প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

৮ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৭ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

বিয়ানীবাজারে চার মাস বন্ধ সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম, অনিশ্চয়তায় উপকারভোগী

editor
প্রকাশিত নভেম্বর ৮, ২০২৪, ১০:৪৪ পূর্বাহ্ণ
বিয়ানীবাজারে চার মাস বন্ধ সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম, অনিশ্চয়তায় উপকারভোগী

Manual3 Ad Code

স্টাফ রিপোর্টার:

Manual1 Ad Code

 

বিয়ানীবাজার পৌরশহরের কসবা গ্রামের বাসিন্দা রাজিয়া বেগম। বিধবা ৬৫ বছর বয়স্ক এই নারী গত চার মাস ধরে বয়স্ক ভাতা পান না। কেন পান না তার কারণ জানেন না তিনি।

 

একই গ্রামের কামাল হোসেনের ছেলে প্রতিবন্ধি ছেলে সাজন, বয়স ১৯ বছর। তিনিও চার মাস ধরে পাচ্ছেন না প্রতিবন্ধী ভাতা। কেন চার মাস ধরে ভাতা পাচ্ছেন না তার কারণ তিনিও জানেন না বলে বারবার খোঁজ নেওয়ার জন্য স্থানীয় পৌরসভা কার্যালয়ে আসেন।

জানা গেছে, এভাবেই শুধু রাজিয়া বেগম বা সাজনই নয়, প্রতিদিনই শত শত মানুষ ভাতার খবর নিতে আসেন সমাজসেবা কার্যালয়ে। কোনও সদুত্তর না পেয়ে তারা বাড়ি ফেরেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। দীর্ঘ চার মাস ভাতার টাকা না পেয়ে তারা কষ্টে আছেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

এদিকে বিয়ানীবাজার উপজেলা সমাজসেবা খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় নতুন তালিকা চূড়ান্ত না হওয়ায় চলতি (২০২৪-২৫) অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ভাতা দেওয়া হয়নি। আপাতত বন্ধ রয়েছে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় সকল প্রকার ভাতা। কবে নাগাদ তা সুবিধাভোগীদের দেওয়া হবে তা জানাতে পারেনি সমাজসেবা অফিস।

অভিযোগ রয়েছে, এ কার্যক্রমের আওতায় অনেক সচ্ছল ব্যক্তি ভাতা নিচ্ছেন। সচ্ছল ব্যক্তিদের ভাতাভোগীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব কাজ করেছে। গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় এ রকম অনেক সচ্ছল ব্যক্তিকে বাদ দিয়ে প্রকৃত উপকারভোগীদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর অংশ হিসেবে যারা এখন ভাতাভোগীর তালিকায় আছেন, তারা আসলেই ভাতা পাওয়ার যোগ্য কিনা, তা দেখতে বলা হয়েছে বলে জানা গেছে।

Manual4 Ad Code

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাধারণত প্রতি অর্থবছরের প্রথম তিনমাসের ভাতা একসঙ্গে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে দেওয়া হয়। কিন্তু এবার এখন পর্যন্ত কেউ ভাতা পাননি। সাধারণত তিন মাস অন্তর উপকারভোগীদের ভাতার টাকা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মোবাইল ফোনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

 

জানা গেছে, ভাতাভোগীর তালিকা নির্ধারণে যে নীতিমালা তাতে বলা হয়েছে, প্রতিটি ভাতা কর্মসূচি বাস্তবায়নে ইউনিয়ন, পৌরসভা, উপজেলা, জেলা ও সিটি করপোরেশন পর্যায়ে কমিটি রয়েছে। কমিটিতে জনপ্রতিনিধিকে সভাপতি হিসেবে রাখা হয়েছে। চলতি বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পরিবর্তনের পরে অনেক স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি অনুপস্থিত রয়েছেন। স্থানীয়রা বলছেন, অনেকেই রাজনৈতিক কারণে মামলায় পড়েছেন, আবার কেউবা একই কারণে পলাতক রয়েছেন। ফলে জটিলতা তৈরি হয়েছে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির কার্যক্রমের আওতায় ভাতা দেওয়ার ক্ষেত্রে। কবে নাগাদ এই জটিলতা কাটবে তা জানেন না কেউই।

ইউনিয়ন পর্যায়ে এ কমিটি না থাকলে বিকল্প কী হতে পারে, তা নীতিমালায় বলা আছে। সেখানে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাকে সভাপতি করা আছে। কিন্তু এ তথ্য অনেকে জানেন না। ফলে উপকারভোগীর তালিকা করতে দেরি হচ্ছে।

 

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিয়ানীবাজার পৌরশহরের শ্রীধরা গ্রামের জয়নাল জানিয়েছেন, এক নাগারে চার মাস ধরে ভাতা পাচ্ছি না। এতে কষ্ট তো হচ্ছে। কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি জানিয়েছেন, এই ভাতা পাওয়ার পর থেকে নিজের অনেক খরচ এটা দিয়ে মিটাতাম। এখন পারছি না। এখন অন্যের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে।

 

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শেওলা ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য মাহমুদুল হাসান এরশাদ বলেন, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির কার্যক্রমের আওতায় যারা ভাতা পেতেন তারা প্রতিনিয়তই খোজ-খবর নিতে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে আসেন। কিন্তু আমরা তাদের কোনও উত্তর দিতে পারছি না।

Manual3 Ad Code

উপজেলার লাউতা ইউপি চেয়ারম্যান দেলোওয়ার হোসেন বলেন, শুনেছি ভাতা পাচ্ছেন না উপকারভোগীরা। কেউ কেউ পরিষদে এসে খোঁজ নিচ্ছেন কবে নাগাদ তারা ভাতা পাবেন। আমাদের কাছে এর কোনও সমাধান তো নাই।

Manual6 Ad Code

বিয়ানীবাজার উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা অনুজ চক্রবর্তী জানান, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির কার্যক্রমের আওতায় কোনও ভাতা বন্ধ করা হয়নি। ভাতাভোগীদের কার্ড যাচাই-বাছাই চলছে, এটি অবিলম্বেই শেষ হবে। এবং ভাতা প্রদান শুরু হবে।

 

তিনি বলেন, এবার প্রথম প্রান্তিকের ভাতা দিতে কিছুটা দেরি হচ্ছে। তবে ভাতা বন্ধ হচ্ছে বলে যা শোনা যাচ্ছে, এটা পুরোপুরি গুজব।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual2 Ad Code