প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

২১শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৬ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১লা রজব, ১৪৪৭ হিজরি

৯১৫ অর্থ পাচারকারী, হাসিনা পরিবারেরই ১০০ জনের বেশি

editor
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৫, ১১:১৭ পূর্বাহ্ণ
৯১৫ অর্থ পাচারকারী, হাসিনা পরিবারেরই ১০০ জনের বেশি

Manual1 Ad Code

 

Manual3 Ad Code

প্রজন্ম ডেস্ক:

Manual4 Ad Code

জাতিসংঘের মহাসচিবসহ সংস্থাটির সংশ্লিষ্টদের কাছে ৯১৫ জন শীর্ষ অর্থ পাচারকারীর নামের তালিকা দেওয়া হয়েছে। এসব পাচারকারী কোন দেশে, কী পরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন তার তালিকাও দেওয়া হয়েছে।

একই সঙ্গে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের কাছে সেসব দেশে কী পরিমাণ অর্থ পাচার করা হয়েছে এবং ওই সব দেশে কে কোথায় কতটা সম্পদ করেছেন তার তালিকা দেওয়া হয়েছে। এসব তালিকা দিয়ে পাচারের অর্থ ফেরত আনতে সহযোগিতা চেয়েছেন খোদ প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বিশেষ করে ওই সব দেশ থেকে পাচারের অর্থ ফেরত আনতে বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা গেলে সব ধরনের আইনি সহযোগিতা যেন পান সে কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় সূত্র জানায়, সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর পাচারের অর্থ ফেরত আনতে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের নিয়ে ১১ সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করেছে। টাস্কফোর্সের সদস্যরা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), সিআইডি, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), বাংলাদেশ ব্যাংক, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, কাস্টমস হাউসসহ আমদানি-রপ্তানি সম্পর্কিত অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে অর্থ পাচারকারীদের নামের তালিকা করেছে। তালিকায় দুই হাজারের বেশি নাম আছে। এর মধ্যে ৯১৫ জন শীর্ষ অর্থ পাচারকারী হিসেবে আছেন। এসব পাচারকারী কোন দেশে কতটা অর্থ পাচার করেছেন তাও উল্লেখ আছে। পাচারের অর্থ দিয়ে কোন দেশে কী পরিমাণ সম্পদ করেছেন তার হিসাব করেছে সরকার।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে টাস্কফোর্সের এক সদস্য বলেন, টাস্কফোর্স থেকে পাচারকারীদের নাম, পাচারের পরিমাণ, সম্পদের পরিমাণ সব নিয়ে তালিকা করা হয়েছে। এই তালিকা ধরে নিয়ে পাচারের অর্থ ফেরত আনতে কাজ চলছে। পাচারকারীদের নিয়ে তৈরি এই তালিকায় ৯১৫ জন শীর্ষ পাচারকারীর পাচার করা অর্থ আদায়ে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। এই ৯১৫ জন শীর্ষ পাচারকারীর পাচার করা অর্থের পরিমাণ অনেক বেশি।

তিনি বলেন, পাচারের অর্থ বিভিন্ন দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে গচ্ছিত রাখা হয়েছে। পাচারের অর্থ দিয়ে বিদেশে সম্পদ কেনা হয়েছে এবং ব্যবসা-বাণিজ্য করা হয়েছে। পাচারের অর্থ ফেরত আনতে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের কাছে সহযোগিতা চাওয়া হচ্ছে।

Manual4 Ad Code

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, বাংলাদেশ থেকে শীর্ষ অর্থ পাচারকারীদের চিহ্নিত করা হয়েছে। এদের পাচার করা অর্থ এবং পাচারের অর্থ দিয়ে কেনা সম্পদ বিক্রি করে অর্থ আদায়ের চেষ্টা করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সাধারণ মানুষের অর্থ কিছু অসৎ ব্যক্তি বিভিন্ন কৌশলে পাচার করে নিয়ে গেছেন। পাচারের অর্থ ফেরত এনে সাধারণ মানুষের কল্যাণে ব্যয় করা হবে। পাচারের অর্থ ফেরত আনতে জাতিসংঘের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। যেসব দেশে পাচার হয়েছে, সেসব দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হচ্ছে।

পাচারকারীদের তালিকায় শেখ হাসিনা, শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা, বোনের কন্যা টিউলিপ সিদ্দিকী, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়সহ শেখ পরিবারের প্রায় ১০০ সদস্য আছেন। বিগত সরকারের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীদের অনেকেই আছেন। ৫০ জনের মতো সংসদ সদস্য, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার মেয়র ৯ জন, কাউন্সিলর ১১ জন, আমলা ১৫ জন এবং সরকারের কাছের লোক বলে পরিচিত শতাধিক বড় ব্যবসায়ী আছেন।

তালিকায় আছেন সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হক, আসাদুজ্জামান খান কামাল, ওবায়দুল কাদের, শাজাহান খান, সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, টিপু মুনশি, দীপু মনি, সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, প্রতিমন্ত্রী আরিফ খান জয়, জুনায়েদ আহমেদ পলক, জুনায়েদের স্ত্রী কনিকা, আসাদুজ্জামান খান কামালের স্ত্রী লুৎফুল তাহমিনা খান। ব্যবসায়ীদের মধ্যে বেক্সিমকো গ্রুপ, ওরিয়ন গ্রুপ, সামিট গ্রুপ, নাসা গ্রুপ ও থার্ড ওয়েভ টেকনোলজিস লিমিটেড (নগদ লিমিটেড) এবং ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেডের নাম আছে।

সেনা কর্মকর্তা ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক, চট্টগ্রাম বন্দরের সাবেক চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েলও আছেন। সাবেক অতিরিক্ত সচিব হারুন অর রশীদ বিশ্বাস, যুগ্ম সচিব ধনঞ্জয় কুমার দাস, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) মনির হোসেন, জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফ মাহমুদ অপু ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোল্লা ইব্রাহিম হোসেন আছেন। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, ঢাকা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ মাহমুদ, সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান, আব্দুর রহমান বদি ও তার স্ত্রী শাহীন আক্তারের নাম আছে।

Manual2 Ad Code

সরকারের জমা দেওয়া তালিকার শুরুতে বর্তমান সরকারের আমলে প্রণীত শ্বেতপত্রের হিসাব উল্লেখ করে বলা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্বে আসার পর পাচার ও দুর্নীতির তথ্য নিয়ে শ্বেতপত্র প্রণয়ন করা হয়। এতে রাজনীতিক, সামরিক ও বেসামরিক আমলা, বিচার বিভাগের অনেকেই পাচারে অংশ নিয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। গত সাড়ে ১৫ বছরে বাংলাদেশ থেকে ২৮ উপায়ে দুর্নীতির মাধ্যমে প্রায় ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অবৈধভাবে পাচার হয়েছে বলে শ্বেতপত্রে উঠে এসেছে।

যুক্তরাষ্ট্র সফররত প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের বলেছেন, ২৩৪ বিলিয়ন ডলার বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে। সেই টাকাটা ফেরানো ড. ইউনূসের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এই বিষয়ে তিনি আলাপ করেছেন। বিশ্বব্যাংক এ ব্যাপারে আমাদের সাহায্য করবেন আশা করছি।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ পাচার করা হয়েছে। এসব অর্থ ফেরত আনা সম্ভব। আইনি উপায় আছে। বিদেশে ল ফার্ম নিয়োগ দিয়ে এবং ওই সব দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহায়তা নিয়ে পাচারের অর্থ ফেরত আনা সম্ভব। ওই সব দেশে পাচারের অর্থে যেসব সম্পদ গড়া হয়েছে, তা বিক্রি করে অর্থ আনতে হবে। সরকারকে সেই পথে যেতে হবে। সময় লাগলেও পাচারের অর্থ দেশে আনা সম্ভব।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual3 Ad Code