প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

২২শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৭ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২রা রজব, ১৪৪৭ হিজরি

রাসায়নিকে অসহায় ফায়ার সার্ভিস

editor
প্রকাশিত অক্টোবর ১৫, ২০২৫, ১২:৪০ অপরাহ্ণ
রাসায়নিকে অসহায় ফায়ার সার্ভিস

Manual5 Ad Code

 

Manual4 Ad Code

প্রজন্ম ডেস্ক:

 

Manual6 Ad Code

# দুর্ঘটনাস্থলের প্রকৃত তথ্য দেন না রাসায়নিক গুদামমালিকেরা।
# রয়েছে উন্নত যন্ত্রপাতি ও ফায়ার ফাইটারদের প্রশিক্ষণের ঘাটতি।
# ৫ বছরে ৩টি রাসায়নিকের দুর্ঘটনায় ১৬ ফায়ার সার্ভিসের কর্মী প্রাণ হারান।

 

দেশের বিভিন্ন এলাকায় বৈধ-অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে অসংখ্য রাসায়নিকের দোকান ও গুদাম। মাঝেমধ্যেই এসব স্থানে আগুন লাগে, ঘটে প্রাণহানি। ফায়ার ফাইটাররা সাধারণ আগুন দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলেও রাসায়নিকের আগুন নেভাতে গিয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়তে হয় তাঁদের।

ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা জানিয়েছেন, অগ্নিদুর্ঘটনাস্থলে কোন ধরনের রাসায়নিক আছে, তার প্রকৃত তথ্য না পাওয়ায় আগুন নেভাতে গিয়ে অনেক সময় বিপদে পড়েন তাঁরা। এ ছাড়া তাঁদের কাছে রাসায়নিকের আগুন নেভানোর মতো পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি নেই, প্রশিক্ষণের ঘাটতিও রয়েছে।

গত ২২ সেপ্টেম্বর গাজীপুরের টঙ্গী বিসিক এলাকায় একটি রাসায়নিকের গুদামে আগুন লাগে। সেখানে আগুন নেভাতে গিয়ে গুরুতর দগ্ধ হন টঙ্গী ফায়ার স্টেশনের চারজন ফায়ার ফাইটার। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তাঁদের তিনজন। এ ঘটনাটি আবারও রাসায়নিক অগ্নিকাণ্ডে আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের সীমাবদ্ধতাকে সামনে নিয়ে আসে।

Manual1 Ad Code

রাজধানীর মিরপুরের রূপনগরের শিয়ালবাড়ি এলাকার গতকাল মঙ্গলবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে কসমিক ফার্মা নামের একটি রাসায়নিকের গুদাম এবং পাশের একটি পোশাক কারখানায় আগুন লাগে। এতে অন্তত ১৬ জন নিহত হয়েছেন, আহত হন আরও অনেকে। এ ক্ষেত্রেও রাসায়নিকের আগুন নেভাতে ফায়ার ফাইটারদের বেশ বেগ পেতে হয়েছে।

ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানিয়েছে, গত পাঁচ বছরে দুটি বড় রাসায়নিক দুর্ঘটনায় তাদের ১৬ জন কর্মী প্রাণ হারিয়েছেন। ২০২২ সালে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে মোট ৫১ জন নিহত হন, যার মধ্যে ১৩ জনই ফায়ার সার্ভিসের কর্মী। আর চলতি বছরে গাজীপুরে নিহত হন ফায়ার সার্ভিসের আরও ৩ জন কর্মী।

ফায়ার সার্ভিসের সাবেক পরিচালক (অপারেশনস) মেজর (অব.) এ কে এম শাকিল নেওয়াজ বলেন, উন্নত দেশগুলোতে রাসায়নিক গুদাম বা কেমিক্যালের আগুন নির্বাপণের জন্য আলাদা ফায়ার সার্ভিসের কর্মী থাকলেও আমাদের দেশে তা নেই। ফলে কোন ধরনের রাসায়নিকের আগুন কীভাবে নির্বাপণ করতে হবে, সেই প্রশিক্ষণ অনেকের নেই। এর মধ্যেও ঝুঁকি নিয়েই কাজ করছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।

ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের যথাযথ সরঞ্জাম ও সুরক্ষা দিয়ে অগ্নিনির্বাপণের কাজে পাঠানোর পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ফায়ার অ্যাক্ট, প্রস্তুতি ও প্রশিক্ষণে দ্রুত সংস্কার না আনলে এমন ঘটনা বারবার ঘটবে।

Manual2 Ad Code

ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে ফায়ার সার্ভিসের সদস্য রয়েছেন ১৪ হাজার ৫৭০ জন। এর মধ্যে দেশের ৫৩৭টি ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের প্রতিটিতে ২২ জন করে কর্মী রয়েছেন। এসব কর্মীর মধ্যে ৮৮ জন ২০১৬ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে বিদেশে রাসায়নিকের আগুন নেভানোর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। আন্তর্জাতিক রাসায়নিক অস্ত্র নিরস্ত্রীকরণ সংস্থার (ওপিসিডব্লিউ) অধীনে আরও ২৭ জন এই প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের মাধ্যমে দেশে আরও ৪৩২ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে দেশে ও বিদেশে প্রশিক্ষণ পেয়েছেন ৫৪৭ জন ফায়ার সার্ভিসের সদস্য।

রাসায়নিকের আগুন নেভাতে প্রয়োজন উন্নত যন্ত্রপাতি। কিন্তু দেশের ফায়ার সার্ভিসে এ ধরনের যন্ত্রপাতি পর্যাপ্ত নয়। এ অবস্থায় রাসায়নিকের আগুন নেভাতে কখনো কখনো ব্যবহার করা হচ্ছে পানি। ফলে রাসায়নিকের আগুন বা অন্যান্য জটিল অগ্নিকাণ্ডের আগুন নেভাতে হিমশিম খাচ্ছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। তাঁদের নিজেদের জীবনও ঝুঁকিতে পড়ছে এতে।

ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের অভিযোগ, কোথায় আগুন লেগেছে অনেক সময় তার সঠিক তথ্য তাঁদের দেওয়া হয় না। অগ্নিনির্বাপণের কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতিও আধুনিক নয়, মানহীন পিপিই ব্যবহার করতে হয়। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার পাশাপাশি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় অগ্নিনির্বাপণের জন্য যন্ত্রপাতি ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীর সংখ্যা বাড়েনি।

জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, রাসায়নিকের আগুন নেভাতে ফায়ার ফাইটাররা ব্যর্থ হচ্ছেন না। তবে তথ্য পেতে ব্যর্থ হচ্ছেন। ঘটনাস্থলে কী রয়েছে সে সম্পর্কে মালিকেরা যথাযথ তথ্য না দিয়ে বরং মিথ্যা তথ্য দেন। এতে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তথ্যবিভ্রাটে পড়েন। তবু দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধার করতে হয়, তখন তাঁরা ঝুঁকিতে পড়ছেন।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual3 Ad Code