প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৭ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২রা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৬শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

নিজেই অসুস্থ সিলেটের ওসমানী

editor
প্রকাশিত জুন ৩০, ২০২৫, ০৫:৫১ পূর্বাহ্ণ
নিজেই অসুস্থ সিলেটের ওসমানী

Manual2 Ad Code

স্টাফ রিপোর্টার:
সিলেট বিভাগের সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্টান এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপতাল। প্রতিদিন শত শত রোগী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের পদচারনায় মুখর থাকে হাসপাতালটি। নানা জটিল রোগের সমাধানের জন্য মানুষ এখানে ছুটে এলেও আবর্জনার ভাগাড় দেখে মনে হয় হাসপাতালটি নিজেই এখন মারাত্মক অসুস্থ। এ অবস্থা চলছে অনেক দিন ধরে। অথচ চিকিৎসা সেবার অন্যতম একটি প্রধান উপাদন হচ্ছে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা।

রবিবার সরজমিনে হাসাপাতালটি ঘুরে দেখা গেছে মারাত্মক অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ চারদিকে। হাসপাতালটির প্রতিটি ওয়ার্ড এবং এর আশপাশ এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ময়লার স্তুপ। দেখে আপনার মনে হতে পারে, এটি হাসপাতাল নাকি ময়লার ভাগাড়! অবস্থা এমন যে, রোগীর সেবা করতে আসা অনেক স্বজনই অসুস্থ হওয়ার উপক্রম। এনিয়ে রাগে দুঃখে ফেটে পড়েছেন কেউ কেউ।

Manual2 Ad Code

ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রতিটি ওয়ার্ডেই দেখা যায় ময়লার স্তূপ, যত্রতত্র খাবারের উচ্ছিষ্ট, সঙ্গে তীব্র দুর্গন্ধ। সঙ্গে যোগ করুন তেলাপোকা ও ছারপোকা অত্যাচার। ময়লা আছে প্রতিটি শয্যার আশপাশেও।

Manual7 Ad Code

রোগীর স্বজনদের কেউ কেউ এমনও বলেছেন যে, এ অবস্থায় রোগ সারার বদলেতো আরও বাড়বে। এমনকি অনেক স্বজনও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। বিষয়টি ডাক্তার এবং নার্সদের স্বাস্থ্যের জন্যও মারাত্মক হুমকির। হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ড থেকে শুরু করে সার্জারি, মেডিসিন, প্রসূতি, সিসিইউ বা ইমার্জেন্সি, সব বিভাগের অবস্থাই করুন। যেকোনো ওয়ার্ডে প্রবেশ করলে শৌচাগারের সামনে চোখে পড়বে প্লাস্টিকের ড্রামে জমিয়ে রাখা ময়লার স্তুপ। সেখান থেকে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। এমন কি ব্যবহৃত ইনজেকশনের অ্যাম্পুল, অপারেশনে ব্যবহৃত গজ-তুলাসহ অন্যান্য চিকিৎসা বর্জ্য যত্রতত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে। সেই সাথে হাসপাতালজুড়ে তেলাপোকা এবং ছারপোকার উপদ্রবের কথাও জানিয়েছেন অনেক রোগী ও স্বজন।

হাসপাতালের প্রশাসন আছে, সরকারি পরিচ্ছন্নতা কর্মীরাও আছে, প্রতি মাসে জনগনের পকেট থেকে লাখ লাখ টাকা বেতন ভাতাও আসছে নিয়মিত, অথচ দেখার কেউ নেই।

কথা হয় কয়েকজন রোগীর সাথে। নাম পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে ওসমানীতে চিকিৎসাধীন একজন রোগী মৌলভীবাজারের বড়লেখার বর্ণির আব্দুল আউয়াল (৫৬) বলেন, না রে বাবা। মাফ চাই। ই কিতা অবস্থা! উলসর কামড়ে ঘুমানির উপায় নাই। আয় তেলচুরাও। ময়লা আবর্জনার গন্ধর কথা আর কিতা কইতাম? না। আমি আর নায়। কোনো ক্লিনিকো বা অন্য কোনো বেরকারি হসপিটাল ভর্তি অইমু। দরকার অয় ভিক করি বিল দিমু।

সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার মাথিউরার সার্জন মিয়া এসেছেন তার ছোটো ভাইয়ের দেখাশোনা করতে। বললেন, সরকারে ফয়সা দেয়নানি ভাই? ইতা দেখাওরতো কেউ নাই। ইকি অবস্থা?

Manual4 Ad Code

তারা সবাই এ অবস্থা পরিবর্তনে দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ নিতে সরকার এবং ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ পরিচালক ডা. সৌমিত্র চক্রবর্তীর দায় চাপালেন যথারীতি অতিরিক্ত রোগী ও তাদের সঙ্গে আসা স্বজনদের ঘাড়ে। বললেন, নির্ধারিত বেডের বিপরীতে রোগীর সংখ্যা দ্বিগুনের চেয়েও বেশী। তাদের সঙ্গে আসা স্বজনদের সংখ্যাও বেশী। স্বাভাবিকভাবে ময়লা-আবর্জনাও বেশী।

Manual2 Ad Code

তিনি বলেন, তবুও আমরা চেষ্টা করছি। সংশ্লিষ্ট সুপারভাইজারদের সাথে সভা হয়েছে। ময়লা আবর্জনার বিষয়টি নিয়ে ব্যাপাক আলোচনা হয়েছে। তাদেরকে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছি। অবশ্যই পরিস্থিতি উত্তরণ হবে। জনবল সংকটও একটা বড় বিষয়। তবু আমরা চেষ্টা করছি।

ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নোংরা পরিবেশ, রোগীদের নিম্নমানের খাবার সরবরাহ, সেবায় অনিয়ম, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্বহীনতার অভিযোগ মোটেও নতুন নয়। আগেও বহুবার এমন অভিযোগ গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাসও দেয়া হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি শেষ পর্যন্ত ওই একই বৃত্তেই ঘুরপাক খাচ্ছে।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual3 Ad Code