প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৬ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১লা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৫শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

‘এবার বাঁচার আশা নেই’: শেষ বার্তা লিখছেন গাজাবাসী

editor
প্রকাশিত এপ্রিল ৬, ২০২৫, ১১:৩৯ পূর্বাহ্ণ
‘এবার বাঁচার আশা নেই’: শেষ বার্তা লিখছেন গাজাবাসী

Manual8 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

Manual1 Ad Code

 

Manual4 Ad Code

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের অবিরাম বোমাবর্ষণ ও হামলার মধ্যে ফিলিস্তিনিরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেষ বার্তা ও বিদায় চিঠি লিখে রাখছেন। তাদের আশঙ্কা, এবার তারা বাঁচবেন না। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের হামলা শুরুর পর থেকেই গাজাবাসী একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে, ইসরায়েলের আক্রমণ ও তাদের দৈনন্দিন জীবনযাপনের কথা বিশ্ববাসীকে জানাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে আসছেন। কিন্তু গত ২৪ ঘণ্টায় হতাশা ও মৃত্যুভয় নিয়ে লেখা পোস্টের সংখ্যা বেড়েছে।

গত বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ১১২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গত ১৮ মার্চ থেকে ইসরায়েলের হামলা পুনরায় শুরু হওয়ার পর এটিই সবচেয়ে ভয়াবহ দিন।

গাজার এক নারী নূরের পোস্ট করা ভিডিওতে দেখা গেছে, ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া একটি এলাকায় পাশের ভবনে ইসরায়েলি হামলা হচ্ছে। ভিডিওটির পটভূমিতে এক নারীর কান্নার শোনা যায়। পোস্টের ক্যাপশনে লেখা, ‘এবার মনে হচ্ছে আমরা বাঁচব না…’।

দক্ষিণ গাজার রাফাহ থেকে সাংবাদিক আবদুল্লাহ আলাত্তার শুক্রবার সকালের পোস্টে লিখেছেন, ‘এবার আমরা টিকতে পারব না বলে মনে হচ্ছে।’ এটি ব্যাপকভাবে শেয়ার হয়েছে। দেইর আল-বালাহর ফুটবল সাংবাদিক আবুবকর আমেদ লিখেছেন, ‘গাজাবাসী জানে, বিশ্ব তাদের নিরাশ করেছে। তাই তাদের হত্যা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।’

অনেক ব্যবহারকারী বিশ্ববাসী ও নেতৃবৃন্দকে গাজাবাসীর পক্ষে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। ইসরায়েলের অবরোধের কারণে গাজাবাসী শুধু বোমাবর্ষণই নয়, খাদ্য সংকটেরও শিকার হচ্ছেন। এক ফিলিস্তিনি লিখেছেন, ‘মাথার ওপর বোমা, নিচে ক্ষুধা—গাজা আজ ধুঁকছে। আর কত দিন আমরা এভাবে টিকে থাকব? বিশ্বকে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে!’

ইসরায়েলের যুদ্ধ এখনও তার মিত্রদের সমর্থন ও অর্থায়নে চলছে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের। গত মার্চে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন কংগ্রেসের স্বাভাবিক পর্যালোচনা ছাড়াই ইসরায়েলকে প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার অস্ত্র বিক্রি অনুমোদন করে। বৃহস্পতিবার স্বতন্ত্র সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স ট্রাম্প প্রশাসন কর্তৃক অনুমোদিত ৮.৮ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রি বন্ধের প্রস্তাব দেন। কিন্তু মাত্র ১৫ সিনেটর (যাদের মধ্যে টিম কেইন ও সাবেক প্রেসিডেন্টপ্রার্থী এলিজাবেথ ওয়ারেনও রয়েছেন) সমর্থন করায় প্রস্তাবটি ব্যর্থ হয়।

 

Manual7 Ad Code

বিদায় বার্তা ও আত্মশ্রদ্ধাঞ্জলি

অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মৃত্যুর আগে বিদায় বার্তা ও প্রার্থনা পোস্ট করছেন। গাজার লেখক ও ফার্মাসিস্ট ওমর হামাদ বৃহস্পতিবার রাতে এক্স (টুইটার)-এ লিখেছেন, তার লেখা কোনও পরিবর্তন আনতে পারেনি। তার লেখা, ‘প্রথমে উৎসাহী ছিলাম, যা লিখতাম সব শেয়ার করতাম। কিন্তু কী দেখলে বা পড়লে তোমরা জাগ্রত হবে—তা আমি জানি না। আমাদের জন্য নয়, তোমাদের বিবেকের জন্য, যাতে ঘুমোতে গিয়ে তোমাদের বিবেক কাঁদে না।’

৩ এপ্রিল আরেক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘গোটা গণহত্যার মধ্যে এত কাছে থেকে কখনও মৃত্যুকে অনুভব করিনি, যতটা করছি এখন।’

ইউরোপীয় হাসপাতাল ও আল-আকসা হাসপাতালের চিকিৎসক হামজা আলশারিফ লিখেছেন, ‘গাজার সর্বত্র বোমাবর্ষণ তীব্র হচ্ছে, রক্তের ছোঁয়া সবখানে।’ ১৮ মার্চ থেকে তার প্রোফাইলে পিন করা পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘আমি যদি মারা যাই, আমি শুধু একটি সংখ্যা নই—আমি একা এক গ্রহ, আমার স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা ছিল। আমাকে তোমাদের দোয়া থেকে ভুলো না, আমার কথা বলতে থাকো।’

গত মাসে ইসরায়েলের মিসাইলে আল জাজিরার ২৩ বছরী সাংবাদিক হোসাম শাবাত নিহত হন। এর কয়েক ঘণ্টা আগে প্যালেস্টাইন টুডের সাংবাদিক মোহাম্মদ মানসুরের বাড়িতে হামলা চালিয়ে তাকে, তার স্ত্রী ও ছেলেকে হত্যা করা হয়। হোসামের মৃত্যুর পর তার সহকর্মীরা তার আগে থেকে লেখা একটি বার্তা শেয়ার করেন: ‘আপনি যদি এটি পড়েন, তাহলে আমি ইসরায়েলি বাহিনীর টার্গেটে পরিণত হয়ে নিহত হয়েছি।’

এই আত্মশ্রদ্ধাঞ্জলি স্মরণ করিয়ে দেয় প্রখ্যাত ফিলিস্তিনি কবি ও শিক্ষাবিদ রিফাত আলারীর কথা, যিনি গত ডিসেম্বরে ইসরায়েলি হামলায় নিহত হন। তার ‘যদি আমাকে মরতেই হয়’ কবিতাটি ইসরায়েলের যুদ্ধের মধ্যে প্রতিবাদ ও আশার প্রতীক হয়ে উঠেছিল।

Manual1 Ad Code

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual8 Ad Code