প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৬ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১লা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৫শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

কেঁচো খুঁড়তে বেরিয়ে আসছে সাপ

editor
প্রকাশিত জানুয়ারি ২১, ২০২৫, ০৫:৩৬ পূর্বাহ্ণ
কেঁচো খুঁড়তে বেরিয়ে আসছে সাপ

Manual2 Ad Code

স্টাফ রিপোর্টার:
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর দুর্নীতির ঝড়ে কাবু হয়েছে গেছেন শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ। তছনছ হয়ে গেছে তার রাজনৈতিক জীবন। যুক্তরাজ্যে মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে চলছে তদন্ত। আর বাংলাদেশে তার পারিবারিক দুর্নীতির অনুসন্ধানে কেঁচো খুঁড়তে বেরিয়ে আসছে সাপ। পরিবারের অন্য সদস্যদের পাশাপাশি সদ্য সাবেক এই ব্রিটিশ মন্ত্রী টিউলিপের মা-বাবার নামেও বিপুল সম্পদ পাওয়া যাচ্ছে।

দুদকের অনুসন্ধানে গাজীপুর মহানগরীর কানাইয়া এলাকায় ৩০ বিঘার বাগানবাড়িতে আছে বিশালাকার পুকুর, শান বাঁধানো ঘাট, অভিজাত ডুপ্লেক্স ও বাংলোর খোজ মিলেছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এই লীলাভূমি এখন অনেকটা পরিত্যক্ত। দেখভালের জন্য আছেন দুজন কেয়ারটেকার। আর যুক্তরাজ্য থেকে বাবা শফিক আহমেদ সিদ্দিক মাঝেমধ্যে খোঁজখবর নেন। শুধু এই বাগানবাড়ি নয়, গাজীপুরে রেহানা পরিবারের বিপুল সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এসব সম্পদের দালিলিক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতে কাজ করছে সংস্থার অনুসন্ধান টিম। দুদক থেকে প্রাপ্ত নথির সূত্র ধরে অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য।

Manual5 Ad Code

সরেজমিন দেখা গেছে, জয়দেবপুর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত গাজীপুর মহানগরীর কানাইয়া এলাকা। সেখানেই খোঁজ পাওয়া গেছে, ‘টিউলিপ’স টেরিটরি’ নামের বিশাল বাগানবাড়ির। কাঁচা-পাকা রাস্তা আর সবুজে ঘেরা নয়নাভিরাম এই বাগানবাড়ির মালিক পতিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার পরিবার। মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকির নামে বাগানবাড়িটির নামকরণ করা হয়েছে ‘টিউলিপ’স টেরিটরি’। বাগানবাড়ির ভেতরে সাদা টাইলসে মোড়ানো নামফলকে ইংরেজিতে লেখা-‘টিউলিপ’স টেরিটরি, কানাইয়া, গাজীপুর, ২৫ ডিসেম্বর ২০০৮।’ রক্তরাঙা ফুলে মোড়ানো প্রধান ফটকের দেওয়ালে লেখা বাগান বিলাস। কালো লোহার ফটক পার হয়ে ভেতরে ঢুকতেই চোখ আটকে যায় সারি সারি সুপারি বাগানে। সেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত তরুণ এক কর্মচারী জানান, ‘শুনছি এই বাগানবাড়ির মালিক শেখ রেহানা পরিবার। আবার এলাকার লোকজন বলে, এটার মালিক তারেক সিদ্দিক। তবে উনাদের সঙ্গে কখনো দেখা হয়নি। শুনছি এটা উনাদের। আমরা চাকরি করি। এখানে উনাদের ফ্যাক্টরিও আছে। ডিসপোজেবল অ্যাপ্রোন, সার্জিক্যাল গাউন, এগুলো এখানে তৈরি করে সিএমএইচ, এভারকেয়ার হাসপাতালে আমরা সাপ্লাই দেই।’

Manual1 Ad Code

আরেক কর্মচারী জানান, ‘আমি ছয় মাস ধরে এখানে চাকরি করি। সবাই বলে এটা শেখ রেহানা বাউন্ডারি। এলাকার লোকজন এটাকে শেখ রেহানার বাউন্ডারি হিসাবেই চেনেন।’

স্থানীয় লোকজন জানান, এখানে শেখ রেহানা, তারেক সিদ্দিক ও তার ভাইদের পাশাপাশি চারটি বাংলোবাড়ি আছে। একেকটির আয়তন ৩০ বিঘার কম নয়। এখানে এখন প্রতি শতাংশ জায়গার দাম গড়ে ৫ লাখ টাকা। সেই হিসাবে চারটি বাংলোর জায়গার দাম অন্তত ১৬৫ কোটি টাকা।

এক কর্মচারী জানান, ৫ আগস্টের পর স্থানীয় কিছু লোকজন দেওয়াল টপকে বাগানবাড়ির ভেতরে ঢুকে অভিজাত বাংলোতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। বাংলোতে থাকা সব মালামাল হামলাকারীরা নিয়ে যায়। স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, আগে সব জায়গা এক বাউন্ডারির মধ্যে ছিল। এখন ভেতর দিয়ে আলাদা আলাদা বাউন্ডারি দেওয়া হয়েছে। রেহানা, তার দেবর তারেক সিদ্দিক, রফিক সিদ্দিক ৩০ বিঘা করে ভাগ করে নিয়েছেন বলে তারা জানতে পেরেছেন। বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের জন্য তাদের আলাদা নামে মিটারও রয়েছে।

Manual3 Ad Code

বাগানবাড়ির ভেতরে সারি সারি গাছের মাঝে পাকা রাস্তা ধরে ৫-৭ মিনিট হেঁটে যাওয়ার পরই বিশালাকৃতির পুকুর। লাল টাইলসে মোড়ানো শান বাঁধানো ঘাট। ঘাটলার পাশে বসার জন্য পাকা ছাউনি। পাশের আরেকটা পুকুর দেখতে দিঘীর মতো বিশাল। দৃষ্টিসীমার মধ্যেই শত শত রাজহাঁসের কলকাকলিতে মুখর বাগানবাড়ি। হাঁস-মুরগির জন্য আছে পৃথক টিনের শেড।

প্রত্যক্ষদর্শীদের একজন বলেন, এখানে প্রতিবছর শীতের সময় শেখ রেহানা ছেলেমেয়ে ও নাতি-নাতনিদের নিয়ে এই বাগানবাড়িতে আসতেন। বাগানের ভেতর বড় ডুপ্লেক্স বাংলোতে তারা থাকতেন। ৩ থেকে ৫ দিনও তারা সেখানে অবস্থান করেছেন।

এদিকে অনুসন্ধানে দুদক কর্মকর্তারা জানতে পেরেছেন, ৫ আগস্টের আগে এই বাংলোবাড়িতে ঢাকা থেকে নিয়মিত লোকজন যেত। বিচার সালিশও বসত সেখানে। আর ওই বিচারকার্যের বিচারক থাকতেন শেখ রেহানার দেবর শেখ হাসিনার সাবেক উপদেষ্টা তারেক আহমেদ সিদ্দিক। এই বাগানের একটি মিটারের বিদ্যুৎ বিলের কপিতে তারেক আহমেদ সিদ্দিকের নামও রয়েছে। তবে বাংলোর প্রধান ফটকের দেওয়ালে তারেক সিদ্দিকের বড় ভাই রফিক আহমেদ সিদ্দিকের নাম লেখা আছে।

দুদকের কাছে তথ্য আছে, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে বাংলাদেশ স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পূর্ব পাশে অবস্থিত ১৫-১৬ বিঘার উপরে আরেকটি বাংলো আছে। যেটার মালিক শেখ রেহানা। প্রতিবছর শেখ রেহানা ও শেখ হাসিনা একান্তে সময় কাটাতে সেখানে যেতেন।

Manual1 Ad Code

এছাড়া সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা মাঝেমধ্যে সেখানে বৈঠক করতেন।

এছাড়াও বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের সামনে একটি বহুতল ভবন রয়েছে। সেখানে আছে নিটিং কারখানা। ওই কারখানার একজন ম্যানেজার জানিয়েছেন, কারখানার পাশে শেখ রেহানা তার ১০ তলা একটি ভবন কিছু দিন আগে বিক্রি করে দিয়েছেন।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual3 Ad Code