প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৬ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১লা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৫শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

বিনিয়োগ সম্মেলন: স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে সুফল মিলবে

editor
প্রকাশিত এপ্রিল ১২, ২০২৫, ০৮:৫৯ পূর্বাহ্ণ
বিনিয়োগ সম্মেলন: স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে সুফল মিলবে

Manual2 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

 

সদ্য সমাপ্ত বিনিয়োগ সম্মেলন ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা মহলে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে লাভবান হবে দেশের অর্থনীতি। তবে মোটাদাগে এর সাফল্য নির্ভর করছে অবকাঠামো উন্নয়ন, সুদের হার হ্রাস, জ্বালানি নিশ্চয়তা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিরসনের ওপর। একই সঙ্গে বিনিয়োগবান্ধব রাজস্ব কাঠামোসহ অন্য নীতি সহায়তা নিশ্চিত করার দাবিও উঠে এসেছে ওই সম্মেলনে। আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলনের আয়োজক, পৃষ্ঠপোষক এবং অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

চার দিনের বিনিয়োগ সম্মেলন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মিলনমেলায় পরিণত হয়। উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছিলেন সরকারি নীতিনির্ধারকরাও। আয়োজকরা দাবি করেছেন, এবারের বিনিয়োগ সম্মেলনের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদ- দুভাবেই লাভবান হবে।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি ও বাংলাদেশ রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি মো. হাতেম বলেন, এবারের বিনিয়োগ সম্মেলনে বাংলাদেশ স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে- দুভাবেই লাভবান হবে। তবে এর সুফল কাজে লাগাতে হলে ও বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়াতে বিরাজমান প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করতে হবে।

ব্যবসায়ী এই নেতা বলেন, এবারের সম্মেলনের মাধ্যমে বিশ্বকে জানানো সম্ভব হয়েছে যে বাংলাদেশ বিনিয়োগর জন্য প্রস্তুত। বর্তমান সরকার বিনিয়োগকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।

Manual6 Ad Code

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) নতুন সভাপতি ও ইফাদ গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান তাসকীন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট-২০২৫ দেশের স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সংযোগ বৃদ্ধির একটি কার্যকর প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করেছে। এই সম্মেলন শুধু বিদেশি বিনিয়োগ আহ্বানের উদ্দেশ্যেই নয়, বরং স্থানীয় উদ্যোক্তাদের জন্যও নেটওয়ার্কিং এবং ভবিষ্যৎ অংশীদারত্ব গড়ে তোলার একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ তৈরি করেছে।

ব্যবসায়ী এই নেতা বলেন, ‘গার্মেন্টস, স্বাস্থ্য, ফার্মাসিউটিক্যাল, স্টার্টআপ, অবকাঠামো খাতসহ একাধিক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে এসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ হলো ধারাবাহিক পর্যবেক্ষণ এবং বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ ধরে রাখা। বিনিয়োগকারীরা নীতির ধারাবাহিকতা ছাড়াও নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেছেন। যদি বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ অংশীজনদের সঙ্গে নিয়ে সময়োপযোগী নীতি সংস্কার এবং যথাযথ তদারকির মাধ্যমে এসব প্রতিবন্ধকতা দূর করতে সক্ষম হয়, তাহলে আমি মনে করি এই সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হবে।’

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. আবুল বাশার মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘এবারের বিনিয়োগ সম্মেলনে ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীর চেয়ে বেশি আশা জেগেছে স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে, যা আমি ইতিবাচকভাবে দেখছি। তবে কোনো কিছুই শেষ পর্যন্ত কাজে আসবে না, যদি বিনিয়োগের বাধাগুলো দূর করা না হয়। এবারের বিনিয়োগ সম্মেলনে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ দেখে সরকারি নীতিনির্ধারকদের মধ্যে বিনিয়োগের বাধা দূর করতে গুরুত্ব দেখতে পাচ্ছি। এটাই বিনিয়োগ সম্মেলনের সবচেয়ে বড় অর্জন বলে মনে হচ্ছে।’

Manual1 Ad Code

অর্থনীতির এই বিশ্লেষক বলেন, ব্যাংকঋণের সুদের হার কমাতে হবে। অবকাঠামো উন্নয়ন করতে হবে। শিল্পপার্ক বা অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো শিল্প-কারখানা নির্মাণের জন্য উপযুক্ত করতে হবে। শতাধিক সরকারি কারখানা বন্ধ করে ফেলে রাখা হয়েছে। সেগুলো আধুনিক করে আবার চালুর কথা থাকলেও কিছুই করা হয়নি। এসব কারখানার অব্যবহৃত জায়গা বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের জন্য সরবরাহ করতে হবে। জ্বালানি-সংকট দূর করতে হবে।

একই মত জানিয়ে আরেক অর্থনীতিবিদ বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এবারের বিনিয়োগ সম্মেলনের মাধ্যমে বড় অর্জন হলো- নতুন সরকার বিনিয়োগ বাড়াতে চায়, তা সবাইকে জানানো হয়েছে। অর্থ পাচার, লুটপাট, ঘুষ, দুর্নীতি থেকে বের হয়ে এসে নতুন প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে বিনিয়োগ বাড়াতে সরকার কাজ করছে বলে জানানো হয়েছে। এবারে বিনিয়োগ আনার পালা। বিডায় আধুনিক ও গতিশীল নেত্বত্ব এসেছে। এসব তরুণ নেতৃত্বই পারবে বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়াতে। তবে এদের ধরে রাখার দায়িত্ব সরকারের।

 

Manual8 Ad Code

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় প্রণীত প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে জানা যায়, ৭ থেকে ১০ এপ্রিল রাজধানী ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিনিয়োগ সম্মেলন-২০২৫-এ দেশি-বিদেশি কমপক্ষে ৪৫০-এর মতো বিনিয়োগকারী অংশ নিয়েছিলেন। বিনিয়োগের অমিত সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে বিনিয়োগ সম্মেলনের আয়োজকরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়াতে কী কী সুবিধা দেওয়া হয়েছে। তরুণ প্রজন্মকে সামনে রেখে ২০৩৫ সাল পর্যন্ত বিনিয়োগের রূপরেখা তুলে ধরেন তারা। সম্মেলনে ব্যাপক আগ্রহ দেখিয়েছেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের বেশ কয়েকটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে সম্মেলনে। বাংলাদেশে বড় বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সফররত দক্ষিণ কোরিয়ার ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল, স্পেনের খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ইন্ডিটেক্স, সিমেন্ট খাতের কোম্পানি লাফার্জহোলসিম ও চীনের অ্যাপারেল কোম্পানি হান্ডা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। এসব বিনিয়োগের মাধ্যমে ১৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হওয়ার কথা রয়েছে। বাংলাদেশ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে (বিএসইজেড) ১৩ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে সুইডিশ কোম্পানি নিলর্ন। চলতি বছর বাংলাদেশে ১ বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করতে চেয়েছে ব্রিকস গঠিত নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এনডিবি)। মহাকাশ নিয়ে গবেষণার জন্য নাসার সঙ্গে চুক্তি করেছে বাংলাদেশ। ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে বিশ্ববিখ্যাত ফ্যাশন ব্র্যান্ড এইচঅ্যান্ডএম, প্রাণ-আরএফএল ও আইএফসির মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি সই হয়েছে। দেশের নতুন উদ্যোক্তাদের অর্থায়নের জন্য ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার একটি বিশেষ তহবিল গঠনের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। স্টার্টআপ খাতে গতি সঞ্চারে ১০ লাখ ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বিডা ও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান কোয়েস্ট ওয়াটার গ্লোবাল ইন্ক-এর মধ্যেও একটি গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। এই চুক্তির আওতায় প্রতিষ্ঠানটি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে সুপেয় পানির শোধনাগার নির্মাণে কাজ করবে। সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক দুটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে ক্যানসার হাসপাতাল নির্মাণসহ স্বাস্থ্য খাতে শত মিলিয়ন ডলারেরও বেশি বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে পৃথক দুটি সমঝোতা স্মারক সই করে।

বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, ‘এবারের সম্মেলনের মাধ্যমে বিশ্বের বিনিয়োগকারীদের আহ্বান জানানো হলো, আপনারা বাংলাদেশে আসেন এবং বিনিয়োগ করেন। আমরা জানি, অনেক দিন থেকেই বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য অনেকগুলো বাধা রয়েছে। এর আগে অনেক বড় বড় বিনিয়োগকারী বাংলাদেশে এসেও সরকারের সহযোগিতা না পেয়ে ফিরে গেছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা জমি চেয়েছেন, জমি দেওয়া নিয়ে সময়ক্ষেপণ করা হয়েছে। শুল্ক, কর ভ্যাট কাঠামো বিনিয়োগবান্ধব করা হয়নি। ব্যাংক থেকে কোনো ধরনের সহযোগিতা করা হয়নি। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, বিশেষভাবে এক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আরেক মন্ত্রণালয়ের দূরত্বের কারণে অনেক বিনিয়োগ হয়নি। এবারের বিনিয়োগ সম্মেলনের মাধ্যমে বর্তমান সরকারকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছি যে বিশ্বের যেকোনো উন্নত দেশের মতো বাংলাদেশেও বিনিয়োগের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত জয়গা।’

Manual5 Ad Code

তিনি বলেন, ‘এবারের বিনিয়োগ সম্মেলনে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিনিয়োগ করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। সরকারের ঊর্ধ্বতন মহল এসব দেখে বিনিয়োগের বাধাগুলো দূর করতে আরও বেশি আন্তরিক হয়েছে। আমরা তাদের সঙ্গে বসে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিনিয়োগের বাধা দূর করতে কাজ শুরু করব।’

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual5 Ad Code