প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

২২শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৭ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২রা রজব, ১৪৪৭ হিজরি

গণভোটে সমাধান খুঁজছে কমিশন

editor
প্রকাশিত অক্টোবর ৫, ২০২৫, ১০:০০ পূর্বাহ্ণ
গণভোটে সমাধান খুঁজছে কমিশন

Manual4 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে গণভোট, অধ্যাদেশ জারি, নির্বাহী আদেশ ও বিশেষ সাংবিধানিক আদেশের সুপারিশ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকের পরও সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে না পারায় কিছুটা অস্বস্তিতে পড়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। আগামী ১৫ অক্টোবর শেষ হবে কমিশনের বর্ধিত মেয়াদ। এমন পরিস্থিতিতে কমিশন রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আবারও বৈঠক করে কয়েক দফা সংলাপ ও বিশেষজ্ঞ মতামতের ভিত্তিতে গৃহীত প্রস্তাবগুলো তাদের সামনে উপস্থাপন করবে। এটি হবে কমিশনের সঙ্গে দলগুলোর চূড়ান্ত সংলাপ। এ বৈঠকেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যাবে বলে আশাবাদী তারা। ১০ অক্টোবরের মধ্যে সুপারিশ চূড়ান্ত করে জুলাই জাতীয় সনদ সরকারের হাতে তুলে দিতে চাইছে ঐকমত্য কমিশন। তাতে বাস্তবায়নের সম্ভাব্য উপায় সম্পর্কে সরকারের কাছে একাধিক সুপারিশ উপস্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে সুপারিশে প্রাধান্য পাবে গণভোট। প্রস্তাবে গণভোটের সম্ভাব্য রূপরেখাও থাকবে বলে জানা গেছে।

জুলাই সনদের সংবিধান-সম্পর্কিত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতভিন্নতা সহজে কাটবে বলে মনে করছেন না ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরাও। বিএনপি চায় প্রস্তাবগুলোর বাস্তবায়ন হবে জাতীয় নির্বাচনের পর, নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে। আর জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই প্রস্তাবগুলোর বাস্তবায়ন এবং এর ভিত্তিতে নির্বাচন চাইছে। ফলে কমিশনের লক্ষ্য কতটা পূরণ হবে, তা নিয়েও সংশয় রয়ে গেছে।

Manual6 Ad Code

কমিশনের পরিকল্পনা ১০ অক্টোবরের মধ্যে সুপারিশসহ জুলাই সনদ সরকারের কাছে পাঠানো হবে। এরপর সরকারের মতামতের ভিত্তিতে সনদ স্বাক্ষরের দিন নির্ধারণ করা হবে। আগামী ১৫ অক্টোবরের মধ্যে সনদ স্বাক্ষরের কাজ শেষ করা হবে।

অন্যদিকে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিএনপি ও ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা আটকে আছে পিআর ইস্যুতে। জামায়াত ও এনসিপিসহ একাধিক ইসলামি দল পিআরের দাবিতে সোচ্চার হলেও বিএনপিসহ তাদের সমমনা দলগুলোর পিআর নিয়ে জোর আপত্তি রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে কেবল উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতিতে বিএনপি রাজি হলে অনিশ্চয়তা কেটে যেতে পারে বলে মনে করছেন নেতারা। জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন সংসদের উভয় কক্ষে পিআর বাস্তবায়নের দাবি তুললেও আন্দোলনে অতিরিক্ত ঝুঁকি নিতে চাইছে না। তাদের আশঙ্কা, নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ এ ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। তারা চাইছে বিএনপি উচ্চকক্ষে পিআরের পক্ষে মত দিলেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।

Manual5 Ad Code

ঐকমত্য কমিশন সংবিধান সংশোধন সম্পর্কিত প্রস্তাব বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে ৬টি সুপারিশ পেয়েছে। সেগুলো হলো- পূর্ণাঙ্গ সনদ বা তার কিছু অংশ নিয়ে গণভোট, বিশেষ সাংবিধানিক আদেশে বাস্তবায়ন, গণপরিষদ গঠনের মাধ্যমে বাস্তবায়ন, পরবর্তী নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন, সংসদকে সংবিধান সংস্কার সভা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে সনদের বিষয়গুলো সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা এবং সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের কাছে এ মর্মে মতামত চাওয়া যে অন্তর্বর্তী সরকার এ সনদ বাস্তবায়ন করতে পারবে কি না। এ ছাড়া বিশেষজ্ঞরা মতামত দিয়েছিলেন, জুলাই সনদ নিয়ে সংবিধান আদেশ জারি করা যেতে পারে। এটি অবিলম্বে কার্যকর হবে। আর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন সংবিধান আদেশ নিয়ে গণভোট করা যেতে পারে। এ ছাড়া বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সংস্কার প্রস্তাবগুলোর বাস্তবায়ন টেকসই করতে হলে গণভোট বা গণপরিষদ সবচেয়ে ভালো বিকল্প।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশে একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট আয়োজনের প্রস্তাব থাকবে। রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে দলগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে তা তুলে ধরা হবে প্রস্তাবগুলো। বৈঠকে সনদ বাস্তবায়ন ইস্যুতে সমঝোতায় পৌঁছানোর পাশাপাশি গণভোটের রূপরেখা প্রণয়ন নিয়েও আলোচনা হতে পারে। এ সংক্রান্ত প্রস্তাবে বলা হয়েছে, জুলাই সনদ বাস্তবায়নে আইনি ও সাংবিধানিক ভিত্তি তৈরির জন্য অন্তর্বর্তী সরকার অধ্যাদেশ জারি করবে। গণভোট আয়োজনের আইনি কাঠামো তৈরি করবে। কারা ভোট দেবে (ভোটার তালিকা নির্ধারণ), ভোটের প্রশ্ন বা প্রস্তাব কী হবে, ভোট পরিচালনার কর্তৃপক্ষ কে (নির্বাচন কমিশন বা বিশেষ গণভোট কমিশন) এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতির নিয়ম চূড়ান্ত করা হবে। ১৮ বছরের বেশি বয়সি ভোটারদের ভোটগ্রহণ করা হবে। ইভিএম বা ব্যালট পেপার, যেটি সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য ও নিরাপদ বলে মনে হয়, সেটি ব্যবহার করা হবে। প্রতিটি কেন্দ্রে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক থাকবে। গণভোট কমিশন স্বচ্ছভাবে ফলাফল ঘোষণা করবে। গণভোট বৈধ হতে ভোটার উপস্থিতির ন্যূনতম শর্ত নির্ধারণ করা হবে। আর পাশের জন্য অন্তত ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পেতে হবে। ফলাফল প্রকাশের পর তা চূড়ান্ত ও জনগণের সার্বভৌম সিদ্ধান্ত বলে গৃহীত হবে।

অবশ্য বিশেষজ্ঞরা সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সুপ্রিম কোর্টের মতামত নিয়ে সাংবিধানিক বিষয়গুলো সমাধান এবং সংসদ নির্বাচনের পর গণভোটের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। একইভাবে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, গণসংহতি আন্দোলনসহ কয়েকটি দল এ ধরনের সংবিধান সংস্কার সভা গঠন করার প্রস্তাব দিয়েছে। অন্যদিকে কমিশনের প্রস্তাবে আপত্তি জানিয়েছে জাতীয় নগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) কয়েকটি দল। তারা গণভোটের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধন করার পর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পক্ষে তাদের মতামত দিয়েছে।

তবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং সংবিধান সংশোধনের বিষয়ে একসঙ্গে গণভোট আয়োজনের প্রস্তাবে আপত্তি জানিয়েছে বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো। তারা সংবিধান সংশোধনের বিষয়টি আগামী সংসদের ওপর ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। সেই সঙ্গে সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের মতামত নিয়ে সাংবিধানিক জটিলতা নিরসন এবং সংসদ নির্বাচনের পর গণভোট আয়োজনের সুপারিশ করেছে। আর জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ কয়েকটি দল নির্বাচনের আগেই জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও সংবিধান সংশোধনের দাবি জানিয়েছে।

Manual8 Ad Code

কমিশন সূত্র জানায়, জুলাই সনদের ৮৪টি বিষয়ে অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐকমত্য হলেও শুধু বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে এখনও মতানৈক্য রয়েছে। তাই রোববার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আবারও আলোচনায় বসবে কমিশন। এদিনই আলোচনা শেষ করে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছানো হবে। বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ ও রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তাব সমন্বয় করে ১০ অক্টোবরের মধ্যেই বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে সুপারিশ চূড়ান্ত করে সরকারের কাছে জমা দেওয়া হবে। কমিশন সরকারকে বাস্তবায়নের একাধিক বিকল্প পদ্ধতি সুপারিশ করবে। এখন যে কয়টি পদ্ধতি আলোচনায় আছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলে বিকল্প পদ্ধতির সংখ্যা কমিয়ে আনতে চায়। যদি দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য না হয়, তা হলে কমিশন আবারও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে বাস্তবায়নের সুপারিশ চূড়ান্ত করবে।

Manual7 Ad Code

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নে বিশেষজ্ঞ মতামতের ভিত্তিতে একটি প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে। রোববারের বৈঠকে দলগুলোর কাছে সেটি উপস্থাপন করা হবে। এটি হবে কমিশনের সঙ্গে দলগুলোর শেষ বৈঠক। বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ ও রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তাব সমন্বয় করে ১০ অক্টোবরের আগেই বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে সুপারিশ চূড়ান্ত করতে চায় কমিশন। সেখানে একাধিক বিকল্প পদ্ধতি সুপারিশ করা হবে।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual2 Ad Code