প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

৭ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২২শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৬ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

হাতে হাতকড়া, শরীরে শিকল: অপমানজনকভাবে দেশে ফিরছে বাংলাদেশিরা

editor
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ৪, ২০২৫, ০৭:৪৭ পূর্বাহ্ণ
হাতে হাতকড়া, শরীরে শিকল: অপমানজনকভাবে দেশে ফিরছে বাংলাদেশিরা

Manual3 Ad Code

স্টাফ রিপোর্টার:
হাতে পরানো হচ্ছে হাতকড়া, শিকলে বেঁধে রাখা হচ্ছে শরীর— তাদের দেখে মনে হতে পারে ভয়ংকর কোনো অপরাধী। তবে তেমনটা নয়; উন্নত জীবনের স্বপ্ন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমানো বাংলাদেশিদের এভাবেই ফেরত পাঠানো হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে অবস্থান করছিলেন তারা।

তবে প্রত্যাবাসনকালে তাদের এমন শিকলবন্দী করে পাঠানোর পাশাপাশি ‘পর্যাপ্ত পরিমাণ’ খাবার না দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন ফেরত আসা বাংলাদেশিরা।

Manual6 Ad Code

এই পরিস্থিতিতে অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রত্যাবাসনের সময় হাতকড়া ও শিকল ব্যবহার সীমিত করা উচিত। শুধু বিশেষ নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি থাকলেই শুধু হাতকড়া পরানো যেতে পারে।

Manual1 Ad Code

যদিও আগেও ফেরত আসা বাংলাদেশিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রত্যাবাসনের এমন প্রক্রিয়া নতুন নয়। আগেও অবৈধ অভিবাসনের অভিযোগে এমন শিকলবন্দী হয়ে ফেরত পাঠানো হয় বাংলাদেশিদের।

সবশেষ বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে একটি চার্টার্ড বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআর উড়োজাহাজে করে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানোর কথা রয়েছে অবৈধভাবে অবস্থানের অভিযোগ আটক বাংলাদেশিদের। উড়োজাহাজটিকে ৭২ ঘণ্টা ঢাকায় অবস্থানের অনুমতি দেওয়া হলেও কতজন বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে, তা এখনো নিশ্চিত নয়।

Manual1 Ad Code

এর আগে গত ২ আগস্ট ভোরে একটি সামরিক পরিবহন উড়োজাহাজ সি-১৭ ঢাকায় অবতরণ করে। সেই ফ্লাইটে এক নারীসহ ৩৯ বাংলাদেশিকে দেশে পাঠানো হয়। ফেরত আসা ব্যক্তিদের অভিযোগ, প্রায় ৬০ ঘণ্টার দীর্ঘ যাত্রায় তাদের হাতকড়া ও শিকলে বেঁধে রাখা হয়েছিল।

ঢাকায় পৌঁছে ওই ফ্লাইটে ফেরত আসা ফাহিম নামের এক যাত্রী বলেন, ‘আমাদের হাতকড়া ও শিকলে বাঁধা অবস্থায় উড়োজাহাজে করে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যন্ত্রণা নিয়ে বসে থাকতে হয়েছে, খেতে দেওয়া হয়েছে শুধু রুটি আর পানি। এমনকি টয়লেটে যাওয়ার সময়ও একজন অফিসার আমাদের নিয়ে যেতেন, আবার শিকলে বেঁধে দিতেন। অবশেষে ঢাকায় অবতরণের সময় শিকল খোলা হয়।’

পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ ও এইচএসআইএর ইমিগ্রেশন বিভাগের সূত্র বলছে, এর আগে চলতি বছরের ৮ জুন একটি চার্টার্ড ফ্লাইটে ৪২ বাংলাদেশিকে ফিরিয়ে আনা হয়। ফিরিয়ে আনা ৪২ বাংলাদেশির মধ্যে ১৬ জনের ক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ পরিচয়পত্র যাচাই নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছিল। তাদের মধ্যে একজন যুক্তরাষ্ট্রে মামলায় হেরেও সেখানে অবস্থান করছিলেন, আরেকজন আলাদা মামলায় সাজা ভোগ করেছিলেন। সবাইকে অনিয়মিত অভিবাসী হিসেবে শনাক্ত করা হয়।

একাধিক সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছরের ৬ মার্চ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত ৪৬ দিনে একাধিক চার্টার্ড ফ্লাইটে অন্তত আরও ৩৪ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। ২০২৪ সালের শুরু থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো বাংলাদেশির সংখ্যা ১৫০ ছাড়িয়েছে।

এর আগে ২০১৬ সালে ২৭ বাংলাদেশিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে। তারা বিশেষ ফ্লাইটে এসেছিলেন, আর যাত্রাপথে হাতকড়া পরিয়ে রাখা হয়েছিল। এই দৃশ্য তখন দেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। এভাবে শিকল পরানোয় মানবাধিকার ও মর্যাদা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে তখন, যা নিয়ে বাংলাদেশ সরকার ও মার্কিন প্রশাসনের মধ্যে আলোচনাও হয়েছিল।

অভিবাসীদের এভাবে হাতকড়া বা শিকল পরিয়ে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক (মাইগ্রেশন ও ইয়ুথ প্ল্যাটফর্ম) শরিফুল হাসান বলেন, উন্নত জীবনের স্বপ্ন নিয়ে মানুষ অভিবাসী হতে চাইবেন, এটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। একই সঙ্গে গন্তব্য দেশ চাইলে তাদের ফিরিয়েও দিতে পারে। তবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাতকড়া পরিয়ে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত দুঃখজনক। এটি অভিবাসনপ্রত্যাশী মানুষের জন্য সারা জীবনের ট্রমা হয়ে থাকে। আমরা আশা করি, আগামীতে প্রত্যাবাসনপ্রক্রিয়া আরও মানবিক হবে এবং যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে গুরুত্ব দেবে।

সূত্র: আজকের পত্রিকা

Manual6 Ad Code

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual8 Ad Code