতরণ ও সেবা প্রদান চালু হয়েছে। প্রথমদিকে একটু বিড়ম্বনা হতে পারে। যেকোনো কিছুই প্রথম দিকে আয়ত্তে আসতে একটু সময় লাগে। তবে আমরা মনে করি, এ ধরনের সমস্যা ও নিবন্ধন জটিলতা দ্রুতই নিরসন হবে। তাছাড়া কোন সেবা প্রার্থী বিড়ম্বনায় পড়লে আমাদের কাছে আসতে পারেন।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual8 Ad Code