প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

২২শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৭ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২রা রজব, ১৪৪৭ হিজরি

৫০ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়: আবাসিক সুবিধা নেই ৬০ ভাগ শিক্ষার্থীর

editor
প্রকাশিত অক্টোবর ২, ২০২৫, ০৯:২২ পূর্বাহ্ণ
৫০ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়: আবাসিক সুবিধা নেই ৬০ ভাগ শিক্ষার্থীর

Manual5 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

দেশে উচ্চশিক্ষার প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। তবে সে অনুপাতে বাড়েনি তাদের সুবিধা। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রয়েছেন চরম আবাসিক সংকটে। নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসা শিক্ষার্থীদের জন্য এটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পর্যাপ্ত আবাসিক সুবিধা না থাকায় ৫০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬০ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী আবাসিক হলের বাইরে থেকে নিজেদের খরচে পড়াশোনা করছেন। আবার অনেক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে অনাবাসিক। ফলে অনেক শিক্ষার্থী পাননি হল জীবনের স্বাদ। বাসা ভাড়া করে অথবা মেসে থেকে শেষ করতে হচ্ছে তাদের শিক্ষাজীবন। এছাড়া হলের বাইরে বসবাসকারী শিক্ষার্থীদের অনেক সময় অতিরিক্ত ভাড়া, যাতায়াতে সময় ও অর্থ ব্যয়, বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সমস্যাসহ নানা ধরনের ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়। তাদের নিরাপত্তাহীনতার ইস্যুটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। নারী শিক্ষার্থীরা বেশি অনিরাপদ। ফলে ৬০ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থীকে শিক্ষা গ্রহণের পাশাপাশি মানসিক, শারীরিক ও আর্থিক চাপে পড়তে হচ্ছে, যা সুষ্ঠু শিক্ষার পরিবেশকে ব্যাহত করছে।

Manual2 Ad Code

 

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, দেশের ৫৩ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজ-মাদ্রাসা ছাড়া) অধ্যয়নরত মোট শিক্ষার্থীর মধ্যে ৬০ দশমিক ৩৫ শতাংশের আবাসিক সুবিধা নেই। বাকি ৩৯ দশমিক ৬৫ শতাংশের এই সুবিধা আছে।

দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সারা দেশের বিভিন্ন এলাকার শিক্ষার্থীরা পড়তে আসেন। আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া অনেক পরিবারের সন্তানও এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পর্যাপ্ত আবাসিক সুবিধা না থাকায় (আবাসিক হল ও সিট কম) তারা বড় ধরনের ধাক্কা খান।

বর্তমানে দেশে অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয় ১৭১টি। এর মধ্যে ৫৫টি পাবলিক ও ১১৬টি বেসরকারি। অধিভুক্ত কলেজ ও মাদ্রাসাশিক্ষার্থীসহ দেশের সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মোট শিক্ষার্থী ৬৯ লাখ ২ হাজার ২৩৭ জন।

সম্প্রতি প্রকাশিত ইউজিসির সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আবাসন সংকটসহ উচ্চশিক্ষার নানা তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয় ২০২৩ সালের তথ্যের ভিত্তিতে। প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, অধিভুক্ত কলেজ-মাদ্রাসা ছাড়া ২০২৩ সালে শিক্ষা কার্যক্রম চালু হওয়া ৫০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ছিলেন ২ লাখ ৯৬ হাজার ৬৯৬ জন। তাদের মধ্যে আবাসিক সুবিধা ছিল ১ লাখ ১৭ হাজার ৬৪৪ জনের। এর মধ্যে ৬৬ হাজার ২৩৮ ছাত্র এবং ৫১ হাজার ৪০৬ জন ছাত্রী। ইউজিসির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সাল পর্যন্ত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মোট আবাসিক হল, হোস্টেল ও ডরমিটরি ছিল ২৬২টি।

অভিযোগ আছে, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরিকল্পিতভাবে বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের সংখ্যা বাড়িয়েছে। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ানো হয়। তবে আবাসিক সুবিধা সেই তুলনায় বাড়েনি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এসএমএ ফায়েজ বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক সমস্যা একদিনে সৃষ্টি হয়নি। এটি বহুদিনের সমস্যা। এই সমস্যা সমাধান করতে সিরিয়াস পদক্ষেপ নিতে হবে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক দূর-দূরান্তের গরিব পরিবারের সন্তানরা পড়তে আসেন। সেখানে এসে তারা থাকার জায়গা পান না। শিক্ষার্থীদের আবাসিক সংকটের বিষয়টি খুবই অমানবিক। বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে আরও বেশি সমস্যা। এটা দ্রুত সমাধান করা উচিত। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে বিষয়টি গুরত্ব সহকারে দেখতে হবে। পাশাপাশি ইউজিসিও সহযোগিতা করবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিক্ষার্থীরা যদি অন্তত আবাসিক সুবিধার নিশ্চয়তা না পান, তাহলে তাদের শিক্ষার মান ও মনোযোগ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আবাসন সমস্যার সমাধান ছাড়া একটি মানসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব নয়। শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ হ্রাস এবং পড়াশোনায় মনোনিবেশ নিশ্চিত করতে হলে দ্রুত এই সংকট দূর করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সরকারের যৌথ উদ্যোগে দ্রুত এই সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।

Manual5 Ad Code

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক সুবিধা রয়েছে মাত্র ৪৪ শতাংশ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬৫ শতাংশ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ২২ শতাংশ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ৯৯ শতাংশ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৬ শতাংশ, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাড়ে ৩৩ শতাংশ শিক্ষার্থীর। বাকি শিক্ষার্থীর আবাসিক সুবিধা নেই। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়েও ৪৭ শতাংশ শিক্ষার্থীর আবাসিক সুবিধা নেই। শিক্ষার্থীদের আবাসিক সুবিধায় পিছিয়ে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে আরও আছে-জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়ায় অবস্থিত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, টাঙ্গাইলে অবস্থিত মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুরে অবস্থিত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিরাজগঞ্জে অবস্থিত রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়।

Manual3 Ad Code

ইউজিসির তথ্য বলছে, কৃষি ও কৃষিশিক্ষার প্রাধান্য থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় তুলনামূলকভাবে আবাসিক সুবিধা বেশি। ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সব শিক্ষার্থীর জন্যই আবাসিক সুবিধা ছিল। এছাড়া রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯৮ শতাংশ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯২ শতাংশ, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৬ শতাংশ, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৯ শতাংশ, হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য আবাসিক সুবিধা ছিল।

Manual6 Ad Code

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual2 Ad Code