প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

৮ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৭ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

বারী সিদ্দিকীর মনে ছিল অন্য রকম কষ্ট

editor
প্রকাশিত নভেম্বর ২৪, ২০২৪, ০৩:২৫ অপরাহ্ণ
বারী সিদ্দিকীর মনে ছিল অন্য রকম কষ্ট

Manual3 Ad Code

বিনোদন ডেস্ক:

যাপিত জীবনে কাজে বিশ্বাসী ছিলেন তিনি। কাজ দিয়েই ভক্তরা তাঁকে চিনেছেন, ভক্তদের ভালোবাসা পেয়েছেন। তবে নিজের মূল্যায়ন নিয়ে সব সময়ই আফসোস করতেন। তিনি মনে করতেন, ‘জীবনে তেমন কিছুই হয়নি।’ শিল্পীর আক্ষেপের শেষ ছিল না। আফসোস করে জীবনের শেষ সময়ে এসে বারী সিদ্দিকী বলেছিলেন, ‘প্রতিবারই মনে হতো, কী ভাবলাম, আর কী হলো!’ যাঁকে গান দিয়ে ভক্তরা চেনেন, তিনি এখনো সমান জনপ্রিয়। সেই সংগীতশিল্পীর কাছে কেন প্রতিবার মনে হতো, ‘কী ভাবলাম, আর কী হলো?’

Manual3 Ad Code

শৈশবে পরিবারের সবাইকে দেখতেন গানবাজনা করতে। তবে পেশাদারভাবে গানে তেমন কেউ ছিলেন না। বারী সিদ্দিকীর মা গান জানলেও করতেন না। নারীদের গান করা তখন নিষেধ ছিল। তবে মা তাঁকে উৎসাহ দিতেন। পরে তাঁর ভাইয়েরা বাঁশি বাজানো শেখেন। এভাবে সংগীতের প্রতি ভালোবাসা জন্মে বারী সিদ্দিকীর; বিশেষ করে বাঁশির প্রেমে পড়ে যান। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি বাঁশি শেখার পেছনে সময় কাটাতে থাকেন। কিন্তু বাঁশি তাঁকে পরিচিতি এনে দিতে পারেনি; বরং নানা কথাও শুনেছেন। একসময় মনে কষ্ট নিয়েই তিনি গান গাইতে শুরু করেন। এই কষ্ট সারা জীবন বহন করেছেন।

গান গাওয়া শুরু করে বারী সিদ্দিকী সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। তাঁর গান শুনে অনেকেই অবাক হয়েছিলেন। তখন বারী সিদ্দিকীর কাছে অনেকে প্রশ্ন রেখেছিলেন, ‘এত বছর কেন নিজেকে লুকিয়ে রেখেছিলেন?’ প্রিয় বাঁশি না বাজিয়ে গান গেয়ে পরিচিতি পাওয়ার পরে তিনি দুঃখে হাসতেন আর পরিচিতজনদের বলতেন, ‘বাঁশি বাজিয়ে তাহলে বড় শিল্পী হওয়া যায় না?’

Manual1 Ad Code

অথচ দেশের বাইরে বাঁশির জন্যই বেশি পরিচিত ছিলেন বারী সিদ্দিকী। ১৯৯৯ সালে বিশ্ব খাদ্য সম্মেলনে এই উপমহাদেশ থেকে তিনি প্রতিনিধিত্ব করেন। পরবর্তী সময়ে গান নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকেন। তখন বাঁশির জন্য কষ্ট পেলেও বাঁশি ছাড়েননি তিনি। তবে গানও পাকাপোক্তভাবে শিখে এসেছিলেন। একসময় তিনি ভারতের পুনেতে চলে যান। সেখানে সংগীতের ওপর পড়াশোনা করেন। পরে দেশে ফিরে ঘরোয়া মজলিশে গান করতে থাকেন। এ সময়ে তিনি অনেক গানের সুরও করেছেন। উচ্চাঙ্গসংগীত শিখে সেটা ফোক গানের ব্যবহারের করতেন। এ কথা তিনি নিজেই জানিয়েছিলেন।

বারী সিদ্দিকী ২০০০ সালের দিকে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, সুবীর নন্দী, আলম আরা মিনু, ডলি সায়ন্তনী, বেবি নাজনীন, বাদশা বুলবুল, মনির খান, আসিফসহ অনেকের গানে একসময় সুর করা শুরু করেন। তখন বাঁশি বা গান নয়, তাঁর ডাক পড়তে থাকে সুরকার হিসেবে। এ ঘটনাও তাঁকে কষ্ট দিয়েছিল। কারণ, নিজের কাছে তাঁর বড় পরিচয় ছিল বংশীবাদক, সেখানে মূল্যায়ন না পেয়ে গান শুরু করলেন। পরে আবার গানের সুরকার হিসেবেও তাঁর ব্যস্ততা বেড়ে যায়।

এ ঘটনা প্রসঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘জীবন-যৌবন বাঁশির পেছনে ধ্বংস করলাম। হাত বাঁকা হয়ে গেছে। এত কিছু করে লাভ কী হলো? গান গাইতে হবে। আচ্ছা, ঠিক আছে। শুরু করলাম নিজের টাকা দিয়ে গান রেকর্ড করা। দু-তিনটা গান হুমায়ূন আহমেদ ভাইকে শোনাই। পরে হুমায়ূন ভাই “পুবালি বাতাস”সহ দুটি গান তাঁর সিনেমায় ব্যবহার করেন। গানগুলো তুমুল জনপ্রিয় হয়।’

আনুমানিক ১৯৯৩ সালের দিকে হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে বারী সিদ্দিকীর পরিচয়। সেই থেকে তাঁরা একসঙ্গে অনেক জনপ্রিয় গান করেছেন। তবে বংশীবাদক হিসেবে তাঁর কষ্ট সব সময়ই ছিল।

Manual5 Ad Code

বারী সিদ্দিকীর জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘শুয়াচান পাখি, আমি ডাকিতাছি, তুমি ঘুমাইছ নাকি’, ‘পুবালি বাতাসে’, ‘আমার গায়ে যত দুঃখ সয়’, ‘ওলো ভাবিজান নাউ বাওয়া’, ‘মানুষ ধরো, মানুষ ভজো’ প্রভৃতি। দেশের জনপ্রিয় এই গায়কের জন্ম ১৯৫৪ সালের ১৫ নভেম্বর। তিনি ২০১৭ সালের ২৪ নভেম্বর মারা যান। আজ তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী।

Manual4 Ad Code

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual8 Ad Code