প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৮ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৩রা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৭শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

বিয়ানীবাজারে সংকুচিত হয়ে গেছে পাখিদের সবুজ দুনিয়া

editor
প্রকাশিত জানুয়ারি ১২, ২০২৫, ১০:২৬ পূর্বাহ্ণ
বিয়ানীবাজারে সংকুচিত হয়ে গেছে পাখিদের সবুজ দুনিয়া

Manual2 Ad Code

 

মিলাদ জয়নুল:

Manual5 Ad Code

 

বিয়ানীবাজারের কোথাও অতিথি পাখির দেখা মিলছেনা। জলাশয়, জলাধার, খাল, বিল, নদী নালা যাই বলি না কেন, এখন আর কোন স্থানেই অতিথি পাখির কলরব নেই । গত দশ বছর আগেও উপজেলার বিভিন্ন বিল, ঝিল, নদী, নালা ও খালগুলোতে শীতের মৌসুম আসতে না আসতেই নানা রকম ও নানা আকৃতির অতিথি পাখিতে সয়লাব থাকতো।

প্রকৃতিবিনাশী বিয়ানীবাজারে পাখিরা কিচিরমিচির করতে যেন অভিমান করেছে। বনভূমি উজাড় হচ্ছে, কংক্রিটের ভারে তলিয়ে যাচ্ছে ঘাসভরা মাটি। ফসলের ক্ষেত দখল করছে কিটনাশক। উন্নয়নের কাছে প্রতিবছর হারিয়ে যাচ্ছে অসংখ্য বয়সি গাছ। ক্রমেই সংকুচিত হয়ে আসছে পাখিদের কোলাহলমুখর সবুজ দুনিয়া।

Manual8 Ad Code

বিয়ানীবাজারের গ্রামাঞ্চলে এখন আর আগের মতো পাখির ডাকে মানুষের ঘুম ভাঙে না। বাড়ির আঙিনায় পাখিদের কিচিরমিচির ডাক, গাছের ডালে ডালে ঝাঁকবেঁধে উড়ে আসা পাখিদের সেই কলকাকলি নেই। অথচ একসময় ছিল যখন গাছে গাছে, ঝোপে-ঝাড়ে, মাঠে-ঘাটে, বিলে-ঝিলে, বাগানে কিংবা বাড়ির আঙিনায় দোয়েল, টিয়া, ঘুঘু, কাক, কোকিলসহ বিভিন্ন দেশি প্রজাতির বিচরণ চোখে পড়ত। বাডির পাশেই সড়কের ধারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে তালগাছের পাতায় সুনিপুণভাবে বাসা তৈরি করে বাবুই পাখির সংসার পাতার চোখ জোড়ানো দৃশ্য। কমেছে শাপলা-শালুকের পাতায় বসে খুনশুটি করা বক মাছরাঙা কিংবা পানকৌড়ির সংখ্যা। কোথাও যেন হারিয়ে গেছে গোধূলিলগ্নে মুক্ত আকাশে ঝাঁকে ঝাঁকে ডানা মেলে উড়ে বেড়ানো পাখিদের মিছিল।

 

উপজেলার চিরচেনা  অভয়ারণ্যগুলোতেও এবার পাখির বিচরণ নেই। শীতের আমেজ শুরু হলেই উপজেলার মুড়িয়ার হাওরসহ ছোট-বড় বিলে বিভিন্ন অতিথি পাখির ঢল নামতো। আশ্বিন মাসের শেষের দিকে হাওর ও বিলের পানি শুকাতে শুরু করেলে সেখানে পুঁটিসহ ছোট ছোট মাছ খেতে ঝাঁকে ঝাঁকে নামতো অতিথি পাখি । নভেম্বর আর ডিসেম্বরে অতিথি পাখির পরিযানের হার সবচেয়ে বেশি থাকে। জানুয়ারি আর ফেব্রুয়ারিতে রেশমি শীতের ছোঁয়া গায়ে লাগিয়ে আবারো ভবঘুরে হয় অতিথি পাখিগুলো। কিন্তু বর্তমানে আশঙ্কাজনক হারে অতিথি পাখি আসার হার কমে গেছে।

 

আইন অনুযায়ী অতিথি পাখি ধরা আর শিকার নিষিদ্ধ হলেও বিয়ানীবাজারের বিভিন্ন এলাকায় শিকার করা হয় পাখি। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, শিকারীরা ধান ক্ষেতগুলোতে নানা ধরনের রাসায়নিক বিষ প্রয়োগ করেই পাখিদের কাবু করে। পাশাপাশি আছে জালের মাধ্যমে পাতা ফাঁদ, যেগুলোতে খুব সহজেই পাখি ধরা পড়ে।

বিয়ানীবাজার উপজেলা প্রানী সম্পদ কর্মকর্তা ডা: মোহাম্মদ মবিন হাই বলেন, আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া, নগরায়ণ, বনাঞ্চল উজাড়, জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ দূষণ, নির্বিচারে গাছ কাটা, জমিতে কীটনাশকের যথেচ্ছ ব্যবহার, পাখির বিচরণক্ষেত্র, বাসস্থান ও খাদ্য সংকট, অবাধ শিকার ও আইনের সঠিক প্রয়োগ না থাকা এবং যথাযথ সংরক্ষণের অভাবেই পাখি বিলুপ্তির মূল কারণ।

Manual5 Ad Code

উপজেলা প্রাণী সম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ডা: শামীম হোসেন জানান, পাখির প্রজননের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ ও অভয়াশ্রম দরকার। পাখির বাসা বাঁধা, চরে বেড়ানোর মতো জায়গা কম। নির্বিচারে বন-জঙ্গল কেটে আবাসভূমি কমে যাচ্ছে। এর ফলে পাখির বিরচণ ও বৈচিত্র্য কমে যাচ্ছে। আর পাখির খাদ্য-তালিকায় যেসব গাছের ফল-ফলাদি রয়েছে সেগুলোও অনেকটা নেই। এ কারণে খাদ্য সংকট চরম আকার ধারণ করছে এবং প্রজননের জন্য বাধাও অনেক বড় একটা সমস্যা।

Manual3 Ad Code

বিয়ানীবাজার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লোকমান হেকিম বলেন, অতিথি পাখিরা এ এলাকায় এসে তাদের প্রয়োজনীয় খাবার আগের মত পায়না। শীতের কারণেই কিন্তু অতিথি পাখি গুলো এ এলাকায় আসতো। জলবায়ুর পরিবর্তণ ও এলাকায় অতিথি পাখির বিচরণ কমে যাওয়ার একটি উল্লেখ যোগ্য কারণ।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual3 Ad Code