প্রজন্ম ডেস্ক:
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ হিসেবে ১২ ফেব্রুয়ারি দিনটি ব্যাপক আলোচনায় রয়েছে। তবে নির্বাচনের দিনক্ষণ আরও এক সপ্তাহ এগিয়ে আনতে চাইছে অন্তর্বর্তী সরকার। কেননা রোজার আগেই সরকার গঠন প্রক্রিয়া শেষ করতে চাইছে তারা। জানা গেছে, ৩ ডিসেম্বর নির্বাচনি তফসিল ঘোষণা হতে যাচ্ছে। আর নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ৫ ফেব্রুয়ারি।
গত আগস্টে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষণা দেন। নির্বাচন কমিশনও সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নেওয়ার কথা জানিয়েছে। নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ ঘোষণা করা না হলেও ভেতরে ভেতরে তা ইতিমধ্যেই চূড়ান্ত করা হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের ঘনিষ্ঠরা বলছেন, সরকার নির্বাচন করতে বদ্ধপরিকর। নানা মহল নির্বাচন বিলম্ব করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তবে প্রধান উপদেষ্টা ঘোষিত সময়ের মধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। সরকার চাইছে রোজা শুরুর আগেই নির্বাচন ও সরকার গঠন প্রক্রিয়া সমাপ্ত করতে। এসব বিবেচনায় নিয়ে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহের বৃহস্পতিবার ৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হলে তারাও এতে সায় দিয়েছেন।
অন্যদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেছেন, যেহেতু ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, তাই ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তফসিল ঘোষণা করা হবে।
নাসির উদ্দীন আরও বলেন, ‘ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে রমজানের আগে নির্বাচনের লক্ষ্য নিয়ে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমরা আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোচ্ছি। আমাদের যত চ্যালেঞ্জ আসুক, একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যত ধরনের সমস্যা আসুক, আমরা আইনের মাধ্যমে মোকাবিলা করব।’ গত শনিবার বিকালে বরিশালে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
সূত্র জানায়, আগামী ৩ ডিসেম্বর বুধবার নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। সেদিনই তিনি নির্বাচনের তারিখ জানিয়ে দেবেন।
প্রধান উপদেষ্টার সিনিয়র সহকারী প্রেস সেক্রেটারি ফয়েজ আহম্মদ বলেন, প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত সময় অনুয়ায়ী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। রাজনৈতিক দলগুলো ইতিমধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দিয়েছে।
এদিকে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে সংশয় প্রকাশ করলেও প্রতিটি রাজনৈতিক দল জোরেশোরে নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর কথা জানিয়েছে।
প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি ইতিমধ্যে প্রার্থী নির্বাচন করার জন্য কয়েক দফা জরিপ সম্পন্ন করে প্রায় ২০০ প্রার্থী চূড়ান্ত করার কথা জানিয়েছে। ইতিমধ্যে সারা দেশে বেশ কিছু প্রার্থীকে গণসংযোগ চালানোর সবুজ সংকেতও দিয়েছে দলটি। এ ছাড়া সমমনা ও জোটের শরিক দলগুলোকে আসন ছাড় দেওয়ার আলোচনাও চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি।
বিএনপির একাধিক সূত্রের দাবি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নভেম্বরের শেষ দিকে দেশে ফিরবেন। দেশে ফেরার আগে চলতি মাসের শেষ দিকে তার ওমরাহ পালনের জন্য সৌদি আরবে যাওয়ার কথা রয়েছে। সেখান থেকে লন্ডন হয়ে দেশে ফিরবেন তিনি। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান নির্বাচনি প্রচারে অংশ নেবেন। তাদের নিরাপত্তার জন্য দুটি বুলেটপ্রুফ গাড়ি কেনা হয়ে গেছে।
জামায়াত ইসলামী সূত্রে জানা গেছে, দলটি গাজীপুর-৬ ও নরসিংদী-৫-এ দুটি আসন ছাড়া জাতীয় সংসদের বাকি ২৯৮টি আসনের প্রার্থী ঠিক করে প্রায় চার মাস আগেই নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু করেছে। এখন কেন্দ্রভিত্তিক প্রস্তুতি শুরু করেছে দলটি। এর অংশ হিসেবে পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণ কর্মশালা এবং ভোটকেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধে কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি করা হচ্ছে। আগামী এক-দেড় মাসের মধ্যে এ কার্যক্রমগুলো শেষ হবে বলে জামায়াতের উচ্চপর্যায়ের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে।
জামায়াতে ইসলামী সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিটি রাজনৈতিক দল নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। জামায়াত ইসলামীও নির্বাচনের কাজ শুরু করেছে। প্রাথমিকভাবে ৩০০ জনের তালিকা করা হয়েছে। পরে চূড়ান্ত করা হবে। তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের সময় বেশি নেই, আমাদের প্রার্থীরা মানুষের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন, ভোট চাইছেন। আশা করছি জনগণ আপনাদের পক্ষে রায় দেবে।
বিএনপির একাধিক নেতা জানান, নির্বাচন যখনই হোক তারা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। এ বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সময়ের আলোকে বলেন, আমাদের নেতা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বৈঠক করেন। সেখানে এপ্রিল থেকে এগিয়ে এনে ফেব্রুয়ারিতে রোজার আগে নির্বাচন করার বিষয়ে আলোচনা হয়। বৈঠক শেষে যৌথ ব্রিফিংয়ে বিষয়টি তুলে ধরা হয়। আমি মনে করি, রোজার আগেই দেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি বলেন, শুধু ফেব্রুয়ারি নয়, বিএনপি যেকোনো মুহূর্তে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। দেশের মানুষ ভোট দেওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে। দীর্ঘ সময় ধরে বিএনপি শত অত্যাচার সহ্য করে মানুষের ভোটাধিকারের জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে গেছে। ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে জনগণ ন্যায়সংগতভাবে বিএনপিকে বিবেচনা করবে বলে আশা ব্যক্ত করেন তিনি।
Sharing is caring!