প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৮ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৩রা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৭শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

তিন নদী ঘেরা বিয়ানীবাজারে নৌপথ অচল, বন্ধ বহু ঘাট

editor
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ৪, ২০২৫, ০৯:৩০ পূর্বাহ্ণ
তিন নদী ঘেরা বিয়ানীবাজারে নৌপথ অচল, বন্ধ বহু ঘাট

Manual5 Ad Code

সুরমা-কুশিয়ারা নদীতে মাঝেমধ্যে এসব লঞ্চ চলাচলের দৃশ্য দেখা যায়/

 

মিলাদ জয়নুল:

Manual6 Ad Code

 

সুরমা, কুশিয়ারা আর সোনাই নদী বিধৌত বিয়ানীবাজার উপজেলা। এরপরও নদী বেষ্টিত এই জনপদের নৌপথ অচল। যোগাযোগ ব্যবস্থার সংস্কার, নাব্যতা সংকট আর নদীপথে ব্যবসা-বাণিজ্য হ্রাস পাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে উপজেলার নৌপথ। অনেক স্থানেই বন্ধ হয়ে গেছে নদী তীরের ঘাট আর পণ্য পরিবহণ। সেই সাথে আয় রোজগার কমেছে মাঝিমাল্ল­াসহ নদী তীরবর্তী এলাকার নানা পেশার মানুষের।

বিয়ানীবাজারে এখন বর্ষা মৌসুমে নদী উপচে লোকালয়ে প্রবেশ করে পানি। তলিয়ে যায় গ্রামের পর গ্রাম আর বসতি। শীতকালে জেগে ওঠে অসংখ্য চর। প্রায় ২০০ মিটার প্রস্থের সুরমা নদীর এখন ১৮০ মিটারই বালুচর। বছরের আট মাসই পানি থাকে না এই নদীতে। প্রায় ২৪৯ কিলোমিটার দৈর্ঘের সুরমা দেশের দীর্ঘতম নদী। এদিকে কুশিয়ারা বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। কুশিয়ারা নদীর উৎস হচ্ছে বরাক বা বরবক্র নদী। প্রাচীনকালের স্বাধীন রাজ্য মনিপুরের আঙ্গামিনাগা পাহাড়ের ৩০০ কিমি উঁচু স্থান থেকে বরাক নদীর উৎপত্তি। এই নদীর উত্তাল ¯্রােতে চলত পাল তোলা নৌকা। লঞ্চ, স্টিমার ও জাহাজ চলত সারা বছর। ঘাটে ঘাটে ছিল নৌকার ভিড়। ছিল কুলি-শ্রমিকদের কোলাহল। কুশিয়ারা নদীকে কেন্দ্র করে নদী তীরে ছিল সদা কর্মতৎপর সচল। অনেক পরিবারের জীবিকা নির্বাহের অবলম্বন ছিল এই কুশিয়ারা। কিন্তু এখন নদীর দিকে তাকানো যায় না। দিন দিন যেন সঙ্কীর্ণ হয়ে আসছে তার গতিপথ। অথৈ পানির পরিবর্তে কেবল কান্নার সুরই যেন ভেসে আসে কুশিয়ারার বুক থেকে। একসময় উপজেলার ব্যবসায়ীরা নানা ধরনের পণ্য কম খরচে নদীপথে আনা নেওয়া করত। প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে ব্যবসায়িক কাজে নদীপথে বিয়ানীবাজারে আসত লোকজন।

বিয়ানীবাজারের নৌপথ বন্ধ হওয়ায় ভোগান্তি বেড়েছে পণ্য ও যাত্রী পারাপারে। শেওলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জহুর উদ্দিন জানান, শেওলায় ছিল নদীবন্দর। প্রতিবেশী ভারতসহ নানা দেশ থেকে পণ্য বোঝাই নৌকা-জাহাজ আসতো। এখন কিছুই দেখা যায়না। তিনি বলেন, জকিগঞ্জ থেকে বিয়ানীবাজার হয়ে বালাগঞ্জ-ফেঞ্চুগঞ্জে যাত্রী ও মালামাল নিয়ে লঞ্চ চলাচল করেছে। বর্তমানে কয়েকবছর থেকে তা বন্ধ। সাহিত্য সংগঠক কবি আজিজ ইবনে গনি জানান, বৈরাগীবাজারে প্রতি মুহুর্তে ছিল লঞ্চের হাকডাক। এখন নৌকা পাওয়াই কঠিন। তিনি বলেন, এক সময় এখানকার জেটি ঘাট থেকে বিভিন্ন অঞ্চলে যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম ছিল নৌপথ। কুশিয়ারা নদী দিয়ে চলাচল করত বড় বড় পণ্যবাহী নৌকা, স্টিমার, লঞ্চসহ মালবাহী ট্রলার। চারখাই বাজারের সাথে ছিল সুরমা নদীর সংযোগ। বারইগ্রাম বাজার সোনাই নদীর তীরে। দুবাগ বাজার ছিল কুশিয়ারার উপর।

Manual5 Ad Code

বৈরাগীবাজারের নৌকার মাঝি মতিয়ার বলেন, এই ঘাট ছিল এক সময়ের বিখ্যাত। ফলে খুব সহজেই নানা এলাকার মালবাহী নৌযান এসে ভিড়ত এসব ঘাটে। এখন ঘাটের অস্তিত্ব প্রায় বিলীন হয়ে গেছে।

 

Manual3 Ad Code

 

স্থানীয় নৌকার মাঝি সেকেন্দার আলী জানান, বিয়ানীবাজারে এখন ঘরে ঘরে গাড়ি। প্রশস্থ রাস্তাঘাট আর আধুনিক জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত উপজেলাবাসী। কেউ নৌকায় চড়তে চায়না। সময় বেশী লাগে বিধায় পণ্য পরিবহণ করতে চাননা ব্যবসায়ীরা। আমাদের আয় কমেছে আশংকাজনহারে।

Manual1 Ad Code

 

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী দিপক রঞ্জন দাস বলেন, আধুনিক জীবনযাপনে অভ্যস্থ লোকজন এখন নৌকা-লঞ্চে ওঠতে চায়না। সুরমা-কুশিয়ারার নৌপথ বন্ধের জন্য কেবল নাব্যতা সংকট নয় মানুষের জীবনব্যবস্থা পাল্টে গেছে। এখন নদীগুলো খনন করলেই যে নৌপথ চালু হবে, তার গ্যারান্টি নেই।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual7 Ad Code