প্রজন্ম ডেস্ক:
আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দৃশ্য ও অদৃশ্য নানা চাপে রয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গত ২৭ সেপ্টেম্বর রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় মিলনায়তনে নির্বাচন কর্মকর্তা সম্মেলনে এমনটিই জানিয়েছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন।
সিইসি বলেছেন, যে পরিস্থিতিতে দেশটা যাচ্ছে তাতে আমাদের কাজ আদায় করা কঠিন। দৃশ্যমান ও অদৃশ্য অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। সেসব মোকাবিলা করে এগিয়ে যাচ্ছি। আমি সবসময় পজেটিভ চিন্তা করি। কোনো কিছু নেগেটিভ দেখি না। বিশেষ পরিস্থিতিতে আগামী নির্বাচন হচ্ছে। বিশেষভাবে এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে। নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের বেআইনি কাজের নির্দেশনা দেওয়া হবে না জানিয়ে সিইসি বলেন, আইনি, বিধিমোতাবেক, সঠিকভাবে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হবে। নির্বাচন কর্মকর্তাদের ওয়াদা করতে হবে—কোনো দল ও ব্যক্তির পক্ষে নয়, আগামী নির্বাচনে সঠিক ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করবেন। যে ওয়াদা, শপথ আমরা প্রধান বিচারপতির কাছে করেছিলাম সেই দায়িত্ব আপনাদের অর্পিত করলাম। সেই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে হবে।
আগামী নির্বাচন ঘিরে নানা চাপ দৃশমান থাকলেও অদৃশ্য চাপ নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছে জনমনে। আগামী নির্বাচনে কি এমন অদৃশ্য চাপ রয়েছে ইসির কিংবা কেমন হবে আগামী নির্বাচন? এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন বিশ্লেষক ও নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য আবদুল আলীম বলেন, অদৃশ্য চাপ বলতে আগে যে বিভিন্ন সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল ওই সময়ের সঙ্গে যদি তুলনা করি সেই হিসেবে বর্তমান সময়ে আইনশৃঙ্খলার যে পরিস্থিতি তাতে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। এটা নিয়ে কেউ কোনোরকম গেম খেলছে কি না জানি না। আইনশৃঙ্খলা তো অনেক বড় একটা ব্যাপার। অনেক কমপাউন্ড। হয়তো কেউ কেউ হতে পারে এই অবস্থার সঙ্গে জড়িত বা নির্বাচন বন্ধ করার জন্য কাজ করাচ্ছে। এটা হতে পারে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক সম্প্র্রদায়ের মধ্যে কেউ কেউ হয়তো বাংলাদেশে নির্বাচন চাচ্ছে না। উনি (সিইসি) হয়তো এগুলোই বুঝিয়েছেন।
তিনি বলেন, যাদের দিয়ে মাঠপর্যায়ে নির্বাচন পরিচালনা করা হতো তাদের অনেকেই এবার থাকবে না। নতুন লোক নেওয়া তাদের প্রশিক্ষিত করে তোলা—এগুলোও একটি চাপ। প্রবাসীদের ভোটে আনাটাও একটা চ্যালেঞ্জ। হয়তো এটার পেছনেও কারও কারও হাত থাকতে পারে। যাতে পরিস্তিতি অন্যরকম হয়ে যায়। অর্থাৎ একটা শক্তি আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি হয়তো অন্যরকম করার চেষ্টা করতে পারে। এই সবগুলো মিলে অদৃশ্য চাপ থাকতে পারে। তিনি বলেন, সরকার তো মনে-প্রাণেই নির্বাচন চাচ্ছে, নির্বাচন কমিশনও চাচ্ছে নির্বাচন হোক। এটাও আরেকটা চাপ তবে এটি একটি পজেটিভ চাপ। রাজনৈতিক দলগুলোর বিভক্তিও ইসির জন্য একটা চাপ হতে পারে। আমরা চাই নির্বাচনের তারিখ নিয়ে সব দল যেন একটা ঐকমত্য অবস্থায় থাকে। পলিটিক্যাল দলগুলোর মধ্যে বিভক্তি থাকলে নির্বাচন কমিশন স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না।
অদৃশ্য চাপের বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলী বলেন, নির্বাচন কমিশনের জন্য এখন প্রতিটি মুহূর্তই চাপ ও চ্যালেঞ্জের। যেকোনো কাজ করতে গেলেই চাপ আছে। তবে এই চাপ কমিশনের নেওয়ার কথা না। তার সামনে আইন আছে সংবিধান আছে সে সেভাবেই কাজ করবে। তবে সব কিছু আমলে নিলে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যাবে। তিনি বলেন, বিদেশিরা নির্বাচনে যে স্ট্যান্ডার্ড মেইনটেন করতে বলে সেটি তো আমাদের দেশে কোনোভাবে সম্ভব হয় না।
সাবেক এই অতিরিক্ত সচিব আরও বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলার যে পরিস্থিতি সেখানেও একটা হিডেন চাপ কাজ করছে। নির্বাচন কমিশনের চিন্তা করতে হবে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আনতে হবে এবং নিরাপত্তা দিতে হবে। নির্বাচন কমিশনের জন্য বড় সমস্যা হচ্ছে পুরোনো কোনো কর্মকর্তারা এখন ইসিতে নেই। তারা অবসরে চলে গেছে। পুরোনোদের অভিজ্ঞতার অনেক দাম।
অনেক কমিশনই সাধারণ নির্বাচন করার আগে কিছু স্থানীয় নির্বাচন করেছে। কারণ নির্বাচন করলে অভিজ্ঞতা হয়। যেমন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কীভাবে কাজ করবে, তাদের মনোবল কী পর্যায়ে আছে। তারপর প্রশাসনের বিরুদ্ধে বড় ধরনের অভিযোগ রয়েছে। যে যাই বলুক মানুষ তো ঘুরেফিরে এরাই সুতরাং সব মিলিয়ে ইসিকে সজাগ থাকতেই হবে।
তবে এসব অদৃশ্য চাপের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, এসব অদৃশ্য চাপের বিষয়ে বলা যাবে না। এটা খুব কনফিডেনশিয়াল বিষয়। এটা বলা ইথিকসে পরবে না। আমাদের ইন্টারনাল বিষয় থাকে, সাংগঠনিক সমস্যা থাকে। দেখা গেল যে একজন কর্মকর্তাকে বদলি করা হলো এটার জন্য অনেকের ইয়ে থাকে… এগুলোই আর কি। নির্বাচনসম্পর্কিত ওই রকম উল্লেখ্যযোগ্য কোনো চাপ তো দেখছি না।
তিনি বলেন, আমরা কর্মকর্তাদের অ্যাসোসিয়েশন নিয়ে যে মিটিংটা করেছি সেখানে আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেক ধরনের দাবি-দাওয়া আছে। কিন্তু আমাদের ইন্টারন্যাশন্যাল ও জাতীয় স্ট্যান্ডার্ডের বাইরে তো যাওয়া যায় না। সেখানে চাওয়ার তুলনায় পাওয়াটা কম হয় আর কি। আর সরকারের যে বাজেট বা সরকারের যে স্ট্যান্ডার্ড সেই অনুযায়ী সরকার দিতে একটু চিন্তা-ভাবনা করে। সেই অর্থে কোনো কিছু চাওয়া কোনো কিছু পাওয়া একটু কঠিন আর কি। ধরেন ১০টা পোস্ট ক্রিয়েট করতে চাচ্ছি কিন্তু সরকার দিতে পারছে না। এগুলো আমাদের সচিবালয়ের বিষয় আর কি অন্য কোনো চাপ নয়। তিনি বলেন, নির্বাচন ঘিরে বর্হিবিশ্বের কোনো চাপ নেই।
Sharing is caring!