প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

৭ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২২শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৬ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

বাসর থেকে ৩ লাখ টাকা নিয়ে উধাও মহিলা লীগ নেত্রী

editor
প্রকাশিত ডিসেম্বর ৮, ২০২৪, ০৩:৪৩ অপরাহ্ণ
বাসর থেকে ৩ লাখ টাকা নিয়ে উধাও মহিলা লীগ নেত্রী

Manual6 Ad Code

 

Manual6 Ad Code

রাজশাহী প্রতিনিধি:

বরের বয়স ৫৮ বছর। প্রথম স্ত্রী ছিলেন অসুস্থ। তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই দ্বিতীয় বিয়ের ইচ্ছে। সেই ইচ্ছা পূরণ হয়েছিল। ৩ লাখ ৩ হাজার টাকা দেনমোহরের মাধ্যমে যুব মহিলা লীগের এক নেত্রীকে বিয়েও করেছিলেন তিনি। সরল বিশ্বাসে সে টাকা পরিশোধও করা হয়। কিন্তু বিধি বাম। দেনমোহরের টাকা বাড়িতে রেখে আসার কথা বলে বাসর থেকে পালিয়েছেন যুব মহিলা লীগের সেই নেত্রী।

চাঞ্চল্যকর এ ঘটনা ঘটেছে রাজশাহী শহরেই। শুধু টাকা নিয়ে উধাও হয়েই থেমে থাকেননি ওই নেত্রী। বিয়ের চার দিন পর তিনি তার স্বামীকে তালাকের নোটিশ পাঠান। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ব্যক্তি গত ২৯ নভেম্বর নগরের চন্দ্রিমা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। ভুক্তভোগী ব্যক্তির নাম মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি নগরের পদ্মা আবাসিকের বাসিন্দা। পৈতৃক বাড়ি নওগাঁ।

জানা যায়, মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে ‘প্রেমের সম্পর্কের’ পর বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিলেন তামান্না আক্তার ফেন্সি নামের ওই নারী। তার বাড়ি নগরের মেহেরচণ্ডি পূর্বপাড়ায়। তিনি নগরের ২৬ নম্বর ওয়ার্ড যুব মহিলা লীগের নেত্রী এবং রাজশাহী সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের মশক শাখার মাঠকর্মী হিসেবে চাকরি করেন। রাজশাহী মহানগর যুব মহিলা লীগের প্রতিটি কর্মসূচিতেই সামনের সারিতে দেখা যেত তামান্নাকে।

রাজশাহী মহানগর যুব মহিলা লীগের সভাপতি ইসমত আরা জানান, ‘ওয়ার্ড পর্যায়ে তাদের কোনো কমিটি নেই। তবে তামান্না আক্তার ফেন্সি ২৬ নম্বর ওয়ার্ড দেখতেন। মহানগরের কর্মসূচিতে অংশ নিতেন। তিনি বিয়ের নামে কারও সঙ্গে প্রতারণা করেছেন কি না তা জানা নেই।’

ভুক্তভোগী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ‘তিনি বিবাহিত। তার স্ত্রী অসুস্থ। তাই তিনি দ্বিতীয় বিয়ের কথা ভাবছিলেন। তামান্না আক্তারেরও বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যায় ১৪ বছর আগে। ১৩ বছর বয়সী তার একটি মেয়ে আছে। বছর দুয়েক আগে পরিচয়ের পর তামান্নাকে ভালো লেগেছিল। এ জন্য বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু তামান্না আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছেন।’

মোস্তাফিজুর দাবি করেন, ‘এক বছর আগেই বিয়ের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন তিনি। তখন তামান্নাকে বিয়ের বাজার করতে এক লাখ টাকা দিয়েছিলেন। ওই সময় টাকা নেওয়ার পর বিয়ে করেননি। পরে বছরখানেক দুজনের কোনো যোগাযোগ ছিল না। কিছুদিন আগে ফের যোগাযোগ শুরু করেন তিনি। বিয়ে করবেন ভেবে তার মনও নরম হয়ে যায়।’

তামান্না তাকে জানান, ‘তিনি বিয়ে করবেন যদি তাকে ৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়। এ টাকায় তামান্না রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেশন বাজারে দোকান করতে চান। তামান্নার প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান মোস্তাফিজুর। গত ২০ নভেম্বর রাতে তামান্না তাকে মেহেরচন্ডি এলাকার একটি কাজি অফিসে নিয়ে যান। সেখানে মোস্তাফিজুর নগদ ৩ লাখ ৩ হাজার টাকা দেনমোহরে বিয়ে করেন। বিয়ের পর শহরের একটি তিনতারকা হোটেলে বাসর রাতের কথা ছিল তাদের।’

Manual6 Ad Code

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বাড়িতে আমার অসুস্থ প্রথম স্ত্রী আছে। তাই ফুলশয্যাটা হোটেলেই করতে চেয়েছিলাম। এ জন্য ১০ হাজার টাকা দিয়ে একটি রুম বুক করি। কিন্তু হোটেলে ওঠার আগে তামান্না বলে যে, সে এতগুলো টাকা নিয়ে হোটেলে উঠবে না। টাকাটা বাড়িতে রেখে আসবে। আমি তাতে সম্মতি দেই। তাকে বাড়ি পাঠিয়ে আমি অপেক্ষা করতে থাকি, কিন্তু সে আর আসেনি। অসংখ্যবার ফোন দিলেও সে কোনো সাড়া দেয়নি।’

এরপর সম্প্রতি তামান্নার পাঠানো তালাকের নোটিশ হাতে পেয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান। তামান্না এ তালাকে সই করেছেন বিয়ের চার দিন পর গত ২৪ নভেম্বর। মোস্তাফিজুর দাবি করেন, এখন তিনি শুনতে পাচ্ছেন যে প্রেমের ফাঁদে ফেলে এভাবে টাকা হাতিয়ে নেওয়া তামান্নার ব্যবসা। তিনি এরই মধ্যে কয়েকজনের নাম জানতে পেরেছেন, যাদের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিতে শুধু তার বিষয়টিই বিয়ে পর্যন্ত গড়িয়েছে।

তিনি দাবি করেন, ‘বিয়ের দিন দেনমোহরের ৩ লাখ ৩ হাজার টাকা ছাড়াও দুই মাসের খরচ বাবদ আরও ২৪ হাজার টাকা দিয়েছিলেন তামান্নাকে। বিয়ের আগে বাজার করতে দিয়েছিলেন আরও ৬০ হাজার টাকা। এ ছাড়া কাজী অফিসের খরচ বাবদ দেন আরও ২৫ হাজার টাকা।’

তিনি বলেন, ‘প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে তিনি টাকা আদায়ে ওই নারীর এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিদের জানান। তখন এলাকার লোকজন জানান, চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে এলাকার একজনের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়েছিলেন তামান্না। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এই টাকার জন্য চাপে পড়েন তিনি। সম্প্রতি তামান্না ওই টাকা ফেরত দিয়েছেন। বিয়ে করে টাকা এনে তিনি ফেরত দিয়েছেন বলে এলাকার লোকজনের ধারণা।’

তিনি আরও বলেন, ‘এমন প্রতারক মেয়ের সঙ্গে আমি আর সংসার করতে চাই না। আমি সরল মনে ৫৮ বছর বয়সে তাকে বিয়ে করেছিলাম। কিন্তু সে আমার সাথে প্রতারণা করেছে। আমি তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। সে জন্য তার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছি।’

Manual3 Ad Code

যোগাযোগ করা হলে যুব মহিলা লীগ নেত্রী তামান্না আক্তার ফেন্সি বলেন, ‘বিয়ের পরই আমাকে দুই কাঠা জমি দেওয়ার কথা ছিল। ওই জমিতে একটি ফ্ল্যাটবাড়ি নির্মাণ করে দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দেয়। আর আমার ভবিষ্যতের জন্য ব্যাংকে ২০ লাখ টাকা দেওয়ার মৌখিক অঙ্গীকার করে। এসবের কিছুই দেননি মোস্তাফিজুর। তিনি আমাকে বাড়িও নিয়ে যাবেন না। আমার মেয়ের দায়িত্ব নেবেন না। তাই তার সঙ্গে আমার সংসার করা সম্ভব হয়নি।’

তিনি দাবি করেন, ‘কাবিননামার নগদ মোহরানার ৩ লাখ ৩ হাজার টাকা বুঝে পেয়েছেন বলে তিনি স্বাক্ষর দিলেও বাস্তবে টাকা পাননি। কাজী অফিস থেকে বেরিয়ে মোস্তাফিজুর টাকা দেননি। এখন তিনি গালগল্প সাজিয়ে বলছেন।’

Manual1 Ad Code

তামান্না বলেন, ‘আমি পালিয়ে যাইনি। অফিস করছি। আমি যুব মহিলা লীগকে সমর্থন করতাম। তবে কোনো পদে ছিলাম না।’

জানতে চাইলে নগরের চন্দ্রিমা থানার ওসি মতিয়ার রহমান বলেন, ‘তামান্নার সঙ্গে কথা বলেছি। দেনা-পাওনার হিসেব না মেলায় মোস্তাফিজুরকে তালাক দিয়েছেন বলে তামান্না আমাদেরকে জানিয়েছেন। এখন বিষয়টা তো আদালতের ব্যাপার। মোস্তাফিজুর আমাদের কাছে একটা অভিযোগ দিয়েছেন। আমি একজন এএসআইকে তদন্ত করতে দিয়েছি। সে অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার মতো হলে আমরা তা নেব।’

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual5 Ad Code