প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

২২শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৭ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২রা রজব, ১৪৪৭ হিজরি

যাতায়াত দুর্ভোগে ৪০ শতাংশ পর্যটক কমেছে সিলেটে

editor
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৫, ১২:১২ অপরাহ্ণ
যাতায়াত দুর্ভোগে ৪০ শতাংশ পর্যটক কমেছে সিলেটে

Manual5 Ad Code

 

Manual2 Ad Code

সিলেট অফিস:

# চাপ বেড়েছে রেল ও আকাশ পথে
# তিন মাসের মধ্যে সড়ক পথে দুর্ভোগ কমতে পারে

 

ঢাকা-সিলেট ছয় লেন মহাসড়কের কাজ তিন বছর ধরে চললেও এখনো শেষ হয়নি। তিন বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত প্রকল্পটির অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ১৬ শতাংশ। এর খেসারত দিতে হচ্ছে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে চলাচলকারীদের। ৬-৮ ঘণ্টার পথ যেতে এখন ১৪-১৫ ঘণ্টা সময় লাগছে যাত্রীদের। যানজটে আটকা পড়লে আরও দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে। পর্যটন সংশ্লিষ্টদের মতে সড়কে দুর্ভোগের কারণে সিলেটে প্রায় ৪০ শতাংশ পর্যটক কমেছে।

Manual3 Ad Code

জানা যায়, ঢাকা-সিলেট ছয় লেন মহাসড়কের কাজ শুরু হয়েছিল ২০২৩ সালে। এর ৫ বছর আগে ২০১৮ সালে শুরু হয়েছিল ভূমি অধিগ্রহণের কাজ। ভূমি অধিগ্রহণ শুরুর ৮ বছর ও সড়কের কাজ শুরুর তিন বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত প্রকল্পটির তেমন অগ্রগতি না হওয়ায় সড়কে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এর কারণে প্রভাব পড়ছে রেলপথ ও আকাশ পথেও। যাত্রীর চাপ বাড়ায় রেলপথেও স্বস্তি নেই। একই সঙ্গে বেড়েছে বিমান ভাড়াও। সবমিলিয়ে যাতায়াত দুর্ভোগের কারণে সিলেটে পর্যটক কমেছে অন্তত ৪০ শতাংশ।

জরুরি প্রয়োজন ছাড়া সড়ক পথে সিলেট আসতে অনীহা অনেকের। এতে বড় প্রভাব পড়ছে সিলেটের পর্যটন শিল্পে। যাতায়াত দুর্ভোগের কারণে প্রতিদিনই সকাল হলে হোটেল বুকিং বাতিল করেন অনেক পর্যটক। অন্তত তিন-চার মাস ধরে সিলেটে এই অবস্থা চলছে বলে জানিয়েছেন হোটেল ব্যবসায়ীরা।

 

 

আসন্ন পর্যটন মৌসুমেও এই সংকটের আশঙ্কা রয়েছে হোটেল-মোটেল ব্যবসয়ীদের মধ্যে। তবে সড়ক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মহাসড়কে দুর্ভোগ কাটতে আরও তিন মাস সময় লাগবে। এরপরে এ ধরনের দুর্ভোগ থাকবে না।

নগরীর আম্বরখানা এলাকার শেরাটন হোটেলের স্বত্বাধিকারী সুজন আহমদ বলেন, আগে সারাবছরই পর্যটকরা সিলেটে আসতেন। এখন সপ্তাহে শুক্রবার ও শনিবার পর্যটকরা আসেন। আগের চেয়ে অন্তত অর্ধেক পর্যটক কমেছে।

 

তিনি বলেন, আমার হোটেলে গত শনিবার ৪০ জন পর্যটকের বুকিং ছিল। খাবারের অর্ডারও ছিল। কিন্তু ব্রাহ্মনবাড়িয়া এলাকায় যানজটে আটকা পড়ে সকাল ৯টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও তারা আসেননি। পরে মুঠোফোনে কল করে তারা বুকিং বাতিল করেছেন।

ট্যুরিজম ডেভেলপার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সহসভাপতি মোহাম্মদ খতিবুর রহমান বলেন, সিলেটের পর্যটন শিল্পের বিকাশে সংশ্লিষ্টদের দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেই। যতটুকু উন্নয়ন হয়েছে, সেটুকু স্থানীয় মানুষের হাত ধরেই হয়েছে। আর স্থানীয়রা তাদের ব্যাবসার স্বার্থেই অপরিকল্পিতভাবে উন্নয়ন কাজ করছেন। এতে স্থায়ীভাবে পর্যটন শিল্পের বিকাশ হচ্ছে না।

তিনি বলেন, এমনিতেই পর্যটন শিল্পের বিকাশ হচ্ছে না, তার উপর যাতায়াত দুর্ভোগের কারণে পর্যটক কমছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া উচিত।

 

সিলেটের হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমাত নুরী জুয়েল বলেন, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কারণে অন্তত ৪০ শতাংশ পর্যটক কমেছে। যানজটে আটকা পড়ে সময়মতো সিলেটে পৌঁছাতে না পারায় প্রতিদিনই কেউ না কেউ বুকিং বাতিল করেন।

ঢাকা-সিলেট ছয় লেন মহাসড়ক প্রকল্পের পরিচালক এ কে মো. ফজলুল করিম বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার যে অংশে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে, সেটি আমাদের প্রকল্পের কাজ না। এই প্রকল্পের ঠিকাদার ভারতের। ৫ আগস্টের পরে তিনি ভারত চলে গিয়েছিলেন। যার কারণে কোনো কাজ হয়নি। সম্প্রতি তিনি আবার এসেছেন, কাজও শুরু করেছেন। আশা করা যাচ্ছে তিন মাসের মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাবে। দুর্ভোগও কমবে।

 

Manual4 Ad Code

চাপ বেড়েছে রেল ও আকাশ পথে

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটের কারণে যাত্রীদের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। ফলে সড়ক এড়িয়ে এখন অনেকেই রেলপথ ও আকাশপথে ভরসা করছেন। কিন্তু ট্রেনের টিকিট সংকট ও বিমানের অতিরিক্ত ভাড়ার কারণে সেপথেও দুর্ভোগের অন্ত নেই। এতে করে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছেন যাত্রীরা।

 

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সিলেটগামী ট্রেনগুলোর টিকিটের চাহিদা হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় অনলাইনে ও কাউন্টারে কয়েক মিনিটেই টিকিট শেষ হয়ে যাচ্ছে। একইভাবে ঢাকা-সিলেট আকাশপথেও যাত্রীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

 

যাত্রীরা বলছেন, সড়কপথে যাতায়াত অস্বস্তিকর হয়ে উঠেছে। আট-দশ ঘণ্টার যাত্রায় দ্বিগুণ সময় লাগছে, অনেক সময় যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে হচ্ছে। এ কারণে তারা তুলনামূলক স্বস্তিদায়ক ট্রেন বা বিমানের ওপর নির্ভর করছেন, যদিও ভাড়া তুলনামূলক বেশি।

Manual1 Ad Code

পরিবহন খাতের বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সড়কপথের উন্নয়নকাজ দ্রুত শেষ না হলে রেল ও আকাশপথের ওপর বাড়তি চাপ অব্যাহত থাকবে। এতে সাধারণ যাত্রীরা ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাবেন না।

 

তিন মাসের মধ্যে সড়ক পথে দুর্ভোগ কমতে পারে

সিলেটের সঙ্গে সারাদেশের সড়ক পথের আধুনিকায়নে ‘সাসেক ঢাকা-সিলেট করিডোর-৬ লেন সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প’ এর প্রথম একটি প্যাকেজের কাজ শুরু হয়েছিল ২০২৩ সালে। ঢাকার পার্শ্ববর্তী কাচপুর এলাকায় এ প্যাকেজের কাজ শুরু হয়। পরবর্তীতে আরও বিভিন্ন স্থানে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু এখন পর্য়ন্ত মাত্র ১৬ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে।

 

 

এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ৭টি জেলা থেকে মোট ৮২৯ দশমিক ৮৩ একর ভূমি অধিগ্রহণ করার কথা ছিল। সম্প্রতি প্রকল্প পরিচালক মন্ত্রণালয়ের বৈঠকের পর সাংবাদিকদের কাছে জানান, ২০৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ওই সড়কের ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে মাত্র ১৫ ভাগ। এখনো ৮৫ ভাগ ভূমি অধিগ্রহণ করার বাকি রয়েছে। যদি আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৬ সালের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে তিনি ভূমি বুঝে পান তাহলে আগামী ২০২৮ সালের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারবেন।

প্রকল্প পরিচালক এ কে মো. ফজলুল করিম বলেন, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভূমি অধিগ্রহণ একটি সাপোর্ট প্রজেক্টের আওতায় হচ্ছে, আমাদের প্রকল্পের সঙ্গে না। সেই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে ২০১৮ সালে এবং ভূমি অধিগ্রহণের প্রস্তাবগুলো ২০২১ ও ২০২২ সালে সাবমিট করা হয়েছে।

তিনি বলেন, সিলেট এবং হবিগঞ্জ অংশে ভূমি অধিগ্রহণের চূড়ান্ত পর্যায়ে স্থানীয় লোকজন ভূমি শ্রেণি পরিবর্তনের দাবিতে মানববন্ধন করেন। পরবর্তীতে এটা নিয়ে একটি জটিলতা তৈরি হয়। হবিগঞ্জে কিছু জটিলতা সমাধান হয়েছে। কিন্তু সিলেটে কোনো সমাধান হয়নি। সিলেটের নতুন জেলা প্রশাসক এ ব্যাপারে বেশ আন্তরিক। তিনি উদ্যোগ নিয়েছেন। ভূমি অধিগ্রহণের প্রায় ৮০ শতাংশ কাজ এগিয়ে আনা হয়েছে। এখন টাকা ছাড় দিলে ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি মালিকদের বুঝিয়ে দিতে পারলে কাজ অনেকাংশে এগিয়ে যাবে।

তিনি আরও বলেন, ব্রাহ্মনবাড়িয়ার যে অংশে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে, সেটি আমাদের প্রকল্পের কাজ না। এই প্রকল্পের ঠিকাদার ভারতের। ৫ আগস্টের পরে তিনি ভারত চলে গিয়েছিলেন। যার কারণে কোনো কাজ হয়নি। সম্প্রতি তিনি আবার এসেছেন, কাজও শুরু করেছেন। আশা করা যাচ্ছে তিন মাসের মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাবে। দুর্ভোগও কমবে।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual7 Ad Code