প্রজন্ম ডেস্ক:
কর্মপরিকল্পনা (রোডম্যাপ) অনুযায়ী আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রধমার্ধে সংসদ নির্বাচনের লক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্ততি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়। আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে গত বৃহস্পতিবার থেকে নির্বাচনি সরঞ্জাম আসা শুরু হয়েছে।
প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী নভেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করতে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, নির্বাচনকে ঘিরে কর্মপরিকল্পনায় উল্লেখ করা প্রতিটি কার্যক্রমকে সমান গুরুত্ব দিয়ে এগিয়ে নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম প্রতিনিধি ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও ইসির সংলাপ শুরু করার প্রস্ততি চলছে। এ ছাড়া ইসি সচিবালয়সহ সারা দেশের নির্বাচন অফিসের কর্মকর্তাদের বদলি ও রদবদল করা হচ্ছে। রোডম্যাপ অনুযায়ী আগামী ৩০ নভেম্বর চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। ইতোমধ্যে ৪২ হাজারের বেশি ভোটকেন্দ্রের তালিকাও প্রকাশ করেছে ইসি। নির্বাচনকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট সব বাহিনীর সঙ্গে ইসির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হবে ২৫ সেপ্টেম্বর এবং তফসিল ঘোষণার ১৫ দিন আগে দ্বিতীয় সভা করার পরিকল্পনা রয়েছে সংস্থাটির।
রোডম্যাপে থাকা কার্যক্রমের মধ্যে নির্বাচনি আইনের সংস্কার, নির্বাচনি বিধি ও নীতিমালা জারি, সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ ও নির্বাচনি সরঞ্জাম কেনাকাটার কাজ প্রায় গুছিয়ে এনেছে কমিশন। গতকাল ইসি সচিবালয়ে গিয়ে দেখা যায়, নির্বাচন ভবনে নির্বাচনি নানা ধরনের উপকরণ আসা শুরু হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ও রবিবার নির্বাচনসামগ্রীর কয়েকটি চালান ইসিতে এসেছে।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের উপসচিব রাশেদুল ইসলাম জানান, লাল গালা, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সের লক, অফিশিয়াল সিল, মার্কিং সিল, বড় হেসিয়ান ব্যাগ, ছোট হেসিয়ান ব্যাগ প্রভৃতি সরবরাহ শুরু হয়েছে। বড় ও ছোট হেসিয়ান ব্যাগ চাহিদার সবগুলোই পৌঁছে গেছে। ধাপে ধাপে অন্যগুলোও আসছে। কেনাকাটা ও সরবরাহ শুরু হওয়া ৮ ধরনের মালামালের মধ্যে রয়েছে লাল গালা ২৩ হাজার কেজি, চাহিদা যার এক-চতুর্থাংশ পৌঁছে গেছে। স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সের ৫০ লাখ লক, চাহিদার ৫ লাখ সরবরাহ শুরু হয়েছে। ৮ লাখ ৪০ হাজার দাপ্তরিক সিল চাহিদার ৫ লাখ সেপ্টেম্বরের শুরুতে সরবরাহ শুরু হয়েছে। মার্কিং সিল ১৭ লাখ ৫০ হাজার চাহিদার বিপরীতে দেড় লাখ সরবরাহ শুরু হয়েছে। ব্রাশ সিল ১ লাখ ১৫ হাজার, চাহিদা যা রিটেন্ডার হওয়ায় বিলম্ব হয়েছে। ৭০ হাজার বড় হেসিয়ান ব্যাগ চাহিদার সব সরবরাহ করা হয়েছে। ১ লাখ ১৫ হাজার ছোট হেসিয়ান ব্যাগ, চাহিদার সব সরবরাহ। ১ লাখ ১৫ হাজার গানি ব্যাগ, রিটেন্ডার হওয়ায় সরবরাহ শুরু হয়নি।
ভোট সামনে রেখে সুই-সুতা, দিয়াশলাই, আঠা ও কলম থেকে প্লাস্টিকের পাত- প্রতিটি কেন্দ্র ও বুথের জন্য এমন ২১ ধরনের জিনিস লাগে। আসনভিত্তিক ভোটার, ভোটকেন্দ্র ও সামগ্রিক প্রস্তুতি শেষ হলে তফসিল ঘোষণার পর আঞ্চলিক, জেলা ও উপজেলা অফিসে ধাপে ধাপে তা বিতরণে যাবে। ব্যালট পেপারসহ নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে ভোটের আগেই কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌঁছানো হবে সব সরঞ্জাম।
এদিকে নির্বাচন সামনে রেখে রোডম্যাপ অনুযায়ী সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে রাজনৈতিক দলসহ সব অংশীজনের সঙ্গে সংলাপ শুরু করতে চায় ইসি, যা চলবে প্রায় দেড় মাসব্যাপী। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে থাকবেন নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সুশীল সমাজ ও নারীসমাজের প্রতিনিধি, গণমাধ্যম সম্পাদক ও সাংবাদিক, পর্যবেক্ষক সংস্থার প্রতিনিধি, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও আহত জুলাইযোদ্ধারা। এই সংলাপে উন্মুক্ত আলোচনার পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে থেকে লিখিত প্রস্তাব চাইবে সংস্থাটি।
একই সঙ্গে তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনকালীন সময়ে অন্তত ৭টি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করাকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। সেগুলো হলো নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সব দলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি, ভোটারদের আস্থায় আনা ও ভোটের দিন কেন্দ্রে উপস্থিতি নিশ্চিত করা, প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা, অপপ্রচার ও এআইয়ের ব্যবহার মোকাবিলা, প্রার্থীদের আচরণবিধি মানানো, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ও মাঠে দায়িত্বরতদের নিরপেক্ষতা এবং ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের পক্ষপাতমুক্ত রাখা।
এসবের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও ভোটকেন্দ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করাকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে কমিশন। সেই লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, আইজিপি, বিজিবি, র্যাব, কোস্টগার্ড, আনসার-ভিডিপি, ডিজিএফআই, এনএসআই এবং বিশেষ শাখার সঙ্গে কেন্দ্রীয় সমন্বয় সভা করা হবে। আইনশৃঙ্খলার প্রথম সভাটি ২৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে এবং তফসিল ঘোষণার ১৫ দিন আগে দ্বিতীয় সভা অনুষ্ঠিত হবে। তফসিল ঘোষণার সার্বিক প্রস্তুতি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, ঋণখেলাপিসংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ, ভোটকেন্দ্র থেকে ফলাফল প্রেরণ ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের মতো কার্যক্রমের প্রস্তাবনা প্রস্তুত করতে ৩১ অক্টোবর আন্তমন্ত্রণালয় সভা আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন।
Sharing is caring!