প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৭ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২রা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৬শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

গৃহকর্মী মাকে আদালতের মাধ্যমে ৫ বছর পর উদ্ধার করলেন ছেলে

editor
প্রকাশিত মে ১৯, ২০২৫, ০২:০৫ অপরাহ্ণ
গৃহকর্মী মাকে আদালতের মাধ্যমে ৫ বছর পর উদ্ধার করলেন ছেলে

Manual4 Ad Code

ফরিদপুর প্রতিনিধি:

 

ফরিদপুরে প্রায় ৫ বছর ধরে শহরের ঝিলটুলী মহল্লার একটি বাড়িতে ‘আটকে’ রাখা মরিয়ম বেগম (৬৫) নামের এক বৃদ্ধা গৃহকর্মীকে তার ছেলে আব্দুল মতিনের জিম্মায় দিয়েছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।

Manual5 Ad Code

 

সোমবার দুপুর ১টার দিকে আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আতিকুর রহমান এ সিদ্ধান্ত দেন। এর আগে আদালত মরিয়ম বেগমের কাছে জানতে চান তিনি তার ছেলের কাছে যেতে চান কি না। উত্তরে তিনি সম্মতি জানালে আদালত এ মামলার পরবর্তী তারিখ আগামী ১ জুন পর্যন্ত মরিয়ম বেগমকে ছেলের জিম্মায় দেন।

Manual7 Ad Code

ম্যাজিস্ট্রেট আদালত সূত্রে জানা গেছে, আগামী ১ জুন নির্ধারিত দিনে মরিয়ম বেগমকে আদালতে হাজির করা হবে। একই দিন মামলার দ্বিতীয় পক্ষ লিবা বেগমকে সমন দিয়ে আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেওয়া হবে।

মরিয়ম বেগম ফরিদপুর শহরের আলীপুর মহল্লার রাজ্জাকের মোড় এলাকার মৃত রহিম উদ্দিনের স্ত্রী। তার একমাত্র ছেলের নাম আব্দুল মতিন (৩৮)। তিনি বিবাহিত এবং তিন ছেলের বাবা। পেশায় একজন মুদি ব্যবসায়ী।

আব্দুল মতিন গতকাল রোববার (১৮ মে) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রথম পক্ষ এবং লিবা বেগমকে দ্বিতীয় পক্ষ হিসেবে উল্লেখ করে ফৌজদারি আইনের ১০০ ধারায় একটি মামলা করেন। মামলায় তিনি তার মাকে ফেরত পাওয়ার আবেদন জানান।

আবেদনে বলা হয়, মামলার বিবাদী লিবা বেগম দুর্দান্ত, ঢ্যাঙা, গোয়ার, জুলুমবাজ ও অত্যাচারী প্রকৃতির মানুষ। তার বাসায় আমার গর্ভধারিণী মা গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করেন। কিন্তু তারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেয় না। আমি প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে হিসেবে মাকে আনতে গেলে তারা হুমকি দেয়। লিবা বেগমের দ্বারা মা নিরাপদ নন। তাই আমার মাকে ফিরিয়ে আনার আবেদন করছি। লিবা বেগমের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর আদেশ ও সার্চ ওয়ারেন্ট ইস্যু করে ন্যায়বিচার করুন।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালত গতকাল রোববার সার্চ ওয়ারেন্ট ইস্যু করে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানাকে নির্দেশ দেন এবং মামলার পরবর্তী তারিখ ১ জুন ধার্য করেন।

ওই সার্চ ওয়ারেন্ট পাওয়ার পর রোববার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে শহরের অনাথের মোড় এলাকার ১০ তলা বিশিষ্ট ‘গণি ভবন’-এর তৃতীয় তলার সিঙ্গাপুর প্রবাসী ভাড়াটিয়া আব্দুল কাদেরের তিন-এ ফ্ল্যাট থেকে মরিয়ম বেগমকে উদ্ধার করে পুলিশ।

গণি ভবনের তিন বেডরুমের এ ফ্ল্যাটে ১৬ হাজার টাকা মাসিক ভাড়ায় গত সাত বছর ধরে বসবাস করছেন পরিবারটি। আব্দুল কাদেরের চার মেয়ে। তার স্ত্রী লিবা বেগম কখনও ছোট মেয়েকে নিয়ে সিঙ্গাপুরে থাকেন, আবার কখনও ফরিদপুরে।

Manual8 Ad Code

বাড়িতে বর্তমানে আব্দুল কাদেরের ১৪, ১৩ ও ১১ বছর বয়সী তিন মেয়ে থাকেন। তাদের দেখাশোনার জন্য ২০২০ সাল থেকে মরিয়ম বেগম গৃহকর্মী হিসেবে যোগ দেন।

আব্দুল মতিন বলেন, আমার মাকে গত পাঁচ বছর ধরে ওই ফ্ল্যাটে আটকে রেখে নির্যাতন করা হচ্ছে। কাজের বিনিময়ে কোনো বেতন দেওয়া হয়নি। মায়ের সঙ্গে দেখা করলেও বাড়ির লোকজন ঘরে থাকতেন বলে মা সত্য কথা বলতে পারতেন না।

তিনি জানান, ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছেন। আর্থিক সংকটে তার মা গৃহকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন। এখন তিনি কিছুটা স্বচ্ছল। তাই মাকে নিজের কাছে রাখতে চান।

সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় গণি ভবনের ওই ফ্ল্যাটে গিয়ে দেখা যায়, লিবা বেগমের তিন মেয়ে বাসায় আছে। বড় ও মেঝ মেয়ে নবম শ্রেণিতে ও ছোট মেয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে বলে জানায় বড় মেয়ে।

বড় মেয়ে বলে, তাদের বাবা-মা ও ছোট বোন সিঙ্গাপুরে আছেন। তিনি দাবি করেন, মরিয়ম বেগম ছেলের কাছে যেতে চাইতেন না, বরং তাদের সঙ্গেই থাকতে পছন্দ করতেন। তবে তাকে আটকে রাখা বা নির্যাতনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় মরিয়ম বেগম সাংবাদিকদের কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, তাকে নিয়মিত নির্যাতন করা হতো। মেয়েদের ‘মা’ ছাড়া কিছু বলা যেত না। ঘর মোছা থেকে সব কাজ করতে হতো। মেয়েদের হাত-পা টিপে দিতেন। তারপরও ঠিকমতো খাবার দেওয়া হতো না।

Manual4 Ad Code

উদ্ধার অভিযানে অংশ নেওয়া কোতোয়ালী থানা পুলিশের এসআই আসাদ তালুকদার বলেন, তিনি সাংবাদিক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতাদের নিয়ে উদ্ধার অভিযানে অংশ নেন। শুরুতে আব্দুল কাদেরের মেয়েরা দরজা খুলতে রাজি না হলেও ১৫ মিনিট পর খোলে। বড় মেয়ের ফোনে কাদের সিঙ্গাপুর থেকে হুমকি দেন। তিনি জানান, তিনি আদালতের নির্দেশে এসেছেন এবং মরিয়ম বেগমকে উদ্ধার করবেন।

ওই বাড়ির গার্ড শেখ লোকমান (৬২) বলেন, তিনি কখনো শুনেননি যে মরিয়ম বেগমকে আটকে রাখা হয়েছিল। তবে ছেলে মাকে নিয়ে যেতে চাচ্ছিলেন, সেটি তিনি জানেন। মরিয়ম বেগম মাঝেমধ্যে বাইরে যেতেন বলেও জানান তিনি।

আব্দুল মতিন বিকেল ৫টার দিকে জানান, আদালতের নির্দেশে তিনি মাকে আলীপুরের নিজ বাসায় নিয়ে গেছেন। তিনি বলেন, মামলার পরবর্তী তারিখ ১ জুন। ওই দিন দ্বিতীয় পক্ষ আদালতে হাজির না হলে তিনি মাকে স্থায়ীভাবে নিজের কাছে রাখতে পারবেন।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual3 Ad Code