প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৪ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৩শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

গোয়াইনঘাটে থমকে গেছে পরিবার পরিকল্পনা

editor
প্রকাশিত নভেম্বর ২৪, ২০২৪, ১০:১৩ পূর্বাহ্ণ
গোয়াইনঘাটে থমকে গেছে পরিবার পরিকল্পনা

Manual8 Ad Code

গোয়াইনঘাট সংবাদদাতা:
সিলেট বিভাগের সর্ববৃহৎ এ উপজেলার বাসিন্দারা দেশের অন্যান্য উপজেলার চেয়ে এখনো নানাদিকে পিছিয়ে রয়েছে। এ উপজেলায় সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও তদারকির অভাবে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের সেবার মান এখন তলানিতে। উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিস সূত্রে জানা যায়, গোয়াইনঘাট উপজেলার ১৩ টি ইউনিয়নে ৪০টি পরিবার পরিকল্পনা ইউনিট রয়েছে। ৪০ টি পরিবার পরিকল্পনা ইউনিটের মধ্যে নিয়োগপ্রাপ্ত পরিবারকল্যাণ সহকারী (এফডব্লিউএ) রয়েছেন ৩৫ জন। তবে উপজেলাটিতে ৭ জন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারের পদ শূন্য।

Manual8 Ad Code

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার নন্দিরগাওঁ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রের একটি সুরম্য ভবন রয়েছে। তবে মূল দরজায় তালা লাগানো এবং সব কটি কক্ষ বন্ধ। সেখানে কোনো কর্মচারীও নেই। স্থানীয় বাসিন্দা আসাদুল ইসলাম জানান, হাসপাতালটি স্থাপনের পর থেকে একজন বয়স্ক মহিলা মাঝেমধ্যে ভবনটি খুলেন। নন্দিরগাওঁ ইউনিয়নের মিত্রিমহল গ্রামের বাসিন্দা আমেনা বেগম বলেন, তাঁর বিয়ে হয়েছে ৯ বছর হলো। দুটি সন্তানও আছে। তবে কখনো কোনো ধরনের পরামর্শ বা সেবা তিনি পাননি। পরিবার পরিকল্পনার কেউ কোনো দিন যাননি। যেকোনো পরামর্শের জন্য স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে যেতে হয়।

নন্দিরগাওঁ ইউনিয়নের মিত্রিমহল, বহর, সুন্দ্রগাওঁ, আঙ্গারজুর, লামাপাড়া, নওয়াগাওঁ, কচুয়ারপার, দারিকান্দি, দারিরপার ও কদমতলাসহ কয়েকটি গ্রামে গিয়ে অন্তত ৫০টি দম্পতির সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের। এর মধ্যে ৪৫ জন কখনোই স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রের মাধ্যমে সেবা পাননি।

Manual3 Ad Code

বিষয়টি নিয়ে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বদরুল ইসলাম বলেন, গোয়াইনঘাট উপজেলায় পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের ৪০ টি ইউনিট থাকলেও সেগুলো পরিচালনার জন্য আছেন ৩৫ কর্মী। জন্মবিরতিকরণ পদ্ধতির জন্য সব ধরনের ওষুধ মজুত থাকলেও ইউনিট কর্মী কম থাকায় সব মানুষের কাছে সেবা পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। তিনি আরও জানান, নন্দীরগাও ইউনিয়নে পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শকের পদ শুন্য আছে। একজন পরিবার কল্যাণ সহকারী মাতৃত্বকালীন ছুটিতে আছেন। নন্দিরগাওঁ ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের যিনি বসেন তিনি আবার সপ্তাহে দুই দিন তোয়াকুলে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করে থাকেন এবং এক দিন স্যাটেলাইট ক্লিনিক পরিচালনা করেন।সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, একজন মাঠকর্মীর মাসে অন্তত একবার একটি দম্পতির বাড়িতে যাওয়ার কথা। কিন্তু সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় চিত্র ভিন্ন। মাঠপর্যায়ে একটি দম্পতি বছরেও একবারও দেখা পাচ্ছেন না পরিবারকল্যাণ সহকারীর। মাঠ পর্যায়ে নজরদারি না থাকায় গোয়াইনঘাট উপজেলায় জন্মনিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। বাংলাদেশে জন্মনিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে সফল হয়েছিল মূলত মোট প্রজননহার কমানোর মাধ্যমে। স্বাধীনতার সময় একজন প্রজননক্ষম নারী (১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী) গড়ে ছয়টির বেশি সন্তানের জন্ম দিতেন। গত শতকের সত্তরের দশকের শেষে ও আশির দশকের শুরুতে জন্মনিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম জোরদার করার পর দেশে মোট প্রজননহার ক্রমান্বয়ে কমতে থেকে। কিন্তু ২০১১ সাল থেকে মোট প্রজননহার ২ দশমিক ৩ বা তার আশপাশে থমকে আছে।

এ বিষয়ে গোয়াইনঘাট প্রেসক্লাব সভাপতি মনজুর আহমদ বলেন, ‘পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে গোয়াইনঘাট পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়েছে। এখানে নেতৃত্বের বড় সংকট চলছে। বহুদিনের জমে থাকা সমস্যা এখন সংকটে পরিণত হয়েছে। পুরো বিষয়টি আদ্যোপান্ত তদন্ত হওয়া দরকার।খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি এবং উপকরণ বিতরণের জন্য দেশের প্রতিটি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকায় একজন পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক ও তিনজন পরিবারকল্যাণ সহকারী দায়িত্ব পালন করেন। এই কর্মীদের সপ্তাহে চার দিন বাড়ি বাড়ি গিয়ে দম্পতিদের সঙ্গে আলোচনা ও সামগ্রী বিতরণ করার কথা।

Manual7 Ad Code

গোয়াইনঘাট উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাহবুব আলম বলেন, গোয়াইনঘাট উপজেলায় পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার দ্রুত নজরদারি বৃদ্ধি ও কর্ম এলাকায় দায়িত্ব অবহেলাকারী কর্মীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা না নিলে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হতে পারে। উপজেলার সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা মনে করেন,তদারকির অভাবে গোয়াইনঘাট উপজেলায় পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের সেবার মান এখন তলানিতে। ফলে এর প্রভাব পড়বে দেশের জনসংখ্যা ব্যবস্থার ওপর।’

Manual3 Ad Code

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual3 Ad Code