প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৮ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৩রা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৭শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

মুড়িয়া হাওরে মাছের অভয়াশ্রম নেই

editor
প্রকাশিত জুলাই ২২, ২০২৫, ০৯:০৪ পূর্বাহ্ণ
মুড়িয়া হাওরে মাছের অভয়াশ্রম নেই

Manual3 Ad Code

 

স্টাফ রিপোর্টার:

বিয়ানীবাজারের মুড়িয়া হাওরের অস্তিত্ব এখন হুমকির মুখে। বিশাল হাওরজুড়ে কোথাও মাছের অভয়াশ্রম নেই। কারেন্ট ও মশারির জাল দিয়ে অবাধে মাছ শিকারের ফলে প্রজনন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এক সময় এ হাওরে ১১৫ প্রজাতির মাছ পাওয়া গেলেও বর্তমানে বেশির ভাগই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। রানী, বাঘা আইড়, রায়েক, মধু, পাবদা, চিতল, বড় বাইন, রিটা, বোয়াল, কৈ, মাগুর এখন আর চোখে পড়ে না। সেচের মাধ্যমে বিলে মাছ ধরার সময় শুধু পুঁটি, টেংরা, ভেদা, শিং, চাপিলা, মলা, দারকিনা জাত ছাড়া অন্য মাছ ধরা পড়ে না।

 

এ ছাড়া বন্যা ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে বালুমিশ্রিত পানি ঢুকে বিলগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে। আগে প্রচুর পাওয়া যেত এ রকম মাছ ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বন্যা ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে বালুমিশ্রিত পানি এসে হাওরের ১৯টি বিল অনেকটা ভরাট হয়ে গেছে। হাওরে হিজল-করস, বরুণ, চাইলা নলখাগড়া ও জারুলগাছ এখন আর চোখে পড়ে না। বিভিন্ন প্রজাতির রুপালি মাছও বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ফলে মুড়িয়া হাওরপাড়ের ১৭টি গ্রামের মানুষের জীবিকা নির্বাহ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।

 

গত ৫২ বছরে মুড়িয়া হাওরের উন্নয়নে কয়েকটি প্রকল্প গৃহীত হলেও বাস্তবায়িত হয়নি একটিও। জরুরি ভিত্তিতে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা না হলে এক দশকের মধ্যে হাওরের ভৌগোলিক অবকাঠামোর পরিবর্তনসহ পরিবেশ ভারসাম্য হবে হুমকির সম্মুখীন। এমন আশঙ্কা পরিবেশ ও হাওর বিশেষজ্ঞদের।

Manual2 Ad Code

 

 

Manual4 Ad Code

বিয়ানীবাজার উপজেলার মুড়িয়া ইউনিয়ন, বিয়ানীবাজার পৌরসভার সীমানা, শেওলা ও দুবাগ ইউনিয়নের কিছু অংশ নিয়ে হাওরের বিস্তৃতি। আয়তন আট বর্গমাইল। মুড়িয়া হাওর ভারত সীমান্ত ঘেঁষে অবস্থিত। ফলে বছরের পর বছর ওপার থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের বালুতে বিলগুলো ভরাট হয়ে গেছে। শীতকালে শুকিয়ে যায়। বর্ষাকালে পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয়।

 

মুড়িয়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আবুল খায়ের জানান, ১৫-২০ বছর আগে শীতকালে বালিহাঁস, গলগলি হাঁসসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির পাখির কলকাকলিতে হাওরাঞ্চল মুখরিত হয়ে উঠত। এখন মাছরাঙাও চোখে পড়ে না। হিজল-করস, জারুল, বরুণ, চাইলা নলখাগড়াসহ অনেক গাছ মরে গেছে। ফলে দেশি-বিদেশি পাখির সমাগমও কমে গেছে। হাওরের কোড়া পাখি, কড়িকাইট্টা, শামুকভাঙরি, চিল, পানকৌড়ি, নানা জাতের বক হারিয়ে যেতে বসেছে।

Manual4 Ad Code

 

ইউনিয়নের অধিবাসী ও সংবাদকর্মী হাফিজুর রহমান তামিম অনেকটা আশঙ্কা নিয়ে জানালেন, মুড়িয়া হাওর ভরাট হয়ে যাওয়ায় ওই অঞ্চল পরিবেশ বিপর্যয়ের দিকে ধাবিত হচ্ছে। জরুরি ভিত্তিতে হাওর উন্নয়নের উদ্যোগ না নিলে কয়েক বছরের মধ্যে বিয়ানীবাজার পৌরসভা, শেওলা ও দুবাগ ইউনিয়নসহ ওই অঞ্চলে বর্ষা মৌসুমে স্থায়ী বন্যার সৃষ্টি হবে এবং বিপুল পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতির শিকার হবেন ৫০ হাজার মানুষ। হাওরের উদ্ভিদ সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে শুধু শণ ও কলুম বন ছাড়া কোথাও কোনো গাছ চোখে পড়ে না। এখনও সামান্য যে কয়েকটি গাছ আছে পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে সেসবও মরে যাচ্ছে। বেতবন, পিচাশবন, নলখাগড়া, লুটকিবনও নেই। হাওরে এক-চতুর্থাংশ গাছ ও বন থাকা অত্যাবশ্যক হওয়া সত্ত্বেও সরকারি কিংবা বেসরকারি কোনো সংস্থার ওই বিষয়ে উদ্যোগ নেই।

 

Manual2 Ad Code

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, পরিকল্পিতভাবে মুড়িয়া হাওরের উন্নয়নে ১০০ কোটি টাকার প্রয়োজন। কয়েক বছর আগে ২০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হলেও অর্থের অভাবে তা বাস্তবায়িত হয়নি।

 

বিয়ানীবাজার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লোকমান হেকিম জানান, ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মুড়িয়া হাওর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই হাওর উন্নয়নে এখনই সরকার কার্য্যকর ব্যবস্থ না নিলে দেশি মাছসহ হাওরটি বিস্মৃতির অতল গহ্বরে হারিয়ে যাবে।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual7 Ad Code