প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৬ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১লা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৫শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

‘৫ আগস্ট না এলে গুম হতাম’, বললেন বাঁধন, তাসরিফ বললেন, ‘নিশ্চিত মরতাম’

editor
প্রকাশিত আগস্ট ৫, ২০২৫, ০২:১৩ অপরাহ্ণ
‘৫ আগস্ট না এলে গুম হতাম’, বললেন বাঁধন, তাসরিফ বললেন, ‘নিশ্চিত মরতাম’

Manual4 Ad Code

২০২৪ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলনের এক পর্যায়ে তৎকালীন সরকার কঠোর হয়। শুরু করে দমন প্রক্রিয়া। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে ছাত্র-জনতার জীবনপ্রদীপ নিভতে থাকে। এসব ঘটনার প্রতিবাদে শুরু থেকে সোচ্চার হয়েছিল দেশের বিনোদনজগতের তারকাদের অনেকেই। এ জন্য নানাভাবে অনেক তারকাকে হয়রানির শিকার হতে হয়েছিল। অবশেষে গত বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পালানোর পরে যেন স্বস্তি মেলে সেসব তারকার। সেই দিনগুলো যেন এখনো আতঙ্কের, অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন ও তরুণ গায়ক তাসরিফ খানের কাছে।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সোচ্চার ছিলেন অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন। তিনি আন্দোলনের আগের অবস্থা নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই সময় প্রচণ্ড ক্ষমতালোভী সরকারের হুমকি–ভয়ভীতি উপেক্ষা করে আমরা শিল্পীরা সোচ্চার হয়েছি। সহজ–সরল শিক্ষার্থীরা আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে। আমরা ন্যায়ের কথা বলা শুরু করলে, আমাদের রাষ্ট্রদ্রোহী অপরাধের ভয় দেখিয়েছে সেই সরকার। আমি গুম–খুন হয়ে যাব—এমন কথাও শুনেছি। ছাত্রদের যৌক্তিক আন্দোলনে মাঠে থাকার পর থেকে আমাকে ফোনে, মেসেঞ্জারে, খুদে বার্তায় একের পর এক হুমকি দেওয়া হয়। অ্যাসিডও মারতে চেয়েছে। কিন্তু আমি ক্ষমতালোভী সরকারের বাহিনীকে ভয় পাইনি।’

Manual1 Ad Code

আজমেরী হক বাঁধন
আজমেরী হক বাঁধনখালেদ সরকার

সেসব দিনের কথা এখনো যেন ভয় তৈরি করে এই অভিনেত্রীর মনে। তিনি মনে করেন, তাঁরা ১ আগস্ট প্রথম বলেছিলেন, স্বৈরাচার সরকারের পতন হোক। এই বলাটা সহজ ছিল না। এ ঘটনার পরে তাঁর মধ্যে গুমের ভয় বাড়তে থাকে। একসময় তিনি আতঙ্কে ধরেই নিয়েছিলেন তাঁর সঙ্গে খারাপ কিছু হতে পারে। তারপরও আন্দোলনের দিনগুলোতে ছাত্রছাত্রীদের দেখে প্রতিবাদের সাহস সঞ্চার করেছেন।

আজমেরী হক বাঁধন। ছবি: ফেসবুক থেকে
আজমেরী হক বাঁধন। ছবি: ফেসবুক থেকে

বাঁধন বলেন, ‘যদি ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী সরকারের পতন না হতো তাহলে আমি অবশ্যই অ্যারেস্ট হতাম। আজকের ৫ আগস্ট না এলে গুম হতাম। আমরা কেউই বাঁচতে পারতাম না। গণমানুষের বিজয়ের মধ্য দিয়ে অ্যারেস্ট, গুম, খুন, হুমকি থেকে বেঁচে গেছি। লক্ষ করে দেখবেন, সেই সময় ফেসবুকে সবচেয়ে বেশি হুমকি আমাকে দেওয়া হয়েছে। আমার প্রতি হয়তো স্বৈরাচারী সরকারের পক্ষের মানুষের বিদ্বেষ বেশি ছিল। সঠিক পথে আছি বলেই এই বিদ্বেষ আমার প্রতি। তবে এবার ঈদে যখন “এশা মার্ডার” সিনেমা নিয়ে দর্শকদের কাছে গিয়েছি তখন দেখেছি দর্শকদের ভালোবাসা। এগুলো এটাই মনে করে দেয়, আমি সঠিক পথেই আছি, সুবিধাভোগী নই। দর্শক, সাধারণ মানুষের ভালোবাসা মিথ্যা নয়।’

এদিকে তরুণ সংগীতশিল্পী তাসরিফ খান শুরু থেকেই কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের পাশে ছিলেন। আন্দোলন চলাকালে ‘রাজার রাজ্যে সবাই গোলাম’ গান গেয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আলোচনায় আসেন। অন্যদিকে আন্দোলনে সমর্থনের কারণে ক্ষমতাসীন দলের রোষানলে পড়েন। এ জন্য তিনি দিনের পর দিন নানাভাবে হুমকি ও মানসিক নির্যাতনের মুখোমুখি হয়েছেন।

Manual5 Ad Code

তাসরিফ খান। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে

এক বছর পরে আজ এই গায়ক প্রথম আলোকে বলেন, ‘৫ আগস্ট ভোরে আমি তিনটা ভাগে ফেসবুক স্ট্যাটাস দিই। প্রথমত শ্রমজীবীসহ সব মানুষকে রাস্তায় নেমে আসতে বলি। দ্বিতীয় স্ট্যাটাসে পুলিশদের উদ্দেশে লিখেছিলাম, আজ পুলিশদের সন্তানেরাও আন্দোলনে যাবে। প্রশ্ন ছিল, নিজের সন্তানদের কি হত্যা করবে পুলিশ? তৃতীয়ত, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের মানুষের উদ্দেশে লিখেছিলাম, আপনারা হত্যায় শামিল না হয়ে আজ মানুষের ভাষা বোঝার চেষ্টা করুন। হত্যায় সহায়তা বন্ধ করতে বলেছিলাম। এতে আমি ভয়ানক হুমকির মুখে পড়ি। যদিও সেই সময়ে আমি পালিয়েই বেড়াচ্ছিলাম।’

Manual7 Ad Code

আমার একটাই কথা, দেশের ছেলে দেশে আছি যাব কই: তাসরিফ খান

আমার একটাই কথা, দেশের ছেলে দেশে আছি যাব কই: তাসরিফ খান

শুধু ৫ আগস্টই নয়, এর আগেও একের পর এক হুমকির মুখে পড়তে হয়েছে তাসরিফকে। জুলাইয়ের শুরুর দিকে ঘটনা প্রসঙ্গে তাসরিফ বলেন, ‘একদিন আমার পরিচিত একজনের সঙ্গে কয়েকজন সরকারের লোক আসে। তারা আমাকে জানায়, তাদের হয়ে কাজ করলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছাকাছি যেতে পারব। সরকারের লোকগুলো আমাকে ভিডিও বানানোর প্রস্তাব দেয়। সেই ভিডিও ভালো হলে, সরকার যত দিন আছে, সুবিধা পাব। পরে তারা আমাকে লাখ লাখ টাকার লোভ দেখায়। তবু শিক্ষার্থীদের সঙ্গে থেকেছি। আর অপেক্ষা করেছি কাঙ্ক্ষিত দিনের। পরে তারা আমার ব্যান্ডের ড্রামার শান্তকে মারধর করে। পুরো সময়ই নানাভাবে তারা ভয়ভীতি দেখিয়েছে।’

তাসরিফ খান। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে

তাসরিফ জানান, কাঙ্ক্ষিত সেই দিনটি ঘিরে ছিল জীবন–মরণের প্রশ্ন। যদি বিজয় না আসে, তাহলে ভয়ংকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হবে। ‘আমি ৫ আগস্ট তিন ভাগে যে স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম, সেই পোস্টই হতে পারত আমার মৃত্যুর কারণ। সেদিন স্বৈরাচারী সরকারের পতন না হলে, ৫ আগস্ট কাঙ্ক্ষিত বিজয় না এলে, নিশ্চিত মরতাম। সেটাই মনে হতো। তারা যেভাবেই হোক আমাকে খুঁজে বের করত। সরকারের লোকেরা আমার ওপর ভয়ংকরভাবে ক্ষিপ্ত ছিল। আজকের ৫ আগস্ট না এলে আমাদের বেঁচে থাকার পথ থাকত না। এগুলো ভাবলে এখনো ভয় লাগে।’

এই তরুণ গায়ক কথা বলার সময় যাচ্ছিলেন টাঙ্গাইলে কনসার্ট করতে। সবশেষে তিনি বলেন, ‘আমরা একটা সিস্টেমের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলাম। প্রতিবাদ জানিয়েছি। আবার সেই সিস্টেম কখনো জাগ্রত হতে চাইলে আমরা সেটা নিয়েও সোচ্চার হব। ধরে নেব বিপ্লব শেষ হয় নাই। তখনো সাধারণ মানুষের পাশে থাকব।

Manual3 Ad Code

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual2 Ad Code