প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

৮ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৭ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

আওয়ামী লীগের ‘দোসর’ রওশন এখন কোথায়?

editor
প্রকাশিত অক্টোবর ২৮, ২০২৪, ০৭:৪৬ পূর্বাহ্ণ
আওয়ামী লীগের ‘দোসর’ রওশন এখন কোথায়?

Manual8 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

 

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের গত এক দশকের রাজনৈতিক পথচলায় পরম বন্ধুর মতো ছিলেন জাতীয় পার্টির নেতা রওশন এরশাদ। ‘পুরস্কার’ হিসেবে জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেতার পদ পেয়েছিলেন তিনি।

 

আওয়ামী লীগের এই ‘শুভাকাঙ্ক্ষী’ গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময়ও রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতো তিনিও আন্দোলন চলাকালে ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় স্থাপনা পরিদর্শন করেন এবং বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ছাত্রদের রাষ্ট্রদ্রোহ আইনে বিচারের দাবি জানান। কিন্তু গণঅভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগে সরকারের পতন হওয়ার পর থেকে মুখে কুলুপ এঁটেছেন তিনি।

জাতীয় পার্টির রওশনপন্থি নেতারা বলছেন, শারীরিকভাবে অসুস্থ রওশন এরশাদ গুলশানে নিজ বাসায় আছেন। আওয়ামী লীগের পতনের পর কিছুটা ভয়ে আছেন তিনি। আন্দোলন চলাকালে দেওয়া বক্তব্য নিয়ে কোনো মামলায় আসামি করা হয় কি না, সেটা নিয়েই মূলত ভয়। জীবনের শেষ সময়ে এসে কোনো মামলার মুখোমুখি হতে চান না তিনি। এ কারণে সরকার পতনের পর কোনো ধরনের বক্তব্য ও বিবৃতি দেওয়া থেকে তিনি বিরত রয়েছেন।

Manual8 Ad Code

সম্প্রতি রওশন এরশাদকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি ভালো নেই, অসুস্থ। বাসায় আছি।’ এটুকু বলেই কল কেটে দেন তিনি।

 

রওশন এরশাদের বিষয়ে জাতীয় পার্টির তার অংশের মহাসচিব কাজী মামুনুর রশীদ বলেন, ম্যাডাম বাসায় আছেন। আগের মতোই আছেন।

রওশন এরশাদ রাজনীতিতে আর সক্রিয় হবেন কি না– জানতে চাইলে তিনি বলেন, ম্যাডাম অতীতে রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন, সুযোগ থাকলে আগামীতেও সক্রিয় হবেন।

Manual4 Ad Code

কাজী মামুন জানান, ৫ আগস্টের পর ময়মনসিংহে রওশন এরশাদের নামে একটি মামলা হয়েছে। সেটা পিবিআই তদন্ত করছে। তবে সেটি হত্যা মামলা নয়। রওশন এরশাদের নামে হত্যা মামলা কেন হবে, তিনি তো সরকারে ছিলেন না। গত নির্বাচনেও অংশ নেননি।

Manual6 Ad Code

তবে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রওশনপন্থি এক নেতা বলেন, তার আর রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার সুযোগ কম। তার শারীরিক অবস্থা খুব একটা ভালো নয়।

এ নেতা আরও বলেন, রওশন এরশাদ এখন ছেলের রাজনীতি নিয়ে চিন্তিত। তিনি চান, ছেলেকে রংপুরের রাজনীতিতে একটা শক্ত অবস্থান করে দিতে।

জাতীয় পার্টির নেতারা বলছেন, ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনের সময় থেকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে রওশন এরশাদের ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জাতীয় পার্টির তৎকালীন চেয়ারম্যান প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেন। তখন বিদ্রোহ করে রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাপার একটি অংশ নেয়। ‘পুরস্কার’ হিসেবে রওশন হন সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা।

এ নিয়ে সর্বশেষ সংসদে জাতীয় পার্টির বর্তমান মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘২০১৪ সালের নির্বাচন জাতীয় পার্টি বর্জন করেছিল। আমাদের চেয়ারম্যান প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, তিনি চূড়ান্ত সময়ে বললেন নির্বাচন করবেন না এবং সারা দেশের সব প্রার্থীকে তিনি মনোনয়ন প্রত্যাহার করার জন্য চিঠি দেন। নির্বাচন থেকে প্রত্যাহার করে নেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘জাতীয় পার্টি যদি না আসত (নির্বাচন) তাহলে বাংলাদেশে একটা অসাংবিধানিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো। সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টি হতো। তাই বেগম রওশন এরশাদ এবং আমরা কয়েকজন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সঙ্গে বেঈমানি ও বিদ্রোহ করে বেগম এরশাদের নেতৃত্বে নির্বাচন করেছিলাম।’

Manual6 Ad Code

 

রওশনপন্থি নেতারা বলছেন, ২০১৪ সাল থেকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে রওশন এরশাদের যে সুসম্পর্ক হয়, সেটা ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগ পর্যন্ত ছিল। যে কারণে ২০২২ সালে রওশন এরশাদকে বিরোধী দলীয় নেতার পদ থেকে সরিয়ে জিএম কাদেরকে বিরোধী দলীয় নেতা করতে স্পিকারকে চিঠি দেওয়া হলেও তা করেনি আওয়ামী লীগ সরকার। কিন্তু দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে একাধিকবার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে রওশন এরশাদ সাক্ষাৎ করেও সরকারের আনুকূল্য পেতে ব্যর্থ হন। নানা কারণে আওয়ামী লীগ রওশন এরশাদকে সমর্থন করেনি। শেষ পর্যন্ত রওশন এরশাদ নিজের অনুসারীদের মনোনয়ন নিশ্চিত করতে না পারায় নির্বাচনে অংশ নেননি। এতে সরকারের সঙ্গে কিছুটা দূরত্ব তৈরি হয় রওশন এরশাদের।

রওশন এরশাদের কমিটির মহাসচিব কাজী মামুনুর রশীদ বলেন, ‘রওশন এরশাদের সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক ছিল, এটা তো আমরা অস্বীকার করছি না। সেটা তো জাতির সামনে পরিষ্কার। কিন্তু আমরা কোটা সংস্কারের পক্ষে ছিলাম। জাতীয় প্রেস ক্লাবে দুটি সংবাদ সম্মেলন করে কোটা সংস্কারের পক্ষে আমাদের অবস্থান জানিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, আর ২০২৪ সালের নির্বাচনে রওশন এরশাদ জেনেবুঝেই অংশ নেননি। জিএম কাদের-মুজিবুল হক চুন্নুরা জাতির সঙ্গে বেঈমানি করে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন।

 

রওশন এরশাদপন্থিদের ঐক্য প্রক্রিয়া স্থগিত

নানা সময়ে ভেঙে যাওয়া জাতীয় পার্টির খণ্ডিত অংশগুলো নিয়ে ঐক্য প্রক্রিয়ার কার্যক্রম শুরু করেছিলেন রওশন এরশাদপন্থি জাতীয় পার্টির নেতারা। তারই অংশ হিসেবে জাতীয় পার্টি কাজী জাফর অংশের চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী মোস্তফা জামাল হায়দারের সঙ্গে বৈঠক করেন রওশন এরশাদ অংশের কো-চেয়ারম্যান ও দলের মুখপাত্র গোলাম সারোয়ার মিলন। কিন্তু নানা কারণে এ প্রক্রিয়া স্থগিত করে সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রওশন এরশাদের জাপা।

রওশন এরশাদপন্থি জাতীয় পার্টির নেতারা বলছেন, আগামী সপ্তাহ থেকে তারা সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করবেন। সেই লক্ষ্যে কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। তবে নির্বাচনের আগে হয়ত আবারও ঐক্য প্রক্রিয়ার কার্যক্রম শুরু করা হতে পারে।

কাজী মামুনুর রশীদ বলেন, ঐক্য প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আমরা একটি বৈঠক করেছিলাম। আপাতত সেটি স্থগিত রাখা হয়েছে। আগামী নির্বাচনের আগে যদি কোনো ঐক্য করার প্রয়োজন হয়, তখন দেখা যাবে।

আগামী সপ্তাহ থেকে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এত দিন আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছি। আগামী সপ্তাহ থেকে আমরা কর্মসূচি শুরু করব।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual6 Ad Code