স্টাফ রিপোর্টারঃ
বিয়ানীবাজার পৌরশহরে থানা পুলিশের সাথে মাঠের বিরোধীদল বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষে হামলা পাল্টা হামলা ও ইট পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এ সময় দুটি মোটরবাইক ভাংচুর করা হয়। শহরজুড়ে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। পরে থানা থেকে অতিরিক্ত একদল পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। এতে ৪ পুলিশ সদস্যসহ উভয় পক্ষে প্রায় ১২ জন আহত হয়েছেন। আহত পুলিশ সদস্যদের বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হয়। তবে পুলিশী গ্রেফতার এড়াতে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের আহতদের গোপনে বিয়ানীবাজারের বাহিরের অন্যত্র বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা করানো হচ্ছে। ১০ ডিসেম্বর মঙ্গলবার বেলা ১টায় পৌরশহরের পোষ্ট অফিস রোড মোড়ে এই ঘটনাটি ঘটে। এই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে থানায় একটি পুলিশ এসল্ট মামলা দায়ের করা হয়েছে।
জানা যায়, ঘটনার দিন বেলা ১২.৪৫ ঘটিকায় পৌরশহরের দক্ষিনবাজার থেকে বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামী ও জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা মিলে আকস্মিক ভাবে একটি বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদিক্ষিণ শেষে বেলা ১টার দিকে পোষ্ট অফিস রোড মোড়ে আসার পর থানা পুলিশের একটি দল মিছিলকারীদের বাধা দেয়। এতে পুলিশের সাথে তাদের বাকবিতন্ডা ঘটে। একপর্যায় পুলিশ মিছিলকারীদের ধাওয়া দিয়ে লাঠিচার্জ শুরু করলে মিছিলকারীরা পুলিশের উপর পাল্টা আক্রমণ শুরু করে। তারা পুলিশের সাথে ধাক্কাধাক্কি করে এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। শুরু হয় উভয় পক্ষে তুমুল সংঘর্ষ। উত্তেজিত মিছিলকারীরা সড়কের পাশে রক্ষিত দুটি মোটর সাইকেল ভাংচুর করে। এ সময় পোষ্ট অফিস রোড মোড় রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। শহর জুড়ে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে বিয়ানীবাজার থানা থেকে অতিরিক্ত একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাঠিচার্জ ও রাবার বুলেট ছুড়লে মিছিলকারীরা পিছু হটে পালিয়ে যায়। সংঘর্ষে পুলিশের এসআই ফয়েজ আহমদ সহ ৪ পুলিশ সদস্য আহত হন। তাদেরকে বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রেরণ করা হয়। এদিকে পুলিশের লাঠিচার্জ ও রাবার বুলেটের আঘাতে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের প্রায় ৮ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। পুলিশী গ্রেফতার এড়াতে আহতদের উদ্ধার করে নিয়ে পালিয়েছে তারা। সূত্র জানিয়েছে, বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের আহতদের বিয়ানীবাজারের বাহিরে অন্যত্র প্রাইভেট ক্লিনিকে গোপনে চিকিৎসাদেয়া হচ্ছে।
এই ঘটনায় বিয়ানীবাজার থানার এসআই শহীদ আহমদ বাদী হয়ে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের ১০ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত আরো ২০ জনকে আসামী করে ঐদিন রাতে বিয়ানীবাজার থানায় একটি পুলিশ এসল্ট মামলা দায়ের করেছে। মামলা নং ১৫, তারিখ ১০/১২/২০১৯ইং। মামলার আসামীরা হলেন, বিয়ানীবাজার উপজেলার মাথিউরা গ্রামের আজিজুর রহমান এর পুত্র সরওয়ার হোসেন (৩৮), নবাং গ্রামের মোঃ আমির উদ্দিনের পুত্র গিয়াস উদ্দিন (৪০), শ্রীধরা গ্রামের মোঃ মানিক উদ্দিনের পুত্র মোঃ গুলজার আহমদ (২৭), কসবা গ্রামের বদরুল ইসলাম এর পুত্র আক্তার হোসেন অনিক (৩২), উত্তর চক্রবানী, কাকুরা গ্রামের মোঃ ইসলাম উদ্দিন এর পুত্র নাজির হোসেন (২৮), কসবা গ্রামের নাজিম উদ্দিন এর পুত্র ফয়েজ আহমদ (৩৩), টিকরপাড়া গ্রামের আসব্বীর আলীর পুত্র আফজল আহমদ (৩৫), নন্দিরফল গ্রামের মৃত ময়না মিয়ার পুত্র হাবীবুর রহমান (৩০), আব্দুল্লাপুর গ্রামের লতিফ আহমদের পুত্র দৌলা হোসেন সুবাস (৪৫) ও দুবাগ গ্রামের আজিজুর রহমানের পুত্র সাইফুর রহমান (৪৯) সহ অজ্ঞাত আরো ২০ জন।
এ বিষয়ে বিয়ানীবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ অবনী শংকর কর বলেন, বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের লোকজন পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত সরকার পতনের পায়তারা করছে। সেই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে আজ বিয়ানীবাজারে সড়ক অবরোধ করে, গাড়ি ভাংচুর করে আতংকিত পরিবেশ তৈরী করতে চেয়েছে। জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা দিতে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তারা পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে আমাদের ৪ পুলিশ সদস্যকে রক্তাক্ত আহত করেছে। এই ঘটনায় থানায় পুলিশ এসল্ট মামলা দায়ের করা হয়েছে। আইনের হাত থেকে একজন অপরাধীও রেহাই পাবে না।