প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

৭ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২২শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৬ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

সংকট উত্তরণে নির্বাচনই একমাত্র পথ

editor
প্রকাশিত ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২৫, ০৯:০৩ পূর্বাহ্ণ
সংকট উত্তরণে নির্বাচনই একমাত্র পথ

Manual5 Ad Code

স্টাফ রিপোর্টার:
বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি বড় পরিবর্তন হয়েছে। এ পরিবর্তনটা হচ্ছে-ফ্যাসিবাদের পরাজয় হয়েছে এবং উত্থান হয়েছে গণতান্ত্রিক শক্তির। সেটি স্বাভাবিকভাবে হয়নি। ছাত্র-জনতার একটি গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে হয়েছে। একটি নতুন ধারা সৃষ্টি করতে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ সাধারণত গণতান্ত্রিক শক্তির জন্য খুব কষ্টকর। এ গণ-অভ্যুত্থানের পটভূমি রচিত হয়েছে গত ১৫ বছরে। দীর্ঘ দেড় দশক আওয়ামী ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে এ দেশের মানুষের লড়াই-সংগ্রামের ফলে গণ-অভ্যুত্থান সম্ভব হয়েছে। রাজনৈতিক দল হিসাবে বিএনপি ২০০৯ সাল থেকেই ফ্যাসিবাদের বিরোধিতা করেছে। বিশেষ করে ২০১১ সালে যখন সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে কেয়ারটেকার সিস্টেমটাকে পুরোপুরি বাতিল করে দেওয়া হলো, তখন থেকে যে সংকট, তা আরও ঘনীভূত হয়। যে কারণে স্বাভাবিক পদ্ধতিতে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়াটা একেবারে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তখন থেকে আমরা আন্দোলন আরও জোরদার করেছি। সেই আন্দোলনে দল হিসাবে আমরা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়েছি। আমাদের প্রায় ৬০ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয়েছিল। তার সুবিশাল অংশ সাধারণ মানুষের পাশে থেকে, রাষ্ট্রযন্ত্রের ষড়যন্ত্র ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে ঢাল হয়ে রুখে দাঁড়ায়। ২০ হাজারেরও বেশি নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। সাতশর মতো নেতাকর্মী গুম হয়েছিল। ইলিয়াস আলীর মতো একজন সাহসী নেতা, যিনি সংসদ-সদস্য ছিলেন; তিনিসহ হিরু, পারভেজ গুম হয়েছে। অসংখ্য ছাত্রনেতাও গুম হয়েছিল। অনেকের এখন পর্যন্ত কোনো হদিস খুঁজে পাওয়া যায়নি।

একইভাবে তারা সংবিধানকে পুরোপুরি কেটেছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলেছিল। এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ক্ষমতায় টিকে থাকা। টিকে থাকার লক্ষ্যেই সেদিন তারা সংবিধানকে কাটাছেঁড়া করেছে। নির্বাচনব্যবস্থাকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিয়েছিল। শুধু ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার জন্য যে নির্বাচন, যেটাকে ড. আলী রীয়াজ বলেছেন, ‘হাইব্রিড ইলেকশন’, সেই হাইব্রিড ইলেকশন সবশেষে বিরোধী দল ছাড়াই গত বছরের ৭ জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। গত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনেই কিন্তু কোনো ভোটার উপস্থিত ছিল না বললেই চলে। অন্যদিকে অর্থনীতিকে পুরোপুরিভাবে একটা অলিগার্কের ভেতর ফেলা হয়েছিল। মাফিয়াচক্র সৃষ্টি করেছিল। অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছিল। ব্যাংকগুলো লুটপাট হয়েছে। লাখো-কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে। প্রশাসনের দলীয়করণ চূড়ান্তভাবে হয়েছে। বিচার বিভাগ একইভাবে দলীয়করণ করা হয়েছে। অর্থাৎ রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশকে পুরোপুরিভাবে একদলীয় রাষ্ট্রে পরিণত করার সব প্রচেষ্টা প্রায় সফল করে নিয়ে এসেছিল। ফলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের যে আন্দোলন, সেই ২০০৯ সাল থেকেই দানা বাঁধতে বাঁধতে এমন একটা পর্যায়ে আসে, যার বিস্ফোরণ ঘটে জুলাই অভ্যুত্থানে। দেড় দশকের আন্দোলনের ফলে অনেকের প্রাণ গেছে। অনেকেই নির্যাতিত হয়েছেন, জেলে গেছেন। সিনিয়র নেতাদেরও এমন কেউ নেই, যাদের বিরুদ্ধে ষাট থেকে একশর কম মামলা ছিল। অনেক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে চার শতাধিক মামলাও ছিল। চূড়ান্ত আন্দোলনটা কোটাবিরোধী দিয়ে শুরু হয়। সেটা যখন ঘোরাঘুরি করে, আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার যখন পুলিশ দিয়ে গুলি করে গণহত্যা চালায়, শিশু-নারী-ছাত্র ও সাধারণ মানুষকে হত্যা করে, তখনই স্ফুলিঙ্গ অগ্নিকাণ্ডে রূপ নেয়। তারপরই রংপুরের আবু সাঈদকে, চট্টগ্রামের ওয়াসিমকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ বিস্ফারিত হয়। আমরা দেখেছি, ৫ আগস্ট সেই বিস্ফোরণের চূড়ান্ত পরিণতি। হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।

এ পরিপ্রেক্ষিতে এখন বর্তমানে যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, আমরা সবাই মিলেই এ সরকারকে দায়িত্ব দিয়েছি। তারা ন্যূনতম যে সংস্কার দরকার, অতি অল্পসময়ের মধ্যে সেই সংস্কারগুলো করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন। নির্বাচিত সরকার পরবর্তীকালে সংস্কারগুলো ঐকমত্যের ভিত্তিতে করবে, সেই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করবে। এখানে সবচেয়ে বড় যে চ্যালেঞ্জ-বাংলাদেশের অর্থনীতিকে একটা স্থিতিশীল অবস্থায় রাখা। জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে, সেই দাম মানুষের কাছে প্রায় অসহনীয় হয়ে উঠেছে। এ বিষয়গুলো আমাদের অবশ্যই লক্ষ রাখতে হবে।

Manual8 Ad Code

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অল্পসময়ের মধ্যে যতটুকু পেরেছে করেছে এবং করছে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে অস্বাভাবিক হারে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু এত দ্রুত এ সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে, এটি আমিও বিশ্বাস করি না। সেজন্যই আমরা সবসময় বলে আসছি, এ সমস্যাগুলো সমাধান করতে হলে একটি নির্বাচিত সরকার দরকার। অর্থাৎ জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে যে সরকার আসবে, সেই সরকার তা সমাধান করতে পারবে। যারাই নির্বাচিত হোক, তারা জনগণের সমর্থন নিয়ে এলে একটা আলাদা শক্তি তৈরি হবে। সেই শক্তির এ সংকটকে মোকাবিলা করা সম্ভব হবে। আরেকটি জিনিস এ সময় লক্ষ করছি, প্রায় বিভিন্ন সংস্থা, বিভিন্ন গোষ্ঠী, স্কুল-মাদ্রাসা-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সব দাবিদাওয়া নিয়ে আসছেন।

Manual2 Ad Code

রেলওয়ের শ্রমিকরা, অন্যান্য শ্রমিক দাবিদাওয়া নিয়ে আসছেন। ছাত্ররা কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করতে হবে, তার দাবিদাওয়া নিয়ে আসছেন। ফলে এ সরকারকে একটি বৈরী অবস্থার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এতে স্বাভাবিকভাবেই সরকারের পক্ষে কাজ করা খুব কঠিন। অবশ্য সরকার একটি ভালো কাজ করেছে। সেটি হচ্ছে, সংস্কার করার জন্য তারা কতগুলো কমিশন করেছে। এ কমিশনগুলো তাদের রিপোর্ট তৈরি করবে। রিপোর্ট তৈরি করার পর প্রধান উপদেষ্টার কাছে দেবে। প্রধান উপদেষ্টা বিরোধী দলগুলোকে ডাকবেন। তারা কথা বলে সেই সমস্যাগুলো সমাধান করবেন বা সংস্কারগুলোকে বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। এখানে আমরা যেটা বলেছি, এটি একটা বড় কর্মযজ্ঞ। সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। এখানে শুধু নির্বাচনের জন্য যে ন্যূনতম সংস্কারগুলো করা দরকার, সেগুলোর সংস্কার দ্রুত করে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া দরকার।

Manual4 Ad Code

যেমন : নির্বাচনব্যবস্থা, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিচারব্যবস্থার কিছুটা সংস্কার করা। অর্থনৈতিক সংস্কার করতে হবে। শিক্ষার একটা বড় সংস্কার প্রয়োজন আছে। স্বাস্থ্যব্যবস্থা সংস্কারের প্রয়োজন আছে। তো এ বিষয়গুলো অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে করা সম্ভব হবে না। সেজন্য আমরা বলেছি, যত দ্রুত সম্ভব সংস্কারগুলো করে নির্বাচনের দিকে যেতে হবে। এখনকার যে চ্যালেঞ্জ, তা যদি মোকাবিলা করতে হয়, নির্বাচনই হচ্ছে একমাত্র পথ। নির্বাচন ছাড়া বিকল্প কোনো রাস্তা নেই। সংস্কারগুলো এরই মধ্যে চলমান থাকবে। এজন্য জাতীয় ঐক্য একটা বড় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বারবার বলেছি, এখানে ছোটখাটো বিষয়গুলোয় বিভক্ত না হয়ে আমরা যেন প্রধান লক্ষ্যগুলোকে সামনে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকি এবং গণতন্ত্রের উত্তরণের বিষয়টি নিশ্চিত করি। একটা কথা আমাদের স্বীকার করতেই হবে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ছাড়া আর অন্য কোনো ব্যবস্থা জনগণের শাসন ভালোভাবে নিশ্চিত করতে পারে না। গণতন্ত্রের সবকিছু ভালো তা নয়, কিছু কিছু খারাপও আছে। কিন্তু গণতন্ত্র হচ্ছে সবচেয়ে ভালো, এটি ধরে নিতে হবে। আমাদের গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার জন্য কাজ করতে হবে। যুগান্তরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এ আহ্বান জানাতে চাই, আজ যেমন এ সরকারের দায়িত্ব রয়েছে কর্তব্যগুলো পালন করার, একইভাবে মিডিয়ারও একটা বড় দায়িত্ব আছে। মিডিয়া জনমত তৈরি করতে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলোকেও আহ্বান জানাতে চাই, ছোটখাটো যে বিভক্তি আছে, সেগুলোকে ভুলে গিয়ে এ মুহূর্তে গণতন্ত্রে ফিরে যাওয়ার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবেন, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

Manual1 Ad Code

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual7 Ad Code