স্টাফ রিপোর্টার:
অনেক বিতর্কের পর অবশেষে সিলেট-চারখাই-শেওলা ফোরলেন কাজের জমি অধি:গ্রহণ কাজ শুরু হয়েছে। সিলেটের জেলা প্রশাসক মো: সারওয়ার আলমের আন্তরিক প্রচেষ্টা, রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দের জোর দাবীর প্রেক্ষিতে জমি অধি:গ্রহণের মত গুরুত্বপূর্ণ কাজ শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। এতে পূর্ব সিলেটের ৪টি উপজেলার জনমনে স্বস্তি ফিরে এসেছে। ২০২৩ সালের ১১ এপ্রিল একনেক বৈঠকে অনুমোদিত এই প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর।
জানা যায়, সিলেট থেকে শেওলা স্থলবন্দর পর্যন্ত যাত্রী ও পণ্যবাহী পরিবহনের যাতায়াত সহজ করতে এ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে সিলেটের চার উপজেলায় ব্যবসা-বাণিজ্যের কার্যক্রম বৃদ্ধি পাবে। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খরচ হবে ৪ হাজার ২৫৭ কোটি ৭ লাখ টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নে ২ হাজার ৮৮৬ কোটি ৮২ লাখ টাকা ঋণ হিসেবে দেবে বিশ্বব্যাংক। বাকি ১ হাজার ৩৭০ কোটি ২৫ লাখ টাকা দেবে সরকার। প্রকল্পে বিভিন্ন পরামর্শক সেবা খাতে মোট ১০৯ কোটি ৯৩ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়।
শেওলা স্থলবন্দর ব্যবসায়ী কমর উদ্দিন বলেন, এই বন্দর দিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে নিয়মিত পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়। বিশেষ করে পাথর, সিমেন্ট, ফলমূল, এবং প্রাণ-সজীব গ্রুপের পণ্য আদান-প্রদান চলে। ভরা মৌসুমে প্রতিদিন অন্তত ২০০ ভারী ট্রাক এই পথে চলাচল করে। কিন্তু জীর্ণ শেওলা সেতুর কারণে যানবাহন প্রায়ই আটকে পড়ে। নতুন চার লেন সড়ক নির্মিত হলে ব্যবসা আরও বেগবান হবে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে সিলেট থেকে শেওলা স্থলবন্দর পর্যন্ত যাত্রী ও পণ্যবাহী পরিবহনের যাতায়াত দ্রুত ও সহজ হবে। এ ছাড়া, বিবিআইএন করিডোর, সাসেক করিডোর, এশিয়ান হাইওয়ে, বিমসটেক করিডোর, বিসিআইএম করিডোর, সার্ক করিডোরের সঙ্গে আঞ্চলিক সংযোগ সম্প্রসারণের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্যের কার্যক্রম বাড়বে, ভূমিকা রাখবে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে। প্রকল্পে ২৪৭ একর ভূমি অধিগ্রহণ, প্রায় ৪৩ কিলোমিটার চার লেন সড়ক, দুটি সার্ভিস লেন, এক হাজার ৫৭৫ জন পরামর্শক সেবা, ৩১টি কালভার্ট, তিনটি সেতু, একটি ফ্লাইওভার, ছয়টি ওভারপাস, দুটি আন্ডারপাস, চারটি ফুটওভারব্রিজ, সাতটি পায়ে চলার রাস্তা ও একটি টোল প্লাজা নির্মাণের কথা রয়েছে।
এত জনগুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পটি সিলেটের সাবেক জেলা প্রশাসক শের এ মাহবুব মুরাদ বাতিল করার সুপারিশ করেন। বিষয়টি সর্বত্র জানাজানি হলে সিলেটের পূর্বাঞ্চল জুড়ে ক্ষোভ দেখা দেয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে উপজেলা বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও সিলেটস্থ বিয়ানীবাজার জনকল্যান সমিতি বেশ তৎপর হয়ে ওঠে। পৃথক স্মারকলিপি প্রদানসহ প্রতিবাদ শুরু হয়। এমন অবস্থায় বিষয়টি পূনর্বিবেচনার আশ্বাস দেন বর্তমান জেলা প্রশাসক মো: সারওয়ার আলম।
আলীনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আহবাবুর রহমান খান শিশু জানান, সোমবার থেকে তার ইউনিয়ন এলাকায় জমি অধি:গ্রহণের কাজ শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য অন্যান্য ইউনিয়ন এলাকায় হয়ে সিলেট বাইপাস পর্যন্ত যাবে।
বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী অফিসার উম্মে হাবিবা মজুমদার জানান, প্রকল্প বাস্তবায়নে বেশ কিছু অগ্রগতি হয়েছে। জেলা প্রশাসন অফিসিয়ালি জমি অধি:গ্রহণের কাজ শুরু করেছে। পর্যায়ক্রমে প্রকল্প বাস্তবায়নে অন্যান্য উদ্যোগ নেয়া হবে।
Sharing is caring!