প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৭ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২রা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৬শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

বেনজীরের বিরুদ্ধে ‘রেড নোটিশ’ জারি করল ইন্টারপোল

editor
প্রকাশিত এপ্রিল ২২, ২০২৫, ১১:৩৯ পূর্বাহ্ণ
বেনজীরের বিরুদ্ধে ‘রেড নোটিশ’ জারি করল ইন্টারপোল

Manual4 Ad Code

স্টাফ রিপোর্টার:
ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের সময়কার দোর্দণ্ড প্রতাপশালী সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও র‌্যাব প্রধান বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে ‘রেড নোটিশ’ জারি করেছে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ অর্গানাইজেশন (ইন্টারপোল)।

গত ১০ এপ্রিল এই রেড নোটিশ জারি করা হয়। পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর বেনজীরের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির বিষয়টি যুগান্তরকে নিশ্চিত করেছেন।

জানা গেছে, ৫ আগস্ট গণআন্দোলনের মুখে দেশ থেকে ভারত পালানো সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির বিষয়টি আইনি পর্যালোচনায় রেখেছে ইন্টারপোল। তাদের বিরুদ্ধেও রেড নোটিশ জারি হতে পারে।

Manual5 Ad Code

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, আদালতের নির্দেশনায় প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ) অথবা তদন্ত সংস্থার অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ সদর দপ্তরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি) শাখা ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারির আবেদন করে থাকে। বেনজিরসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে এই আবেদন করা হয়েছিল।

এআইজি ইনামুল হক সাগর জানান, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার একটি আদালত সাবেক আইজিপি বেনজীরের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির জন্য ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়। এরপর গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে বেনজীরের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করতে ইন্টারপোলের কাছে আবেদন করা হয়। আর্থিক দুর্নীতি বা অপরাধের অভিযোগের কারণে দ্রুত পদক্ষেপ হিসেবে গত ১০ এপ্রিল তার বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করে ইন্টারপোল।

বেনজীরের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে জানা গেছে, তিনি স্বপরিবারে পলাতক। কোন দেশে আছেন তা এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি বাংলাদেশ পুলিশ। তবে আশার কথা হচ্ছে রেড নোটিশ জারি হওয়ায় খুব শিগগিরই তার অবস্থান নিশ্চিত হওয়া যাবে। তাকে গ্রেফতার করে দেশে ফিরিয়ে আনাও সম্ভব হবে।

বেনজীরের বিরুদ্ধে রেড নোটিশটি এখনো ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়নি। তার অবস্থান শনাক্ত করার পর সেটি ওয়েবসাইটে দেওয়া হবে। তবে রেড নোটিশ জারির বিষয়টি বাংলাদেশ পুলিশকে ই-মেইলের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছে ইন্টারপোলের পক্ষ থেকে। এছাড়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আরও ১১ জনের বিরুদ্ধে তিন দফায় ইন্টারপোলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। চিঠিপত্র আদান-প্রদান ছাড়াও একটি ভার্চুয়াল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধেও রেড নোটিশ জারির বিষয়টি পর্যালোচনা করছে ইন্টারপোল।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পদত্যাগ ও দেশ থেকে পালানো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে ‘রেড নোটিশ’ জারির জন্য আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের কাছে পৃথক তিন ধাপে আবেদন করেছে বাংলাদেশ পুলিশের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি)।

Manual3 Ad Code

যাদের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির আবেদন পর্যালোচনা করছে ইন্টারপোল তারা হচ্ছেন-সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত এবং সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ।

অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছিল দুদক। অনুসন্ধান চলাকালে গত বছরের ৪ মে সপরিবারে দেশ ছাড়েন তিনি। তার বিরুদ্ধে বিচার বহির্ভূত হত্যা, গুম, খুন, দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগের তদন্ত চলছে।

আরও পড়ুন: ‘আত্মগোপনে’ বেনজীর আহমেদ পরিবার

দেশ-বিদেশে বেনজীরের সম্পদের অনুসন্ধান করতে গিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কর্মকর্তাদের বিস্ময় বাড়ছে। নতুন করে তার নামে-বেনামে আরও কয়েকশ কোটি টাকার সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুদক। স্ত্রী-সন্তানদের পাশাপাশি শাশুড়ি ও স্বজনদের নামেও তিনি গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়। নতুন করে যেসব সম্পদের তথ্য দুদকের হাতে এসেছে তার মধ্যে আছে-অন্তত তিনটি লাইটারেজ জাহাজ, পঞ্চগড়ে বিশাল চা বাগান, বাংলাবান্ধা পোর্ট এলাকায় জায়গাজমি, গাজীপুর এবং থানচিতে রিসোর্ট ও গাজীপুরে একটি টেক্সটাইল মিল। এসব সম্পদের তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। মালিকানায় বেনজীর পরিবারের সংশ্লিষ্টতা নিশ্চিত হওয়ার পরই পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Manual3 Ad Code

অন্যদিকে বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের বিদেশে সম্পদ আছে কিনা তা জানতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট থেকে আমেরিকা, কানাডা ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে দুবাইয়ের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এই তিনটি দেশে বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের কোনো ব্যাংক হিসাব, নিবন্ধিত স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ আছে কিনা-তা জানাতে বলা হয়েছে চিঠিতে। আর দেশের ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করার আগেই অন্তত বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা তুলে নিয়েছেন বেনজীর। সরিয়ে নেওয়া টাকার অঙ্ক অন্তত ১০০ কোটি বলে জানা গেছে। দুদকও অ্যাকাউন্ট থেকে তার টাকা সরানোর বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে উল্লিখিত তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, গত বছরের ১৮ এপ্রিল দুদক সভায় বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের সম্পদের খোঁজে অনুসন্ধান কমিটি গঠনের অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর থেকেই অনেকটা লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যায় বেনজীর ও তার পরিবার। বিশেষ করে তিন দফায় আদালতের মাধ্যমে বেনজীর, তার স্ত্রী ও দুই মেয়ের নামে থাকা প্রায় হাজার কোটি টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক ও অবরুদ্ধ করার খবর গণমাধ্যমে ঝড় তোলার পর তাদের কোথাও আর দেখা যায়নি।

Manual8 Ad Code

বেনজীর পরিবারের ঘনিষ্ঠ সূত্রের দাবি, বেনজীরের স্ত্রী জিসান মির্জা অসুস্থ। গত বছরের ১২ এপ্রিল স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে তিনি দেশ ত্যাগ করেন। এরপর আর দেশে ফেরেননি। বর্তমানে তারা সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে অবস্থান করছেন। দুবাইয়ের অভিজাত এলাকা হিসাবে খ্যাত পাম জুমেরা ও মেরিনা এলাকায় একাধিক অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে বেনজীর পরিবারের। তবে দুবাই ও দেশের সরকারি-বেসরকারি কোনো সূত্রই তাদের সেখানে অবস্থানের খবর নিশ্চিত করতে পারেনি।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, দুদক বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের সম্পদের খোঁজ নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করার পরই তিনি তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট অন্তত ২৫টি ব্যাংক হিসাব থেকে প্রায় ১০ কোটি টাকা সরিয়ে ফেলেছেন। দুদকের অনুসন্ধান দলও এই তথ্যের সত্যতা পেয়েছে। এছাড়া বেনজীর পরিবারের পঞ্চগড়ে বিশাল চা বাগান থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে দুদক। শিগগিরই এ সম্পত্তি ক্রোক করতে আদালতে আবেদন করা হবে। নতুন করে খোঁজ পাওয়া অন্য সম্পদের মধ্যে রয়েছে-পার্বত্য এলাকা বান্দরবানের থানচিতে নয়নাভিরাম রিসোর্ট, গাজীপুরে আরেকটি রিসোর্ট, গাজীপুরে একটি টেক্সটাইল কারখানা ও ৩-৪টি লাইটারেজ জাহাজ। এই জাহাজগুলো দেশের একটি নামি কোম্পানির ব্যানারে চলাচল করে। বেনামে থাকলেও এসব জাহাজের মালিকানা বেনজীর পরিবারের। এসব তথ্য নিশ্চিত হতে বিভিন্ন সংস্থার কাছে চিঠি দিয়ে দলিলাদি সংগ্রহ করা হচ্ছে।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual3 Ad Code