প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৮ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৩রা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৭শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

বিয়ানীবাজার- শেওলা-জকিগঞ্জ সড়ক যেন মৃত্যুফাঁদ

editor
প্রকাশিত মে ১৯, ২০২৫, ০১:৩৫ অপরাহ্ণ
বিয়ানীবাজার- শেওলা-জকিগঞ্জ সড়ক যেন মৃত্যুফাঁদ

Manual5 Ad Code

 

স্টাফ রিপোর্টার:

সড়কটি এক সময় ছিল জীবনের গতিপথ। আজ তা যেন মৃত্যুফাঁদ। সিলেটের সীমান্তবর্তী জনপদ জকিগঞ্জের মানুষের কাছে সিলেট শহরে পৌঁছানোর সবচেয়ে সহজ ও সরাসরি পথ বিয়ানীবাজার-শেওলা-জকিগঞ্জ সড়ক। কিন্তু আজ এই রাস্তায় যাতায়াত মানে জীবনের ঝুঁকি নেয়া। দীর্ঘ ২২ কিলোমিটারজুড়ে খানাখন্দে বেহাল এই সড়কে প্রতিদিন চলাচল করছে শত শত মানুষ। আর ঘটছে একের পর এক দুর্ঘটনা।

Manual6 Ad Code

এক দশকেরও বেশি সময় ধরে কোনো সংস্কার না হওয়ায় শেওলা-জকিগঞ্জ রোড মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। যেখানে প্রতিটি গর্ত যেন একটি নতুন দুর্ঘটনার ফাঁদ পেতে বসে আছে। বর্ষায় গর্তে জমে থাকা পানি আর কাদার কারণে যানবাহন আটকে পড়ে, তৈরি হয় দীর্ঘ যানজট। আবার শুষ্ক মৌসুমে ধুলাবালির দাপটে রাস্তায় চলা দুর্বিষহ হয়ে পড়ে। শিশু, বৃদ্ধ, শিক্ষার্থী কেউই রেহাই পাচ্ছেন না এই দুর্ভোগ থেকে।

 

জানা যায়, গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কের জিরোপয়েন্ট পর্যন্ত অংশটি এখনও চলাচলের উপযোগী। কিন্তু জিরো পয়েন্ট থেকে জকিগঞ্জ পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার সড়কের বাকি অংশে যাত্রীদের যেন ‘ঝাঁকাঝাঁকির’ অভিজ্ঞতা না নিয়ে যাওয়ার উপায় নেই। রাস্তার কোথাও কোথাও গর্তের ভেতর পড়ে আটকে যায় গাড়ি। সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। অনেক সময় গাড়ি চলতে চলতে বন্ধ হয়ে যায় মাঝপথে। আর চারপাশে গাড়ির ভিড় জমে অস্থিরতা তৈরি হয়।

জকিগঞ্জ সরকারি কলেজছাত্র আল আমিন বলেন, সকাল সকাল ক্লাস ধরতে বের হই, কিন্তু এই রাস্তায় চলতে চলতে কখন পৌছবো তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। কখনো সিএনজির চাকা গর্তে পড়ে আটকে যায়, কখনো আবার ধুলাবালির মধ্যে নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। আমরা যেন যুদ্ধ করে প্রতিদিন গন্তব্যে পৌঁছাই।

অটোরিকশা চালক শাহাবউদ্দিন সাবু প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই রাস্তায় গাড়ি চালান। তিনি বলেন, মাঝে মাঝেই স্কেল ভেঙে পড়ে বিপদে পড়ি। গাড়ি আটকে গেলে যাত্রীরা ক্ষুব্ধ হন, কিন্তু দোষ তো রাস্তার। গর্তে পড়ে গাড়ি উল্টে যাওয়ার ভয় নিয়েই চলতে হয়।
স্থানীয়দের মতে, রাস্তাটি শুধু জকিগঞ্জ নয়, কানাইঘাট, গোলাপগঞ্জ, বিয়ানীবাজারসহ পুরো পূর্ব সিলেট অঞ্চলের মানুষের একটি গুরুত্বপূর্ণ যাতায়াতের পথ। অথচ বছরের পর বছর ধরে তা যেন কারো দেখার কেউ নেই। সম্প্রতি মাত্র ৫ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই নগণ্য বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

Manual1 Ad Code

জকিগঞ্জের সোনাপুর মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা মো. কুতবুল আলম বলেন, এই রাস্তাটির বেহাল দশা দেখে বুক কাঁপে। প্রতিদিন এই পথে শিক্ষার্থী, রোগী, কর্মজীবী মানুষ চলাচল করে। একজন অসুস্থ রোগী যদি সময়মতো হাসপাতালে না পৌঁছায়, তার মৃত্যুর দায় কে নেবে?

Manual8 Ad Code

এলাকার সাধারণ মানুষ প্রশ্ন তুলছেন, জনগণের ট্যাক্সের টাকা কোথায় যায়? এত গুরুত্বপূর্ণ একটি রাস্তাও যদি বছরের পর বছর অবহেলিত থাকে, তবে উন্নয়নের সুফল কোথায়?

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানানো হয়েছে, যেন দ্রুত এই সড়কের পূর্ণাঙ্গ সংস্কার কাজ শুরু করা হয়। এ রাস্তায় মানুষের দুঃখ-দুর্দশার স্থায়ী অবসান ঘটাতে হবে এখনই।

Manual4 Ad Code

একটি জনপদের উন্নয়নের প্রথম শর্ত হচ্ছে নিরাপদ ও চলনসই যোগাযোগ ব্যবস্থা। শেওলা-জকিগঞ্জ সড়কটি এখন শুধু একটি রাস্তা নয়, এটি হাজারো মানুষের আশা, স্বপ্ন ও বাঁচার সঙ্গে জড়িত। এই স্বপ্ন ভেঙে পড়ার আগে সংশ্লিষ্টদের সচেতন হওয়া এখন সময়ের দাবি।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual6 Ad Code