প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৮ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৩রা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৭শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

জৈন্তাপুরে মাদকবিরোধী দিবসে বিজিবির চিকিৎসা সেবা কর্মসূচি

editor
প্রকাশিত জুন ২৫, ২০২৫, ১২:৪৫ অপরাহ্ণ
জৈন্তাপুরে মাদকবিরোধী দিবসে বিজিবির চিকিৎসা সেবা কর্মসূচি

Manual6 Ad Code

জৈন্তাপুর প্রতিনিধি:
মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচার বিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস-২০২৫ উপলক্ষে সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (৪৮ বিজিবি) এক ব্যতিক্রমী ও জনসচেতনতামূলক কর্মসূচির আয়োজন করে।

বুধবার (২৫শে জুন) বেলা সাড়ে ১১টায় জৈন্তাপুর উপজেলার রাংপানি ক্যাপ্টেন রশিদ স্কুল ও কলেজ অডিটোরিয়ামে মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচার বিরোধী একটি গুরুত্বপূর্ণ মতবিনিময় সভা ও স্থানীয় জনগণের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়।

সভাটি পরিচালনা করেন ৪৮ বিজিবির সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ ফারুক হোসেন পিবিজিএম।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন-বিজিবি সিলেট সেক্টরের উপ-মহাপরিচালক ও সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম চৌধুরী, বিজিবিএম। তিনি বলেন, ‘মাদক একটি নিরব ঘাতক। এটি শুধু একজন মানুষকে নয়, একটি পরিবার, সমাজ ও পুরো জাতিকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। বিজিবি শুধু সীমান্তে দায়িত্ব পালনেই সীমাবদ্ধ নয়, আমরা সামাজিক সচেতনতা তৈরিতেও অগ্রণী ভূমিকা রাখতে চাই। মাদকবিরোধী এই লড়াইয়ে সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সিলেট ব্যাটালিয়ন (৪৮ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ নাজমুল হক বলেন, ‘সীমান্ত এলাকায় মাদক পাচার রোধে ৪৮ বিজিবি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। আমরা প্রতিদিনই অভিযান পরিচালনা করছি এবং গত ১২ মাসে প্রায় ৮ হাজার বোতল বিদেশি মদ, ফেনসিডিল, গাঁজা, বিয়ার, ইয়াবা ও চোলাই মদ জব্দ করেছি, যা আমাদের অঙ্গীকারের প্রতিফলন।’

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জৈন্তাপুর মডেল থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মোহাম্মদ উসমান গনী। তিনি বলেন, ‘মাদক অপরাধের পেছনে রয়েছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। এদের প্রতিরোধ করতে হলে তথ্য দেওয়া ও সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ প্রশাসন সবসময় সচেষ্ট রয়েছে।’

Manual5 Ad Code

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সিলেটের উপ-পরিদর্শক উত্তম পাল বলেন, ‘আমরা শুধু অভিযানেই বিশ্বাসী নই, প্রতিরোধমুখী কার্যক্রমে জনসম্পৃক্ততা নিশ্চিত করাটাও জরুরি। সচেতনতা এবং শিক্ষা দিয়েই মাদক সমস্যার মূল উৎপাটন সম্ভব।’

Manual3 Ad Code

জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জর্জ মিত্র চাকমা বলেন, ‘একটি সমাজে উন্নয়নের পূর্বশর্ত হচ্ছে মাদকমুক্ত পরিবেশ। তরুণ সমাজকে রক্ষা করতে হলে শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নয়, প্রতিটি অভিভাবক, শিক্ষক ও জনপ্রতিনিধিকেও এগিয়ে আসতে হবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা সবসময় এ ধরনের জনসচেতনতামূলক কর্মসূচিতে সহায়তা দিয়ে যাব।’

Manual8 Ad Code

উপজেলার ২ নম্বর জৈন্তাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা চাই না আমাদের সন্তানেরা মাদকের ছোবলে ধ্বংস হোক। তাই স্থানীয় জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ—যেখানেই মাদকের গন্ধ পাবো, সেখানেই প্রতিরোধ গড়বো।’

এছাড়াও সভায় আরও বক্তব্য রাখেন গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রতন কুমার অধিকারী, গোয়াইনঘাট থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) কবির আহমেদ, সাবেক চেয়ারম্যান হাজী আলমগীর হোসেন, ব্যবসায়ী সৈয়দ আব্দুন নুর, শ্রীপুর পাথর কুয়ারী ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুল আহাদ, ছিন্নমূল মিনি স্টোন ক্রাশার মিল মালিক সমিতির সভাপতি আবু সুফিয়ান বিলাল, সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম, রাংপানি কলেজের অধ্যক্ষ অলিউর রহমান সরকার, ইউনিয়ন জামায়াত সভাপতি নুরুল ইসলামসহ সহ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সাংবাদিক ও স্হানীয় গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

সভা শেষে বিজিবির পক্ষ থেকে স্থানীয় পুরুষ, নারী ও শিশুদের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম চালু করা হয়। এতে ক্যাম্পেইনে দায়িত্ব পালন করেন ক্যাপ্টেন সোহানা আফরোজ ডিউ (ভারপ্রাপ্ত সেক্টর মেডিকেল অফিসার, বিজিবি সিলেট) এবং ডা. মো. আবু সালমান (উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জৈন্তাপুর)। তাদের পরিচালনায় প্রায় ৮৫০ জন স্থানীয় গরিব ও দুস্থ্য মানুষ চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করেন এবং প্রয়োজনীয় ঔষধপত্র পান। অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে মাদকবিরোধী সচেতনতামূলক পোস্টার ও লিফলেট বিতরণ করা হয়, যা মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়তে সহায়ক ভূমিকা রাখে।

Manual8 Ad Code

পরে বিজিবি সিলেট সেক্টরের উপ-মহাপরিচালক কর্নেল মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম চৌধুরী (বিজিবিএম) স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে অংশ নিয়ে সীমান্ত পরিস্থিতি, চ্যালেঞ্জ এবং মাদক প্রতিরোধে বিজিবির গৃহীত পদক্ষেপ নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন।

এই আয়োজন শুধু একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়—এটি ছিল সচেতনতা, জনসম্পৃক্ততা এবং রাষ্ট্রীয় দায়িত্ববোধের মিলনস্থল। ৪৮ বিজিবির এই মহতী উদ্যোগ সমাজের প্রত্যেকটি স্তরে মাদকবিরোধী আন্দোলনকে আরও গতিশীল করে তুলবে এমনটাই প্রত্যাশা স্থানীয়দের।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual4 Ad Code