প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

২২শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৭ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২রা রজব, ১৪৪৭ হিজরি

গণ-অভ্যুত্থানে পালাতে বাধ্য হওয়া নেতারা

editor
প্রকাশিত অক্টোবর ২০, ২০২৫, ০৭:৩৫ পূর্বাহ্ণ
গণ-অভ্যুত্থানে পালাতে বাধ্য হওয়া নেতারা

Manual6 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

বিশ্বের বহু নেতা, যাদের একসময় অজেয় মনে করা হতো, শেষ পর্যন্ত জনগণের বিপ্লব, সামরিক অভ্যুত্থান কিংবা গণবিক্ষোভের মুখে দেশত্যাগে বাধ্য হয়েছেন বা গোপনে আত্মগোপনে চলে গেছেন কারাগার, মৃত্যুদণ্ড বা উত্তরসূরিদের প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থার হাত থেকে বাঁচতে। এর মধ্যে আছেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সবচেয়ে সাম্প্রতিক উদাহরণ হলো মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রে রাজোয়েলিনা। তিনি এ সপ্তাহে সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন। ভারত মহাসাগরের এই দ্বীপরাষ্ট্রে সপ্তাহব্যাপী জেন জি নেতৃত্বাধীন আন্দোলনের পর তার পতন ঘটে। সেখানে তরুণরা দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও বিদ্যুৎ সংকটের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছিল। বার্তা সংস্থা এপি এমন কিছু নেতার তথ্য দিয়ে রিপোর্ট করেছে। সে অনুযায়ী, নিচে দেখা যাক সাম্প্রতিক ইতিহাসে এমন আরও কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা কীভাবে অনুরূপ পরিণতির মুখে পড়েছিলেন।

বাশার আল-আসাদ: ২০২৪ সালে সিরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ বিদ্রোহী বাহিনী দামেস্কের দিকে অগ্রসর হলে রাশিয়ায় পালিয়ে যান। এর মধ্যদিয়ে তার ৫১ বছরের পারিবারিক শাসনের অবসান ঘটে। ১৩ বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধে আসাদকে রাশিয়া ও ইরান সমর্থন দেয়। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তাকে, তার পরিবার ও ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের আশ্রয় দেন এবং সিরিয়ায় প্রত্যর্পণ করতে অস্বীকৃতি জানান।

Manual7 Ad Code

শেখ হাসিনা: আগস্ট ২০২৪-এ বাংলাদেশের দীর্ঘতম মেয়াদে দায়িত্ব পালনকারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্র নেতৃত্বাধীন গণ-আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন এবং দেশ ছাড়েন। জাতিসংঘ মানবাধিকার দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, নিরাপত্তা বাহিনীর দমনপীড়নে কমপক্ষে ১,৪০০ জন নিহত হন। হাসিনা বর্তমানে ভারতে নির্বাসনে আছেন। তিনি প্রথমবার ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী হন। পরে ২০০৮ সালে পুনরায় ক্ষমতায় ফিরে আসেন এবং টানা ১৬ বছর শাসন করেন। তার পিতা শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রনেতা। তিনি ১৯৭৫ সালে সামরিক অভ্যুত্থানে নিহত হন।

কেপি শর্মা ওলি: নেপালে জেন জি আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত হন নেপালের বর্ষীয়ান প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি। ২০২৫ সালের ৯ই সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করতে বাধ্য হন তিনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করে দেয়ার প্রতিবাদে তরুণদের আন্দোলন ভয়াবহ আকার ধারণ করে। ফলে ক্ষমতা ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয় ওলির সরকার।

Manual3 Ad Code

গোটাবাইয়া রাজাপাকসে: ২০২২ সালের জুলাই মাসে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের কারণে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোটাবাইয়া রাজাপাকসে মালদ্বীপে পালিয়ে যান। অর্থনৈতিক ধস দেশটিকে খাদ্য ও জ্বালানির জন্য নগদ অর্থহীন করে তোলে, ঋণখেলাপি অবস্থায় ফেলে এবং মানুষকে রান্নার গ্যাস ও পেট্রোলের জন্য দিনের পর দিন লাইনে দাঁড়াতে বাধ্য করে। রাজাপাকসে পরিবারের রাজনীতি তখন দেশের জনগণের ক্ষোভের মূল লক্ষ্য ছিল। তিনি ও তার ভাই প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দ রাজাপাকসে, আরও দুই ভাই ও এক ভাগ্নে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।

Manual4 Ad Code

ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ: ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে গণবিক্ষোভে প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ রাজধানী কিয়েভ ত্যাগ করে রাশিয়ায় পালিয়ে যান। বিক্ষোভের সূত্রপাত ঘটে যখন তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে রাশিয়ার কাছ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলারের ঋণ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি সমঝোতার প্রতিশ্রুতি দিলেও রাতে গোপনে দেশ ছাড়েন। পরে সংসদ তাকে অভিশংসিত ঘোষণা করে এবং তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। রাশিয়ান বাহিনীর সহায়তায় তিনি ক্রাইমিয়া হয়ে রাশিয়ায় পৌঁছান বলে পরবর্তীতে জানা যায়।

মুয়াম্মার গাদ্দাফি: ২০১১ সালের লিবিয়ার গৃহযুদ্ধের সময় ৪০ বছরের শাসন হারান মুয়াম্মার গাদ্দাফি। আরব বসন্তের প্রভাবে বিদ্রোহীরা রাজধানী ত্রিপোলি দখল করলে গাদ্দাফি তার অনুগতদের নিয়ে পালিয়ে যান এবং নিজের শহর সির্তে-তে লুকিয়ে পড়েন। ২০ই অক্টোবর, ২০১১-তে পালানোর চেষ্টা করলে তার কাফেলায় ন্যাটোর বিমান হামলা হয়। পরবর্তীতে বিদ্রোহীরা তাকে একটি বড় নর্দমার পাইপে লুকিয়ে থাকা অবস্থায় আটক করে হত্যা করে। তার মৃতদেহ কয়েকদিন প্রকাশ্যে প্রদর্শনের পর মরুভূমির একটি গোপন স্থানে দাফন করা হয়।

Manual1 Ad Code

মার্ক রাভালোমানানা: মাদাগাস্কারের ষষ্ঠ প্রেসিডেন্ট মার্ক রাভালোমানানা ২০০৯ সালে সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন। নেতৃত্বে ছিলেন তখনকার রাজধানী আন্তানানারিভোর মেয়র আন্দ্রে রাজোয়েলিনা। তিনি ক্ষমতা হস্তান্তর করে দক্ষিণ আফ্রিকায় পালিয়ে যান। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ঘটনাটিকে ‘অভ্যুত্থান’ হিসেবে ঘোষণা করে এবং অর্থনৈতিক সহায়তা স্থগিত করে। পরে তার অনুপস্থিতিতে হত্যার ষড়যন্ত্রের মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। পাঁচ বছর নির্বাসনের পর দেশে ফিরে তিনি গৃহবন্দি হন, কিন্তু পরের বছর মুক্তি পান।

জ্যাঁ-বারট্রান্ড আরিস্টাইড: হাইতির প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জ্যাঁ-বারট্রান্ড আরিস্টাইড দুইবার সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন। প্রথমবার ১৯৯১ সালে তিনি মাত্র ছয় মাস দায়িত্ব পালন করেন এবং ভেনেজুয়েলায় পালিয়ে যান। ১৯৯৪ সালে মার্কিন সহায়তায় তিনি পুনর্বহাল হন এবং ১৯৯৬ সালে মেয়াদ শেষ করেন। ২০০০ সালে আবার নির্বাচিত হলেও ২০০৪ সালে জনবিক্ষোভে সরকার পতনের মুখে পদত্যাগ করেন। তিনি মার্কিন চার্টার্ড বিমানে করে মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে পালিয়ে যান এবং পরে দক্ষিণ আফ্রিকায় আশ্রয় নেন। ২০১১ সালে তিনি দেশে ফিরে আসেন।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual4 Ad Code