প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

২১শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৬ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১লা রজব, ১৪৪৭ হিজরি

দেশের রাজনীতি নিয়ে বিদেশে বিক্ষোভ, ভাবমূর্তি সংকটে বাংলাদেশিরা

editor
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৫, ১১:৫৩ পূর্বাহ্ণ
দেশের রাজনীতি নিয়ে বিদেশে বিক্ষোভ, ভাবমূর্তি সংকটে বাংলাদেশিরা

Manual7 Ad Code

 

Manual1 Ad Code

প্রজন্ম ডেস্ক:

বাংলাদেশের কোনো রাজনীতিকের বিদেশ সফর মানেই প্রবাসী দলীয় নেতাকর্মীদের বিক্ষোভ অনেকটা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। আগে যেটা স্লোগান ও কালো পতাকা প্রদর্শনে সীমাবদ্ধ ছিল, এখন তা রূপ নিচ্ছে আরও উত্তপ্ত ঘটনাপ্রবাহে। ডিম-জুতা নিক্ষেপের মতো অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটছে। যাতে বিদেশের মাটিতে নষ্ট হচ্ছে বাংলাদেশিদের ভাবমূর্তি।

এই অশোভন সংস্কৃতি চলে আসছে গত এক দশকের বেশি সময় ধরে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরগুলোতে বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের বিক্ষোভ ছিল নিয়মিত ঘটনা। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের যুক্তরাষ্ট্র সফরেও ঘটছে দৃশ্যপটের পুনরাবৃত্তি। বরং বিক্ষোভের ধরন পাল্টে আরও বিতর্কিত ঘটনা ঘটানো হচ্ছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করতে না দেওয়া বিদেশের মাটিতে এ ধরনের বিক্ষোভের বড় কারণ। তবে এ ধরনের বিক্ষোভ শুধু দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে না, বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশিদের প্রবেশও সংকুচিত হয়ে আসছে।

Manual1 Ad Code

সাবেক রাষ্ট্রদূত আবদুল হাই বলেন, ‘বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে এ ধরনের বিক্ষোভ করা অত্যন্ত অনুচিত। এতে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশিদের সেসব দেশে প্রবেশ করতে দেওয়ার বিষয়ে বিধি-নিষেধ তৈরি করে।’

 

 

তিনি বলেন, ‘যারা এ ধরনের প্রতিবাদ করছেন তাদের বেশিরভাগই কিন্তু সেসব দেশের নাগরিক। তাদের তেমন কোনো অসুবিধা হবে না। কিন্তু সাধারণ বাংলাদেশিরা যখন এসব দেশে যেতে চাইবেন তাদের পথ সংকুচিত হয়ে আসবে।’

 

বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করা আবদুল হাই বলেন, ‘বাংলাদেশিদের মতো এত বাজেভাবে নিজ দেশের রাজনৈতিক প্রতিবাদ ভিন দেশের মাটিতে করতে দেখা যায় না। এমনকি ভারতের কোনো রাজনৈতিক দলের শাখা বিদেশে পাবেন না।’

Manual1 Ad Code

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘এ ধরনের আচরণ অসভ্যতা ও অসহিষ্ণুতার বহিঃপ্রকাশ। বিদেশের মাটিতে এ ধরনের আচরণ দেশের ভাবমূর্তিকে নষ্ট করে। পাশাপাশি আমরা যে রাজনৈতিকভাবে অসহিষ্ণু- এ জিনিসটা সবার সামনে আরও পরিষ্কার করে দেয়।’

যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করতে যাওয়া এক বাংলাদেশি সাংবাদিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘রাজনীতির নামে বিভিন্ন দলের কর্মীরা যা কর্মকাণ্ড করেন, মুখের যে ভাষা ব্যবহার করেন তা বর্ণনা করার মতো ভাষা নেই। এরা নিজের দেশের মানুষকে অন্য দেশের মাটিতে বসে হেয় করেন। আমার সঙ্গে দক্ষিণ এশীয় কয়েকটি দেশের শিক্ষার্থীও পড়ালেখা করেন। মাঝে মধ্যে এসব বিষয়ে আলাপ উঠলে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়।’

 

 

যুক্তরাষ্ট্রের বার্ড কলেজের ফ্যাকাল্টি মেম্বার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ফাহমিদুল হক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আওয়ামী লীগের রুদ্ধ শাসনামলে দেশের ভেতরে কথা বলা কিংবা রাজনীতি করার সুযোগ না থাকায় বিদেশেই আন্দোলন-অ্যাক্টিভিজম, কূটনীতি এমনকি সাংবাদিকতার কাজও হয়েছে। তখন দেশের ভেতরে দলগুলোর সীমিত কার্যক্রম থাকলেও এখন আওয়ামী লীগের কার্যক্রমই দেশে নিষিদ্ধ। ফলে রাজনীতি, অ্যাক্টিভিজম, ষড়যন্ত্র কিংবা ভবিষ্যৎ রাজনীতির স্বপ্ন—সব বিদেশে গিয়েই হচ্ছে।’

তিনি আরও লেখেন, ‘এখানে শুধু অতিথি বা সফরসঙ্গী রাজনীতিবিদদের নিরাপত্তার সমস্যা নয়, বরং লক্ষ্য রাখতে হবে দেশের ভিতরের রাজনৈতিক পরিবেশ, লেজিটিমেট পলিটিক্স যারা করছেন এবং যারা সরকারের অংশ, তাদের চিন্তা ও ব্যবস্থা কেমন ছিল।’

 

 

এ বিষয়ে কথা বলতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কেউ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেনকে লক্ষ্য করে ডিম নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মিজানুর রহমান এ ঘটনায় জড়িত ছিলেন। পরে তাকে আটক করে নিউইয়র্ক পুলিশ।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে যোগ দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সফরসঙ্গী হয়ে আখতার হোসেন নিউইয়র্কে যান। স্থানীয় সময় ২২ সেপ্টেম্বর (সোমবার) বিকেল ৫টার দিকে বিমানবন্দরের চার নম্বর টার্মিনাল থেকে বের হওয়ার সময় এ ঘটনা ঘটে।

এর আগে এমন ঘটনার মুখে পড়েন অন্তর্বর্তী সরকারের অন্য উপদেষ্টারাও। ২০২৪ সালের নভেম্বরে জেনেভা বিমানবন্দরে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের বিরুদ্ধে স্লোগান, চিৎকার-চেঁচামেচি ও উত্তেজক আচরণের ভিডিও ভাইরাল হয়।

চলতি বছরের আগস্টে নিউইয়র্ক কনস্যুলেটে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে তথ্য ও সম্প্রচার বিষয়ক উপদেষ্টা মাহফুজ আলমও প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন। সে সময় তার উদ্দেশ্যেও ডিম ও পানির বোতল নিক্ষেপ করা হয় এবং কনস্যুলেটের কাচের দরজা ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে।

এর আগে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত এক দশকে পশ্চিমা বিশ্বে যে সফরই করেছেন, সেখানেই বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা তাকে প্রতিরোধের চেষ্টা করেছেন। কখনো কালো পতাকা প্রদর্শন, কখনো স্লোগান কিংবা বিক্ষোভের মাধ্যমে তারা অনাস্থা প্রকাশ করেছেন তার প্রতি। বিশেষ করে নিউইয়র্ক ও লন্ডনে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে বেশি।

Manual2 Ad Code

 

এর আগে ২০১৮ সালে লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশনে বিএনপি-যুক্তরাজ্য শাখার নেতাকর্মীরা জোরপূর্বক ঢুকে ভাঙচুর করেন। সেখানে থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার আগে প্রায় ১০ মিনিট হাইকমিশনের নিচতলায় হট্টগোল চলতে থাকে। এ ঘটনায় যুক্তরাজ্য স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি নাসির আহমদ শাহীনকে আটক করা হয়। বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়েছিল জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায় কেন্দ্র করে, এতে দুই শতাধিক নেতাকর্মী অংশ নেন।

কূটনৈতিক সূত্র জানায়, এবার জাতিসংঘের ৮০তম সাধারণ অধিবেশনে অংশ নিতে নোবেলজয়ী ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার সফরে সরকারের বাইরে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি থেকে মোট ছয়জন প্রতিনিধি সরকারি খরচে তার টিমে যুক্ত হয়েছেন। নিউইয়র্কে তাদের বরণে বর্ণাঢ্য আয়োজন করেন প্রবাসী সমর্থকরা। তবে তাদের প্রতিহত করার ঘোষণা দেয় স্থানীয় আওয়ামী লীগ।

এ প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে নোট ভারবাল পাঠিয়ে ড. ইউনূস ও তার সফরসঙ্গীদের বাড়তি নিরাপত্তা চায় অন্তর্বর্তী সরকার। তবে সোমবার সরকার প্রধানসহ সরকারি কর্মকর্তারা নিরাপদে বের হয়ে যেতে পারলেও হেনস্তার শিকার হন সফরসঙ্গী রাজনীতিবিদরা।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual8 Ad Code